শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জে আলোচিত ছয় বছরের শিশু তায়েবা হক হত্যার বিচার দাবিতে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছে এলাকাবাসী। আজ রোববার সকাল ১০টায় শরীয়তপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্বরে এই বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। মানববন্ধনে শরীয়তপুর জেলার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন।
নিখোঁজের দুই দিন পর গত ২৬ সেপ্টেম্বর দুপুরে সখিপুর থানার ছৈয়ালকান্দি গ্রামের প্রতিবেশীর বাড়ির সেপটিক ট্যাংক থেকে তায়েবার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তায়েবা ওই গ্রামের টিটু সরদারের মেয়ে ও স্থানীয় দারুন নাজাত মাদ্রাসার নার্সারি শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল।
পারিবারিক শত্রুতার জেরে শিশু তায়েবাকে তার আপন চাচি আয়েশা খাতুন হত্যা করে পাশের বাড়ির সেপটিক ট্যাংকে ফেলে রাখেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। অভিযুক্ত আয়েশা খাতুন সখিপুর সরকার বাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। এই ঘটনায় মানুষের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় খেলার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হয় শিশু তায়েবা। খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে পরিবার সখিপুর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে। এর দুই দিন পর ২৬ সেপ্টেম্বর দুপুরে উপজেলার ছৈয়ালকান্দি গ্রামে প্রতিবেশীর বাড়ির সেপটিক ট্যাংক থেকে তায়েবার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনার পর নিহতের বাবা টিটু সরদার অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। মামলার তদন্তে সন্দেহভাজন হিসেবে তায়েবার আপন চাচি স্কুলশিক্ষক আয়েশা খাতুন (৪৭), প্রতিবেশী নাছিমা বেগম (৩৫) ও আসিফ ব্যাপারীকে (২০) আটক করে পুলিশ।
গত ১ অক্টোবর বিকেলে জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার নজরুল ইসলাম জানান, জিজ্ঞাসাবাদে নাছিমা বেগম হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেন এবং আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। এরপর আয়েশা খাতুন ও আসিফ ব্যাপারীর তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। তাঁদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে দেলোয়ার মোল্লার মেয়ে শাহানাজ বেগমকে (২৫) গ্রেপ্তার করে পুলিশ। শাহানাজের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী বালার বাজারের একটি সোনার দোকান থেকে ভিকটিমের কানের দুল গলিত স্বর্ণপিণ্ড অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ। এই ঘটনায় স্বর্ণকার শিতল মাঝি ও রোজিনা বেগম আদালতে জবানবন্দিতে শাহানাজের সম্পৃক্ততার প্রমাণ দেন। পারিবারিক শত্রুতার জেরে শিশু তায়েবাকে তার আপন চাচি আয়েশা খাতুন গলায় ফাঁস দিয়ে হত্যা করে পাশের বাড়ির সেপটিক ট্যাংকে ফেলে রাখেন। তবে হত্যার দায় এখনো স্বীকার করেননি আয়েশা খাতুন।
চাঞ্চল্যকর এই ঘটনায় ফুঁসে ওঠে সখিপুরবাসী। তায়েবা হত্যার বিচার দাবিতে একের পর এক শুরু হয় বিক্ষোভ, মানববন্ধন ও থানা ঘেরাওয়ের মতো কঠোর কর্মসূচি। ঢাকা জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনেও বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করা হয়।
এরই ধারাবাহিকতায় আজ জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্বরে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে শরীয়তপুরের সর্বস্তরের জনগণ।
মানববন্ধনে তায়েবার বাবা টিটু সরদার মেয়ের খুনিদের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসির দাবি জানান।