‘বাবা-মায়ের স্বপ্ন ছিল ডাক্তার হব। কিন্তু আমার দুই বোনের ইচ্ছা, আমি যেন বুয়েটে পড়ি। সেই থেকে মনের মধ্যে প্রকৌশলী হওয়ার স্বপ্ন লালন করতাম। বুয়েটে পড়ার স্বপ্ন দেখতাম। সেই লক্ষ্য নিয়ে পড়াশোনা চালিয়ে গেছি। আজ সেই স্বপ্ন পূরণ হওয়ায় খুব খুশি।’
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে পাবনা শহরের গোপালপুর মহল্লার বাসায় বসে এভাবেই নিজের অনুভূতির কথা জানাচ্ছিলেন সুদীপ্ত পোদ্দার। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ভর্তি পরীক্ষায় মেধা তালিকায় তৃতীয় স্থান অধিকার করেছেন তিনি।
প্রবীর কুমার পোদ্দার স্বপন ও মিতু পোদ্দার দম্পতির একমাত্র ছেলে সুদীপ্ত পোদ্দার। দুই মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে সুদীপ্ত সবার ছোট। বাবা ব্যবসায়ী ও মা গৃহিণী। তাঁর এই সাফল্যে উচ্ছ্বসিত সুদীপ্ত ও তাঁর পরিবার। সেই সঙ্গে খুশি তাঁর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারি অ্যাডওয়ার্ড কলেজের শিক্ষকেরাও।
নিজের এই সাফল্যের পেছনে বাবা-মা, বোন ও শিক্ষকদের অবদান রয়েছে বলে জানান সুদীপ্ত। ভবিষ্যতে একজন প্রকৌশলী হয়ে দেশ ও মানুষের সেবা করতে চান তিনি।
সুদীপ্ত বলেন, তাঁদের পৈতৃক নিবাস পাবনার বেড়া উপজেলার আমিনপুর থানার ভবানীপুর মাসুমদিয়া গ্রামে। ২০১৩ সাল থেকে তাঁদের বসবাস পাবনা শহরে। লেখাপড়ায় তাঁরা তিন ভাইবোনই মেধাবী। বড় বোন শর্মিতা পোদ্দার ঢাকার ইডেন কলেজ থেকে কেমিস্ট্রিতে মাস্টার্স করে সংসারী হয়েছেন। আর ছোট বোন স্বর্ণা পোদ্দার পাবনা সরকারি অ্যাডওয়ার্ড কলেজে অ্যাকাউন্টিংয়ে মাস্টার্স শেষ করে বিসিএসের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
সুদীপ্ত আরও বলেন, ‘দুই বোনের উৎসাহে ছোটবেলা থেকেই বুয়েটে পড়ার স্বপ্ন দেখতাম। সেই লক্ষ্যে পড়াশোনা চালিয়ে গেছি। অবশেষে স্বপ্ন পূরণ হওয়ায় খুব খুশি। ভবিষ্যতে ভালো প্রকৌশলী হিসেবে দেশ ও মানুষের সেবা করতে চাই। আমার সাফল্যের পেছনে বাবা-মা, বিশেষ করে দুই বোনের অবদান সবচেয়ে বেশি। শিক্ষকেরাও সব সময় অনুপ্রাণিত করেছেন।’
সুদীপ্তর বাবা প্রবীর কুমার পোদ্দার স্বপন বলেন ‘ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনার বাইরে সে কোথাও কিছু করত না। ওকে কখনো পড়ার জন্য বলতে হয়নি। কেজি স্কুল থেকে এইচএসসি পর্যন্ত বরাবর সে প্রথম হয়ে আসছে।’
সুদীপ্তর মা মিতু পোদ্দার বলেন, ‘সৃষ্টিকর্তার কাছে চাইতাম, ছেলেটার পরিশ্রমের ফল যেন দেন। আজ সেই চাওয়া পূরণ হয়েছে। আশা করি, ভবিষ্যতে সে মানুষের মতো মানুষ হয়ে দেশ আর মানুষের সেবা করবে।’
এ বিষয়ে সরকারি অ্যাডওয়ার্ড কলেজের অধ্যক্ষ ড. মাহবুব সরফরাজ বলেন, ‘আমাদের জন্য অনেক আনন্দের খবর এটা। যারা বুয়েটের মতো প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়ার সুযোগ পায়, তারা স্কুল লেভেল থেকেই ভালো ছাত্র। সেই ভালোটাকেই আমরা যত্ন নিতে পেরেছি, এটা আমাদের জন্য তৃপ্তির জায়গা। এটা কারও একার কৃতিত্ব নয়। মূল কৃতিত্ব শিক্ষার্থীর অবশ্যই। তার বাবা-মা, শিক্ষক আমরা সহায়ক ভূমিকা পালন করেছি।’