রাজশাহী নগরের সিপাইপাড়া এলাকার রাজবাড়ী গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন তোলা হচ্ছে ভবনের মাটির নিচে থাকা ইট। ইট তুলতে গিয়ে কয়েকটি সুড়ঙ্গও পাওয়া গেছে।
ভূমি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, এ জায়গার মালিক ছিলেন সন্দীপ কুমার রায়। তাঁর বাবা রাজা হেমেন্দ্র নারায়ণ রায়। ভূমি অফিসে কাগজপত্রে জমির মালিকের ঠিকানা লেখা রয়েছে দিঘাপতিয়া স্টেট, বলিহার, নাটোর। রাজা হেমেন্দ্র রায় ছিলেন দিঘাপতিয়ার রাজবংশের রাজা প্রমথনাথের চার ছেলের একজন।
নথিপত্রে দেখা গেছে, ১৯৮১ সালে এই সম্পত্তি শত্রু সম্পত্তি (ভিপি) ঘোষণা করা হয়েছে। অথচ সুপ্রিম কোর্টের এক আদেশে বলা হয়েছে, ১৯৭৪ সালের পর আর কোনো সম্পত্তি ভিপি ঘোষণা করা যাবে না। ১৯৭২ সালে এ সম্পত্তির আরএস রেকর্ড প্রকাশ হয়। তাতে মালিক হিসেবে সন্দীপেরই নাম রয়েছে।
বাড়িটি ভাষাসৈনিক মনোয়ারা রহমানের নামে ইজারা ছিল। ইজারা বাতিল করে বাড়িটি অপসারণের জন্য সম্প্রতি মাত্র ১ লাখ ৫২ হাজার টাকায় সবকিছুই এক ব্যক্তির কাছে নিলামে বিক্রি করেছে বোয়ালিয়া থানা ভূমি অফিস।
গবেষক তসিকুল ইসলাম রাজা বলেন, এ বাড়ির প্রত্নতাত্ত্বিক গুরুত্ব আছে। সংরক্ষণ করা উচিত ছিল সরকারের।
আজ মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা গেছে, পাঁচজন শ্রমিক বাড়িটি ভাঙার কাজ করছেন। ইতিমধ্যে বাড়ির সিংহভাগ ভেঙে ফেলা হয়েছে। সামনের দিকের দুটি ঘরের মেঝের নিচে রয়েছে কয়েকটি সুড়ঙ্গ।
কাজ তদারকি করছিলেন নিলামে ভবন কেনা ব্যক্তির ব্যবস্থাপক মো. অপু। তিনি বললেন, ‘এই সুড়ঙ্গ প্রাকৃতিক এসি। আগেকার দিনে ধর্নাঢ্য ব্যক্তিরা তাদের ঘরের নিচে এ রকম সুড়ঙ্গ রাখতেন। তাতে পানি জমে থাকত। ঘর ঠান্ডা থাকত।’
রাজবংশের এই স্মৃতিচিহ্ন নিলামে বিক্রি করার বিষয়ে থানা ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার (ভূমি) আরিফ হোসেন বলেন, ‘এটার কোনো প্রত্নতাত্ত্বিক গুরুত্ব আছে কি না, তা আমার জানা নেই। আগে জানালে আমরা ভেঙে ফেলতাম না।’
জানতে চাইলে রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার ড. আ ন ম বজলুর রশীদ বলেন, ‘বাড়িটির ব্যাপারে আমার ধারণা ছিল না। বোয়ালিয়া থানার এসি ল্যান্ড ও সিটি করপোরেশনকে বলছি, বিষয়টি দেখার জন্য।’