হোম > সারা দেশ > চাঁপাইনবাবগঞ্জ

কাউকেই গুনছে না জেলা পরিষদ, রাস্তার জমিতে মার্কেট করতে লিজ

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি

চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের রাস্তা শ্রেণিভুক্ত জমি বাণিজ্যিক ভিত্তিতে সেমিপাকা দোকানঘর নির্মাণের জন্য লিজ দিয়েছে জেলা পরিষদ। এ জমি নয়জনকে লিজ দিয়ে প্রায় ৩০ লাখ টাকা নেওয়া হয়েছে। যদিও প্রত্যেক লিজ গ্রহীতার প্রতি মাসে মাত্র ১ হাজার ৫৩০ টাকা করে সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ার কথা হয়েছে। লিজ গ্রহীতাদের কাছ থেকে ৩ লাখ বা তারও বেশি টাকা নিয়েছেন জেলা পরিষদের সার্ভেয়ার মো. শফিকুল ইসলাম। এ টাকা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, জেলা পরিষদ প্রশাসক, সার্ভেয়ার ও প্রকৌশল বিভাগের মধ্যে ভাগ-বাঁটোয়ারা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

একাধিক লিজ গ্রহীতা বলেছেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে লিজ নিয়ে মার্কেট নির্মাণ করছেন। নয়জন লিজ গ্রহীতা প্রত্যেকে ৩ লাখ ১৮ হাজার ৫০০ টাকা করে দিয়ে দোকানঘর নির্মাণের জন্য প্লট নিয়েছেন। এখন নিজ খরচে দোকানঘর নির্মাণ করছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শহরের ফায়ার সার্ভিস মোড়ে জেলা পরিষদের মালিকানাধীন রাস্তার জমিতে মার্কেট নির্মাণ না করার নির্দেশ দিয়েছে জেলা প্রশাসন। সড়ক বিভাগ থেকেও মার্কেট নির্মাণ না করতে বিশেষভাবে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

স্থানীয় প্রশাসনের নির্দেশনা আর সড়ক ও জনপথ বিভাগের অনুরোধ উপেক্ষা করে চলছে ‘জেলা পরিষদ মিনি মার্কেট’ নির্মাণকাজ। সেখানে নয়টি দোকান নির্মাণ হচ্ছে। দোকান নির্মাণের ফলে আঞ্চলিক মহাসড়কের ফায়ার সার্ভিস মোড়ের বাঁক সংকুচিত হয়ে যাওয়ায় দুর্ঘটনা প্রবণ হয়ে ওঠার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। 

চাঁপাইনবাবগঞ্জ অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আহমেদ মাহবুব-উল-ইসলাম স্বাক্ষরিত পত্রে বলা হয়েছে, সড়ক বিভাগের পক্ষ থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস মোড় সংলগ্ন স্থানে মিনি মার্কেট নির্মাণ না করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। পত্র পর্যালোচনায় প্রতীয়মান হয়—বর্ণিত স্থানে মার্কেট নির্মিত হলে দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়ে সড়ক নিরাপত্তা বিঘ্নিতসহ মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। সার্বিক দিক বিবেচনায় জনস্বার্থে মার্কেট নির্মাণকাজ বন্ধ করার অনুরোধ করা হলো।

তবে নির্দেশনার তোয়াক্কা করছে না জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষ। গতকাল সোমবার দুপুরেও মার্কেটে নির্মাণশ্রমিকদের কাজ করতে দেখা গেছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সানজিদা আফরীন ঝিনুক স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বলা হয়েছে, ফায়ার সার্ভিস মোড়ে আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে যদি মিনি মার্কেট নির্মাণ করা হয়, তাহলে যানবাহন চালক এবং পথচারী চলাচলের সময় বিপরীত দিক থেকে আসা যানবাহন দৃশ্যমান হবে না। এর ফলে সড়ক নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। মার্কেটটি নির্মিত হলে সড়ক সংলগ্ন ফুটপাতে পথচারী চলাচল ব্যাহত হবে। তখন জনগণ রাস্তার ওপর দিয়েই চলাচল করবে। এতে জানমালের ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। মহাসড়ক আইনেও মহাসড়কের উভয় পাশে ভূমির প্রান্তসীমা থেকে ১০ মিটারের মধ্যে কোনো স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না।

রাস্তা শ্রেণিভুক্ত জমিতে বেআইনিভাবে মার্কেট নির্মাণ বন্ধে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর আসনের সংসদ সদস্য মো. হারুনুর রশীদ। অভিযোগে তিনি বলেছেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ‘নবাবগঞ্জ উত্তর মল্লিক গোমস্তাপুর (ত-৬৮০৬) সড়ক’ সংলগ্ন ফায়ার সার্ভিস মোড়ে রাস্তা শ্রেণিভুক্ত দাগের অংশে জেলা পরিষদ বেআইনিভাবে দোকানঘর নির্মাণকাজ করছে। যানজট নিরসনে শত শত কোটি টাকা ব্যয়ে এ রাস্তাটি প্রশস্তকরণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। সেখানে টার্নিং পয়েন্টের ওপর রাস্তা শ্রেণিভুক্ত জায়গায় এভাবে দোকানঘর নির্মাণ করে বন্দোবস্ত দেওয়া একেবারে অন্যায় ও বেআইনি।

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের জেলা পরিষদ শাখা অভিযোগটি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। উপসচিব মোহাম্মদ তানভীর আজম ছিদ্দিকী স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের পরিচালককে সরেজমিন তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, গত ৭ আগস্ট চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা পরিষদের মালিকানাধীন জমি একসনা বন্দোবস্ত অনুমোদন করেন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আফাজ উদ্দীন। ৩১ জুলাই অনুষ্ঠিত জেলা পরিষদের ৩৯ তম মাসিক সভার সিদ্ধান্ত এটি। যদিও জেলা পরিষদ উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির ৪০ তম মাসিক সভায় এই রাস্তা শ্রেণিভুক্ত জায়গায় দোকানঘর নির্মাণ কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে মতামত দেন স্থানীয় সংসদ সদস্য মো. হারুনুর রশীদ।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা পরিষদের সার্ভেয়ার মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘দোকানঘর নির্মাণের জন্য ফায়ার সার্ভিস মোড়ের জমি একসনা বন্দোবস্ত দেওয়া হয়েছে। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে নয়জনকে ১৭০ বর্গফুটের প্লট দেওয়া হয়েছে। প্রতি বছর প্রত্যেক জনের কাছ থেকে ১ হাজার ৫৩০ টাকা করে সরকারি কোষাগারে জমে হবে।’ তবে লিজ গ্রহীতাদের কাছে ৩ লাখ টাকা করে নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন শফিকুল ইসলাম।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আফাজ উদ্দীন বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বিষয়টি তদন্ত করছে। লিজ গ্রহীতারা আদালতে মামলাও করেছেন। এ বিষয়ে আমার কোনো বক্তব্য নেই।’

রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার পরিচালক (যুগ্ম সচিব) মো. এনামুল হক বলেন, ‘চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের ফায়ার সার্ভিস মোড়ে হুজরাপুর মৌজার রাস্তা শ্রেণিভুক্ত জমিতে দোকানঘর নির্মাণের অভিযোগ তদন্তের নির্দেশনার কপি হাতে পেয়েছি। সরেজমিন তদন্ত করে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।’

জেলা পরিষদের এমন কর্মকাণ্ডে ক্ষোভ প্রকাশ করে সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ বলেন, ‘জেলা পরিষদ উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির ৪০ তম মাসিক সভায় আমি উপস্থিত ছিলাম। সভায় বিষয়টি উত্থাপিত হলে শহরের অভ্যন্তরে ফায়ার সার্ভিস স্টেশন, ডায়াবেটিস সেন্টার, বিজিবি ক্যাম্প সংলগ্ন রাস্তা শ্রেণিভুক্ত এমন জায়গায় দোকানঘর নির্মাণ কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে মতামত দিই। মতামত উপেক্ষা করে, রাস্তার জমিতে দোকানঘর নির্মাণ বেআইনি জেনেও লিজ দিয়েছে জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষ। সেখানে দোকানঘর নির্মাণ করা হচ্ছে।’

রাজশাহী-৫ আসনে জামায়াতের প্রার্থী পরিবর্তন

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়: তহবিলের হিসাব না পেয়ে দৃশ্যত স্থবির রাকসু

রাজশাহীতে র‍্যাবের অভিযানে আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার

রাজশাহীর চরাঞ্চলে শিয়ালের আতঙ্ক, এক রাতে আক্রান্ত ২০০ গরু

বগুড়ায় বিএনপির মিছিলে হামলার মামলায় শ্রমিক লীগ নেতা গ্রেপ্তার

ওসমান হাদি হত্যার বিচার দাবিতে রাজশাহীতে শিক্ষার্থীদের অবস্থান

সিরাজগঞ্জে লাশবাহী গাড়ির সঙ্গে সিমেন্টবোঝাই ট্রাকের সংঘর্ষ, আহত ২

যুবকের হাত-পা কেটে দেওয়ার অভিযোগ জামায়াত-শিবিরের কর্মীদের বিরুদ্ধে

চিড়িয়াখানা ফাঁকা করে আবার প্রাণ ফেরানোর চেষ্টায় রাসিক

কৃষকেরা ধানের বীজতলা পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখেন যে কারণে