হোম > সারা দেশ > রাজশাহী

শিশুকালে ককটেলে উড়ে যায় কবজি, একহাতে লড়ে যাচ্ছে মাহিম

রিমন রহমান, রাজশাহী

বাঁ হাতের কনুইয়ের নিচের অংশ নেই। কাকভেজা শরীরে অক্ষত অপর হাত দিয়ে কাঁঠালের ডাল কাটছে ১৬ বছরের কিশোর রকিবুল হাসান মাহিম। মঙ্গলবার (২৭ জুন) দুপুরে রাজশাহী মহানগরীর উপশহরে দেখা হয় তার সঙ্গে। যে হাতের কবজি নেই সেটি দেখিয়ে মাহিম বলল, ‘কাটা জায়গাটা এই যে ফুলে গেছে। কিন্তু কাজ না করে তো উপায় নাই। কাঁঠালের পাতাগুলো রেডি করছি। মানুষ কোরবানির খাসির জন্য কিনবে। এগুলো বিক্রি করে ঈদের আগে যা হয়!’

মাহিমের বয়স তখন পাঁচ বছর। আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ের বারান্দায় লাল স্কচটেপ মোড়ানো একটি বস্তুকে ক্রিকেট বল ভেবে হাতে তুলে নিয়েছিল। সঙ্গে সঙ্গে সেটি বিস্ফোরিত হয়। উড়ে যায় বাম হাতের কবজি। ডান হাতের আঙুল এবং চোখও ক্ষতিগ্রস্ত হয় স্প্লিন্টারে।

২০১৩ সালের ডিসেম্বরে নগরীর উপশহরে আওয়ামী লীগের উত্তরাঞ্চলীয় শাখা কার্যালয়ের বারান্দায় এ ঘটনা ঘটে। ওই সময় জাতীয় নির্বাচনের আগে বিএনপির সরকার–বিরোধী আন্দোলন চলছিল। প্রতিদিনই রাস্তায় ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটছিল। মাহিমের মতো আরও অনেকে সে সময় আহত হয়।

কবজি উড়ে যাওয়া হাতটি এখনো মাঝে মাঝে ব্যথা করে। ফুলে যায়। তাই ওষুধ খেতে হয়। মাহিম জানায়, তার বাবার নাম মো. রাজিব। বাবার অনেক টাকা। কিন্তু একাধিক বিয়ে করেছেন। মাহিমের মাকে অত্যাচার করতেন। তাই অনেক দিন ধরেই তাঁরা আলাদা থাকেন। এখন সংসার চালাতে মাহিমের মা মর্জিনা বেগম গৃহকর্মীর কাজ করেন। বড় ভাই রাকিবুল হাসান নির্মাণশ্রমিক। আর এক হাত নিয়ে রংমিস্ত্রির কাজ করে মাহিম। ঈদে সামান্য কিছু টাকা আয়ের জন্য কাঁঠালের পাতা বেচবে সে।

মাহিম তার মা ও ভাইয়ের সঙ্গে উপশহর ১ নম্বর সেক্টরের একটি বাড়িতে ভাড়া থাকে। সে জানায়, দুপুরে বৃষ্টির সময় এক হাত নিয়েই কাঁঠালের গাছে উঠে চারটি ডাল কেটে এনেছে। এ জন্য গাছের মালিককে দিতে হয়েছে ৪০০ টাকা। কাঁঠালের পাতাগুলো বিক্রি করে হাজারখানেক টাকা লাভের আশা তার। মাহিম বলে, ‘কাজ না করলে তো চলবে না! নিজের বাড়ি নাই। মাসে বাড়ি ভাড়াই দিতে হয় ৭ হাজার টাকা।’

ওই দুর্ঘটনার সময় মাহিম কেবল দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ত। হাসপাতালেই থাকতে হয়েছিল তিন মাস। এরপর তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত উঠেছে। অভাবের তাড়নায় আর পড়াশোনা হয়নি। ওইটুকু ছেলেকে উপার্জনে নেমে পড়তে হয়েছে। মাহিম বলে, ‘ছয় বছর বয়সে আমি রাজনীতির কিছুই বুঝতাম না। কিন্তু এই রাজনীতির কারণেই আজ আমার একটা হাত নাই। আমি বল ভেবেই রাজনীতির ককটেলটা হাতে নিয়েছিলাম।’

মাহিম জানায়, ওই ঘটনার পর কয়েকজন পাঁচ-ছয় হাজার টাকা দিয়ে চিকিৎসায় সহায়তা করেছিল। পরে আর কেউ খোঁজ রাখেনি। এখন প্রতিবন্ধী ভাতা হিসেবে সামান্য টাকা পায়। মাহিম বলে, ‘এখন একদিন কাজ হলে তিন দিন হয় না। কিন্তু রঙের কাজে আমার মন ধরে গেছে। কেউ সাহায্য করলে ভালো হয়। একটা রোবোটিক হ্যান্ড আমার খুব দরকার। তাহলে আমি সব কাজই ধরতে পারব। কিন্তু কেউ সহায়তা করে না। সহায়তার জন্য কারও কাছে গেলে উল্টো নানা কথা শুনিয়ে দেয়।’

মাহিম বলে, ‘যেখানে-সেখানে গেলে শুনতে হয়— তুই বোম মেরেছিস। একটু সহায়তার জন্য গেলে আওয়ামী লীগের নেতারা বলেন— তুই পার্টি অফিসে বোমা মারতে এসেছিলি। কিন্তু একটু বিবেক করে না ওই ছয় বছর বয়সে আমি রাজনীতির কী বুঝি! আমি কেন বোমা মারতে যাব? আমি তো বল হিসেবেই ককটেলটা ধরেছিলাম। এতে আমার তো কোনো দোষ নাই। তারপরও এসব কথা শুনতে হয়!’

প্রথম আলো, ডেইলি স্টারসহ সুশীল সংবাদপত্র অবশ্যই বন্ধ করতে হবে: রাকসু ভিপি

বিএনপির ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থীর মনোনয়ন ফরম তুললেন দণ্ডিত আসামি, খুঁজে পায় না পুলিশ

ভেকু দিয়ে যুবককে হত্যার ঘটনায় ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা

রাজশাহীতে বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হলো আ.লীগ পরিত্যক্ত কার্যালয়

বগুড়ায় স্ত্রীকে হত্যা করে সেপটিক ট্যাংকে লাশ ফেলে থানায় নিখোঁজের জিডি

রাবিতে আওয়ামীপন্থী ডিনদের পদত্যাগের আলটিমেটাম রাকসুর জিএস আম্মারের

ঋত্বিক ঘটকের পৈতৃক ভিটা ভাঙচুরের সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির দাবি

রাজশাহীতে ভারতীয় সহকারী হাইকমিশন অভিমুখে যাত্রা, পুলিশি বাধায় পণ্ড

আবাদি জমিতে পুকুর খননে বাধা, কৃষককে এক্সকাভেটরের নিচে ফেলে হত্যা

ইউপি সদস্যের কার্যালয়ে আটকে রাখা ব্যক্তির লাশ উদ্ধার, নির্যাতনে মৃত্যুর অভিযোগ