দেশের বৃহত্তম রেলওয়ে কারখানা, বিমানবন্দর, ক্যান্টনমেন্ট, অপূর্ব সুন্দর চিনি-মসজিদ, উত্তরা ইপিজেডসহ বেশ কিছু কারণে পরিচিত উপজেলা নীলফামারীর সৈয়দপুর। তবে এসব ছাপিয়ে এখন সৈয়দপুরকে সারা দেশে আলাদা পরিচিতি এনে দিয়েছে সরকারি বিজ্ঞান কলেজ।
সৈয়দপুর সরকারি বিজ্ঞান কলেজের ৩৬ জন শিক্ষার্থী এ বছর সরকারি মেডিকেল কলেজে এমবিবিএসে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। এই সাফল্য এবারই প্রথম নয়। বেশ কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে প্রতিষ্ঠানটি এমন সাফল্য অব্যাহত রেখেছে। এই কলেজ থেকে ২০১৬ সালে সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পান ৩৮ জন, ২০১৭ সালে ২৯ জন, ২০১৮ সালে ৩৬ জন, ২০১৯ সালে ৩৮ জন, ২০২০ সালে ৪০ জন এবং ২০২১ সালে ৪০ জন।
এই প্রতিষ্ঠান থেকে বিভিন্ন সময় বুয়েটেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। ২০১৬ সালে বুয়েটে ভর্তি হন ৬ জন, ২০১৭ সালে ৯ জন, ২০১৮ সালে ১১ জন, ২০১৯ সালে ৬ জন, ২০২০ সালে ১৫ জন, ২০২১ সালে ১৮ জন এবং ২০২২ সালে ১৬ জন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ (ঢাবি) বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েও প্রতিবছর বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী ভর্তি হয়ে থাকেন। সর্বশেষ ২০২২ সালে ঢাবিতে ভর্তির সুযোগ পান ৩১ জন।
শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আন্তরিকতা, ব্যতিক্রমী পাঠদান কৌশল আর অভিভাবকদের ঘনিষ্ঠ সম্পৃক্ততার কারণেই প্রতিবছর মেডিকেল, বুয়েটসহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে সাফল্যের প্রমাণ রেখে চলেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি।
কলেজ সূত্র জানায়, ১৯৬৪ সালে দেশের চারটি শিল্পাঞ্চলে টেকনিক্যাল স্কুল গড়ে ওঠে। এগুলোর মধ্যে একটি সৈয়দপুর সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল। পরে ১৯৭৭ সালে প্রতিষ্ঠানটি কলেজে উন্নীত করে নাম দেওয়া হয় সৈয়দপুর সরকারি টেকনিক্যাল কলেজ। ২০১৯ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এর নাম পরিবর্তন করে সৈয়দপুর সরকারি বিজ্ঞান কলেজ নামকরণ করে। কলেজটিতে কেবল বিজ্ঞান বিষয়ে পড়ার সুযোগ রয়েছে।
সৈয়দপুর সরকারি বিজ্ঞান কলেজের এই সাফল্যের নেপথ্যের কারণ জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ গোলাম আহমেদ ফারুক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের এই প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ, শিক্ষকদের বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ, সুদক্ষ মনিটরিং, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা আর অভিভাবকদের সাধনাই প্রতিষ্ঠানের ধারাবাহিক সাফল্যের কারণ।’
অভিভাবকদের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক, আলোচনা ও অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন এ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকেরা। অভিভাবকদের নানা পরামর্শ দেওয়া হয়। অধ্যক্ষ আহমেদ ফারুক বলেন, ‘‘আমরা প্রতিটি পরীক্ষার আগে অভিভাবকদের সঙ্গে বাধ্যতামূলক একটি বৈঠকের আয়োজন করি। ওই বৈঠকে অভিভাবকদের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার আগে কীভাবে যত্ন নিতে হবে, শিক্ষার্থীদের খাওয়াদাওয়ার বিষয়ে দিকনির্দেশনা, শিক্ষার্থীদের শাসন করে নয়, ভালোবাসা ও বন্ধুত্বমূলক আচরণ করার পরামর্শ দিই।’
কলেজের অধ্যক্ষের কথার প্রমাণ মেলে এ বছর মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষায় জাতীয় মেধাতালিকায় ৬৭তম মাইশা জান্নাত ও ১৯৮তম স্থান পাওয়া নিলয়ের কথায়। দুজনই তাঁদের সাফল্যের কৃতিত্ব দেন শিক্ষকদের। তাঁরা বলেন, ‘শিক্ষকেরা আমাদের যত্নসহ পড়িয়েছেন। পড়াশোনার বিষয়ে বিভিন্ন সমস্যার সমাধান দিয়েছেন আন্তরিকতার সঙ্গে। সময়ে-অসময়ে যেকোনো বিষয়ে তাঁদের কাছে গেলে কখনো বিরক্ত হননি। পড়াশোনার বাইরেও নানা বিষয়ে পরামর্শ ও উৎসাহ দিয়ে এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখিয়েছেন। তাঁদের কাছে আমরা চিরকৃতজ্ঞ।’
এ ব্যাপারে জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য রাবেয়া আলীম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সৈয়দপুর সরকারি বিজ্ঞান কলেজ শুধু সৈয়দপুরে নয়, সারা দেশে সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ভালো ফলের জন্য এই প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়ার জন্য সারা দেশের ছেলেমেয়েরা প্রতিযোগিতা করে। তিনি বলেন, ‘শিক্ষকসংকটসহ অন্য যেসব সমস্যা আছে সেগুলো সমাধানের জন্য প্রয়োজনে জাতীয় সংসদে তিনি আলোচনা করবেন।’
আরও খবর পড়ুন: