বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) যৌন হয়রানির ঘটনা যেন থামছেই না। একের পর এক অভিযোগ উঠলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে দৃশ্যমান কোনো কঠোর ব্যবস্থা না নেওয়ায় ক্ষোভে ফুঁসছেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষক কর্তৃক শিক্ষার্থী যৌন হয়রানির প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
আজ বুধবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষ্ণচূড়া চত্বরে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে কয়েক শ শিক্ষার্থী অংশ নেন। তাঁরা অভিযোগ করেন, কিছু কুরুচিপূর্ণ শিক্ষক ক্ষমতার অপব্যবহার করে নম্বর টেম্পারিং ও যৌন হয়রানির মতো ন্যক্কারজনক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকলেও প্রশাসন কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়ন সেল সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি সহকারী প্রক্টর ও পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. শামীম হোসেন এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. শাকিবুল ইসলামের বিরুদ্ধে গুরুতর যৌন হয়রানির অভিযোগ ওঠে। বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী লিখিতভাবে অভিযোগ দিয়েছেন—অভিযুক্ত ব্যক্তিরা অশোভন মন্তব্য, অনিচ্ছাকৃত শারীরিক স্পর্শ ও অনুপযুক্ত আচরণের মাধ্যমে হয়রানি করেছেন।
২ নভেম্বর সহকারী প্রক্টর শামীম হোসেনের বিরুদ্ধে ৩১ পৃষ্ঠার লিখিত অভিযোগ জমা পড়ে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ সেলে। এর আগে ৩০ অক্টোবর তাঁর বিরুদ্ধে ওই বিভাগের ২০২০-২১ সেশনের ৩১ জন শিক্ষার্থী বিভাগীয় প্রধান বরাবর একটি গণ-অভিযোগপত্র জমা দেন। সেখানে তাঁরা ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ এনে তাঁর ক্লাস, পরীক্ষা ও সব ধরনের কাজ থেকে বিরত থাকার দাবি জানান। বিষয়টি নিয়ে ৪ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১৬তম জরুরি সিন্ডিকেট সভায় পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
এর আগেও একাধিক শিক্ষক যৌন হয়রানির অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছেন। পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক ড. রশিদুল ইসলাম যৌন হয়রানির অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত আছেন। রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তানজিউল ইসলাম জীবনের বিরুদ্ধেও যৌন হয়রানি ও মার্ক টেম্পারিংয়ের অভিযোগ তদন্তাধীন, তাঁর ফাঁস হওয়া কল রেকর্ড ইতিমধ্যে ফরেনসিকে পাঠানো হয়েছে।
মানববন্ধনে অংশ নেওয়া বেরোবির শিক্ষার্থী সুফিয়া সরকার বাঁধন বলেন, ‘ক্যাম্পাস আমার আরেক পরিবার। এখানে যদি নিরাপদ অনুভব না করি, পিতা সমতুল্য স্যারদের কাছে যদি নিরাপদ না থাকি, তাহলে এখানে পড়াশোনার কোনো মানে নেই। এই প্রতিষ্ঠান আমাদের ভবিষ্যতের অনেক কিছু নির্ধারণ করবে। স্যারদের ভয়ে, রেজাল্ট খারাপের ভয়ে আমাদের যে প্রতিনিয়ত চুপচাপ থাকতে হয়; আতঙ্ক ও মানসিক যন্ত্রণা—এসব থেকে আমরা মুক্তি চাই। ক্যাম্পাসে নিরাপদে বাঁচতে চাই। যারা অপরাধ করেছে, যৌন হয়রানি করেছে, প্রশাসনের কাছে আমরা তাদের বিচার চাই।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা ও যৌন নিপীড়ন সেলের সদস্যসচিব ড. ইলিয়াছ প্রামাণিক বলেন, ‘অভিযোগগুলো নিয়ে আমরা কাজ করছি। যৌন হয়রানি ও নিপীড়নের ঘটনা যেগুলোর তদন্ত শেষ হয়েছে, সেগুলো আমরা সিন্ডিকেটে উপস্থাপন করেছি। যেগুলোর তদন্ত প্রক্রিয়াধীন, সেগুলোর এখনো প্রতিবেদন জমা হয়নি। যৌন নিপীড়ন ও হয়রানিমূলক যেসব অভিযোগ আছে, সেগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য নির্দেশনা আছে এবং হাইকোর্টেও একটা নির্দেশনা আছে যেন এসব ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হয়। যেগুলোর রিপোর্ট সাবমিট হয়েছে, সবগুলোর মোটামুটি আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে অ্যাকশন নিয়েছি।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. শওকাত আলী বলেন, ‘আমরা যৌন নিপীড়ন সেল গঠন করে দিয়েছি। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন সাপেক্ষ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে আমরা বহিষ্কারও করেছি। যৌন হয়রানির ঘটনায় প্রশাসন জিরো টলারেন্সে। দোষী প্রমাণিত হলে ছাড় দেওয়া হবে না।’