রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) নবীন শিক্ষার্থী শিপন আহমেদের বিদ্যুতায়িত হয়ে অকালমৃত্যুতে ক্যাম্পাসজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। সহপাঠী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বগুড়ায় শিপনের জানাজায় যাওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে বাসের ব্যবস্থা করে দেওয়ার অনুরোধ করলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন পুল সহযোগিতা করেনি বলে অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন শিক্ষার্থীরা।
জানা গেছে, গতকাল সোমবার (২৪ নভেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের ২০২৪-২৫ সেশনের শিক্ষার্থী (১৭তম ব্যাচ) শিপন আহমেদ তাঁর বগুড়ার বাসায় বিদ্যুতায়িত হয়ে মারা যান। তাঁর জানাজায় যাওয়ার জন্য সহপাঠীরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে পরিবহনের সহযোগিতা চেয়েও পাননি বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অভিযোগ করেন এক শিক্ষার্থী। তাঁর ওই পোস্টের পর ফেসবুকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও পরিবহন পুলের ওপর ক্ষোভ উগরে দেন শিক্ষার্থীরা।
অভিযোগকারী শিক্ষার্থী তাঁর পোস্টে লিখেছেন, ‘আজ আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বকনিষ্ঠ ১৭ ব্যাচের ছাত্র শিপন আহমেদকে শেষবারের মতো বিদায় জানানোর জন্য যখন আমরা তার বাসায় যাওয়ার প্রয়োজন অনুভব করলাম, তখন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো পরিবহন সুবিধা দেওয়া হলো না। তাহলে প্রশ্ন ওঠে, এই বিপুলসংখ্যক বাস রাখার উদ্দেশ্য কী, যদি শিক্ষার্থীদের সবচেয়ে সংকটময় মুহূর্তে সেগুলো নিষ্ক্রিয় পড়ে থাকে? শিক্ষার্থীদের ‘পালস’ বুঝতে না পারলে, তাদের চাহিদাকে মূল্যায়ন করতে না পারলে, তাহলে দায়িত্ব গ্রহণের নৈতিক ভিত্তিটাই বা কোথায় দাঁড়ায়? শুধু আশ্বাস, দুঃখপ্রকাশ আর বিবৃতিতে দায়িত্ব শেষ হয় না। বাস্তব সেবা, সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত এবং মানবিক উপস্থিতিই প্রশাসনের প্রকৃত পরীক্ষার মাপকাঠি। আমাদের ভাইয়ের বিদায় এমনিতেই হৃদয়বিদারক; তার ওপর প্রশাসনিক উদাসীনতা আরও ক্ষতের সৃষ্টি করেছে।’
অর্থনীতি বিভাগ ছাত্র সংসদের জিএস মেহেদি হাসান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে জানিয়েও এ রকম স্পর্শকাতর বিষয়ে বাস দিতে অস্বীকৃতি জানানো খুবই দুঃখজনক। আমরা প্রশাসনের সহযোগিতা না পেয়ে নিজেদের অর্থায়নে শিপনের জানাজায় যাওয়ার জন্য একটি বাস ভাড়া করেছি।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে এআইএস বিভাগের শিক্ষার্থী আহমাদুল হক আলবির বলেন, ‘কেমন অথর্ব প্রশাসন! বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একটি বাস ম্যানেজ করে দিতে পারে না। ১৭ ব্যাচের একজন শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে, তার জানাজায় অংশ নিতে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের জন্যও প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি। প্রশাসন যেন কৃত্রিম; তাদের তো মানবিকতা নেই।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী জাকির জীম বলেন, ‘মুলার প্রশাসন এখন পর্যন্ত যেসব সিদ্ধান্ত নিয়েছে, প্রায় সবগুলো শিক্ষার্থীদের সাথে সাংঘর্ষিক হয়েছে। প্রশাসনিক ভবনে গিয়ে আন্দোলন না করলে একটা যৌক্তিক দাবিও আদায় হয় না।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন পুলের পরিচালক মো. মাসুদ রানা বলেন, ‘পরিচালক হিসেবে গাড়ি দেওয়ার এখতিয়ার আমার নেই। সর্বোচ্চ ৫০ কিমি দূরত্ব পর্যন্ত গাড়ি দেওয়ার এখতিয়ার পরিচালকের, তা-ও সেটি অফ ডে, অফিস কার্যক্রম চালু থাকার দিনে নয়। রুট বন্ধ করে গাড়ি দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তবে একটি ১৬ সিটের মাইক্রোবাসের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে।’