গত দুদিনের টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ঝিনাইগাতীর বিভিন্ন নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়া অন্তত ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বন্যার পানি নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে জনদুর্ভোগ।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আজ সকাল থেকে ঝিনাইগাতী উপজেলার মহারশি ও সোমেশ্বরী নদীতে পানি বাড়তে শুরু করে। এতে উপজেলা সদরের প্রধান সড়ক, প্রধান বাজার, উপজেলা পরিষদ ভবন ও জেলা পরিষদের ডাকবাংলো প্লাবিত হয়। এ ছাড়া মহারশি নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় সদর ইউনিয়নের দিঘিরপাড় এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাধ ভেঙে সদর ইউনিয়নের অন্তত পাঁচটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। আর সোমেশ্বরী ও কালাঘোঁষা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ধানশাইল ইউনিয়নের আরও পাঁচটি গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
প্লাবিত গ্রামগুলোর মধ্যে রয়েছে ঝিনাইগাতী সদর ইউনিয়নের ঝিনাইগাতী বাজার, রামেরকুড়া, খৈলকুড়া, দিঘিরপাড়, ধানশাইল ইউনিয়নের দক্ষিণ দাড়িয়ারপাড়, উত্তর দাড়িয়ারপাড়, কান্দুলী ও দক্ষিণ কান্দুলীসহ অন্তত ১০টি গ্রাম। এতে উপজেলায় পানিবন্দী হয়ে পড়েছে অন্তত পাঁচ শতাধিক পরিবার। এসব এলাকার আউশ ও সবজির খেত পানিতে নিচে পড়ে গেছে। আর পানিতে মাছ ভেসে গিয়ে অন্তত ৭০টি মৎস্য খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
অন্যদিকে পার্শ্ববর্তী নালিতাবাড়ী উপজেলার নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় উপজেলার ভোগাই ও চেল্লাখালি নদীর তীরবর্তী এলাকাগুলোতে পানি প্রবেশ করতে শুরু করেছে। প্লাবিত হয়েছে বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এতে প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছুটির নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। চেল্লাখালি নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে ১৭১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে উপজেলার অন্যান্য নদীগুলোর পানি বিপৎসীমার কিছু নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও পানি বাড়ার শঙ্কা রয়েছে।
সদর ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. আব্দুল করিম বলেন, সকালে ওঠেই দেখি বাড়ির ভেতর পানি ঢুকতেছে।
আহমেদনগর এলাকার গৃহবধূ আছিয়া বেগম বলেন, ‘বাড়ির মধ্যে পানি ঢুকে উঠানে গর্ত হয়ে গেছে। এখন বাড়ির ভেতরে যাওয়ার সাহসও পাইতাছি না। কিচু মালামাল রাত্রে সরায়া নিছিলাম। আর কিছু মালামাল ঘরেই রয়ে গেছে। চুলায় পানি ওঠার কারণে রান্না-বান্নাও বন্ধ। এখন চিড়া-মুড়ি খায়া আছি।’
এ বিষয়ে ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ফারুক আল মাসুদ জানান, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। উপজেলা পরিষদে পানি ওঠায় কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। বৃষ্টি দীর্ঘস্থায়ী হলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বাড়বে। উপজেলা প্রশাসন পানিবন্দী মানুষের পাশে রয়েছে। তাঁদের জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছু করা হবে। আর পানি নেমে গেলে প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করা হবে।