হাত-পা দড়ি দিয়ে বাঁধা। পুরো শরীর ঢোকানো বস্তার ভেতরে। এভাবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পানিতে ভাসতে পারেন রাজশাহীর মোসাদ্দেক হোসেন বাচ্চু। শুধু তা-ই নয়, হাত-পা না নাড়িয়ে পানির ওপর ঘণ্টার পর ঘণ্টা শুয়ে থাকতে পারেন তিনি। হাত-পা বেঁধে দিলেও কাটতে পারেন সাঁতার। ৭১ বছর বয়সী মোসাদ্দেক রাজশাহী নগরীর তেরোখাদিয়া মহল্লার বাসিন্দা।
মোসাদ্দেকের গ্রামের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার দাদনচক গ্রামে। ছোটবেলায় ওই গ্রামেই পদ্মার একটি নালায় সাঁতার শেখেন তিনি। ১৯৮১ সালের দিকে মোসাদ্দেক যখন যুবক, তখন হাত-পা বেঁধে সাঁতার কাটা এবং বস্তায় ঢুকে ভেসে থাকার কৌশল রপ্ত করেন। চাকরির সুবাদে রাজশাহী চলে আসার পর আর সেভাবে সাঁতার কাটা হতো না। চাকরি থেকে অবসর গ্রহণের পর কয়েক মাস ধরে আবার তাঁর সাঁতারের প্রতি ঝোঁক বেড়েছে। সাঁতারের পাশাপাশি ছেলেবেলায় ফুটবল, ক্রিকেট ও হ্যান্ডবল ভালো খেলতেন মোসাদ্দেক।
সম্প্রতি মোসাদ্দেক হোসেন রাজশাহীর জেলা প্রশাসক (ডিসি) শামীম আহমেদের কাছে গিয়ে তাঁর সাঁতারের দক্ষতার কথা জানান। তখন জেলা প্রশাসক তাঁর সাঁতার দেখার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। গতকাল শনিবার বিকেলে রাজশাহী জেলা সুইমিং পুলে মোসাদ্দেক হোসেন জেলা প্রশাসককে সাঁতার কেটে দেখান। জেলা প্রশাসক মোসাদ্দেকের পানিতে ভেসে থাকা এবং হাত-পা বেঁধে সাঁতার কাটা দেখেন। তবে তিনি নিরাপত্তার কথা ভেবে হাত-পা বেঁধে বস্তায় ঢুকে ভেসে থাকা দেখতে চাননি। যদিও মোসাদ্দেকের স্ত্রী মমতাজ বেগম বলছিলেন, ‘ভয় নেই।’
মোসাদ্দেক বলেন, ‘যুবক বয়সে গ্রামে নিজেদের মধ্যে সাঁতারের প্রতিযোগিতা হতো। তখনই আমি হাত-পা বেঁধে সাঁতার কাটতাম। আমার সঙ্গে যারা হাত-পা না বেঁধে সাঁতার কাটত, তারাও আমার সঙ্গে পারত না।’ তিনি বলেন, ‘একটু ব্যতিক্রম না হলে আমার সাঁতার মানুষকে আকর্ষণ করবে না। কেউ সাঁতার দেখবেও না। তাই একটু আকর্ষণীয় করতে গিয়েই আমি এভাবে সাঁতার শিখেছি। প্রথমবার বস্তায় ঢুকেছিলাম ১৯৮১ সালের ২৯ মে।’
মোসাদ্দেকের স্ত্রী মমতাজ বেগম বলেন, ‘আমাদের ৪০ বছরের দাম্পত্য জীবন। বিয়ের আগে তিনি এভাবে সাঁতার কাটতেন। সকাল ৭টায় পানিতে নেমে সন্ধ্যা ৭টায় উঠেছেন। বিয়ের পর আর সাঁতার কাটতেন না। কিছুদিন ধরে তিনি আবার সাঁতার কাটা শুরু করেছেন। হাত-পা বাঁধা অবস্থায় বস্তায় ঢুকে তিনি পানিতে ভেসে থাকলেও ভয় লাগে না। কারণ তিনি এটা পারেন।’
মোসাদ্দেক হোসেনের ছেলে সফিউল্লাহ সুলতান রাজশাহীর বাঘা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা। মেয়ে মুসলিমা খাতুন জনতা ব্যাংকের কর্মকর্তা। মোসাদ্দেক হোসেন রাজশাহী সরকারি সিটি কলেজের প্রধান সহকারী ছিলেন। ২০১৬ সালের অক্টোবরে অবসর নিয়েছেন। মোসাদ্দেকের সাঁতারের দক্ষতা একদিন গিনেস বুকে জায়গা করে নেবে, এটি তাঁর আশা।