কষ্টার্জিত অর্থ দিয়ে কুকুর-বিড়ালকে খাওয়ানো ফরিদা বেওয়া পেলেন বিধবা ভাতা। সৈয়দপুর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা নুর মোহাম্মদ তাঁর জন্য বিধবা ভাতার কার্ড করার উদ্যোগ নেন। গত ২ জানুয়ারি জাতীয় সমাজ সেবা দিবসে ফরিদা বেওয়ার হাতে ভাতার বই তুলে দেন সৈয়দপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মোখছেদুল মোমিন।
নীলফামারীর সৈয়দপুর শহরের হাতিখানা এলাকায় জরাজীর্ণ একটি ঝুপড়িতে থাকেন ষাটোর্ধ্ব ফরিদা বেওয়া। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত শহরের একটি হোটেলে রান্নার কাজ করেন। প্রায় ৩০ বছর আগে স্বামী ইসমাইল হোসেন মারা গেছেন। এর কয়েক বছর পর দুই ছেলেকেও হারান। স্বামী-সন্তানকে হারিয়ে বেওয়ারিশ কুকুর-বিড়ালদের নিয়ে গড়ে তোলেন অকৃত্রিম ভালোবাসার পরিবার।
সৈয়দপুর পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর আনিস আনসারী জানান, ফরিদা বেওয়া দীর্ঘ কয়েক বছর থেকে তাঁর মজুরির টাকা দিয়ে খাবার রান্না করে প্রতিদিন প্রায় ২০-৩০টি কুকুর-বিড়ালকে খাইয়ে আসছেন। পাড়ায় তিনি ‘বিলাই দাদি’ নামে পরিচিত হয়ে গেছেন। প্রতি রাতে বিমানবন্দর সড়কে দেখা মেলে ফরিদা বেওয়ার। চারপাশে ঘিরে থাকে কুকুরের দল। দূর থেকে তাঁকে দেখে কিংবা কণ্ঠ শুনে ছুটে আসে কুকুরগুলো। পায়ের কাছে মুথা গুঁজে বসে পড়ে তারা। মাথায় স্নেহের হাত বুলিয়ে খাবার দেন তিনি। রাত ১১টার পর দৈনিক দেখা যায় এ দৃশ্য।
হোটেল মালিক আশরাফ হোসেন বলেন, ‘বহু বছর থেকে তিনি আমার হোটেলে কাজ করেন। সবজি কাটা, ডাল গুড়া করাসহ অন্যান্য কাজ করে দেন। প্রতিদিন তাঁকে ২৫০ টাকা দেওয়া হয়। সেই টাকা দিয়ে তরকারি ও চাল কিনে বাসায় রান্না করে রাতে বেরিয়ে পড়েন পথের কুকুরদের খাওয়াতে। ঝুপড়ি ঘরে ৪-৫টি বিড়াল সব সময় থাকে। তাঁর নিজের বাড়ি নেই। কোনো বয়স্ক কিংবা বিধবা ভাতা পান না। এই মজুরির টাকা দিয়েই তিনি পথ কুকুরদের আগলে রেখেছেন।’
কথা হয় ফরিদা বেওয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, আপন বলতে বর্তমানে তাঁর কেউ নেই এখন। এই কুকুর-বিড়ালদের সঙ্গে নিয়েই তাঁর পরিবার। এদের পেট ভরাতেই দিনের বেশির ভাগ সময় পার হয়। করোনা মহামারির কারণে সারা দেশের বিধিনিষেধের সময় বেশির ভাগ রেস্তোরাঁ, বেকারি যখন বন্ধ ছিল তখন বেওয়ারিশ কুকুরগুলো বিপদে পড়েছিল। এরপর থেকেই তিনি প্রতিদিন এসব কুকুরকে খাওয়ান। ফরিদা বেওয়া বলেন, ‘এই পশুদের পেট ভরলেই মন ভরে আমার।’
সৈয়দপুর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা নুর মোহাম্মদ বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিকে ফরিদা বেওয়ার এ দৃষ্টান্ত আমাদের চোখে পড়লে তাঁকে বিধবা ভাতা দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করি। প্রাণীদের সেবায় যিনি সর্বদা নিয়োজিত, তাঁকে সরকারের এ ব্যবস্থার আওতায় নিতে পেয়ে আমরা ধন্য।’