রংপুরের পীরগাছায় আটজনের শরীরে অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত করেছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। পাশাপাশি মিঠাপুকুর ও কাউনিয়া উপজেলায়ও অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ নিয়ে নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে।
জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র বলছে, গত জুলাই ও সেপ্টেম্বরে রংপুরের পীরগাছায় অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ নিয়ে দুজন মারা যান। একই সময়ে অ্যানথ্রাক্স রোগে উপজেলার চারটি ইউনিয়নে অর্ধশত ব্যক্তি আক্রান্ত হন। ওই সময় ঘটনাস্থল থেকে অসুস্থ গরুর মাংসের নমুনা পরীক্ষা করে অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত করেছিল প্রাণিসম্পদ বিভাগ।
পরে আইইডিসিআরের একটি প্রতিনিধিদল গত ১৩ ও ১৪ সেপ্টেম্বর পীরগাছা সদর এবং পারুল ইউনিয়নের অ্যানথাক্সের উপসর্গ থাকা ১২ নারী-পুরুষের নমুনা সংগ্রহ করে।
দেশে রোগের প্রকোপ ও প্রাদুর্ভাব নজরদারি করা প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআরের পরিচালক তাহমিনা শিরীন বলেন, ‘আমরা পীরগাছার ১২ জনের নমুনা পরীক্ষা করেছি। এর মধ্যে আটজনের অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত হয়েছে।’
আইইডিসিআরের আরেকটি সূত্র বলছে, ফ্রিজে রাখা গরুর মাংসে অ্যানথ্রাক্সের জীবাণু পাওয়া গেছে। অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত হয়েছে—এমন একজন ছাগলের মাংসের সংস্পর্শে এসেছেন—এমন কথাও সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
পীরগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মুহাম্মদ তানভীর হাসনাত জানান, এখন পর্যন্ত প্রায় ৫০ জন রোগীর তথ্য তাঁদের কাছে আছে। এর মধ্যে ৩০ জন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন। বেশির ভাগ রোগী অ্যান্টিবায়োটিক চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে উঠেছেন। তবে অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ থাকলেও সাম্প্রতিক দুই মৃত্যুর কারণ সরাসরি অ্যানথ্রাক্স নয় বলে দাবি করেন তিনি।
চিকিৎসকদের মতে, আক্রান্ত গবাদিপশুর রক্ত, মাংস, শ্লেষ্মা বা নাড়িভুঁড়ির সংস্পর্শে এলেই মানুষ অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত হতে পারে। তবে এ রোগ মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায় না। প্রধান লক্ষণ হলো চামড়ায় ঘা তৈরি হওয়া। এ জন্য গবাদিপশুকে নিয়মিত টিকা দেওয়ার ওপর জোর দিয়েছেন চিকিৎসকেরা।
রংপুরের ডেপুটি সিভিল সার্জন রুহুল আমিন বলেন, পীরগাছার পর মিঠাপুকুর ও কাউনিয়াতেও অ্যানথ্রাক্স উপসর্গের রোগী পাওয়া গেছে। আরও আটজনের নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোয় পর্যাপ্ত অ্যান্টিবায়োটিক মজুত রয়েছে। সেখানে রোগীদের ভালোভাবে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া আছে। তবে এ রোগ প্রতিরোধে প্রাণিসম্পদ বিভাগের ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
পীরগাছার গরু পালনকারীরা জানান, গত দুই মাসে অ্যানথ্রাক্সে শতাধিক গবাদিপশু মারা গেছে।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আবু ছাইদ বলেন, আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই। জেলায় ১৩ লাখের বেশি গবাদিপশুর মধ্যে ইতিমধ্যে ১ লাখ ৬৫ হাজারকে অ্যানথ্রাক্স প্রতিরোধী টিকা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি মসজিদ, মন্দির ও হাটবাজারে সচেতনতা কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।