আগাম প্রচার নেই। এরপরও দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে হরেক পণ্য নিয়ে ব্যবসায়ীরা সমবেত হন রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার উজালখলসী গ্রামের রাইচাঁদ নদীর তীরের ঘোড়াদহ মেলায়। শতবর্ষী এই মেলা কোনো প্রচার ছাড়ায় বসে আসছে। মেলাটি একটি গ্রামে অনুষ্ঠিত হলেও উৎসবের আমেজ থাকে উপজেলাজুড়ে।
দুর্গাপুর উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে কিসমতগণকৈড় ইউনিয়নের উজালখলসী ও ভবানীপুর গ্রামের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া আইচাঁদ নদীর পাড়ে বসে ঘোড়াদহ মেলা।
স্থানীয় লোকজন জানান, ঘোড়াদহ মেলা শত বছর ধরে বসে আসছে। অনেকের বাপদাদারাও ছোটবেলা থেকে এই মেলা দেখে বড় হয়েছেন। তাঁদের বাপদাদারাও পূর্বপুরুষের কাছ থেকে একই কথা শুনেছেন। আশ্বিন মাসের শেষ দিনে মেলাটি বসে, চলে কার্তিকের ২ তারিখ পর্যন্ত।
উজালখলসী গ্রামের বাসিন্দা (অবসরপ্রাপ্ত) প্রধান শিক্ষক হজরত আলী বলেন, ‘বাপদাদার মুখে থেকে শুনে ধারণা করা হয় ঘোড়াদহ মেলাটি প্রায় ৫০০ বছর আগের পুরোনো। আগে নৌকাবাইচ ও ঘোড়দৌড় অনুষ্ঠিত হচ্ছিল। এই মেলার আগাম কোনো প্রচারণা নেই। শত বছর ধরে আশ্বিন মাসের শেষ দিনে রাইচাঁদ নদী তীরে ব্যবসায়ীরা পণ্য নিয়ে এ এখানে পসরা সাজান। আগেই শুধু একই গ্রামে হলেও ১০-১২ বছর ধরে একই সময়ে ঘোড়াদহের মেলার আদলে পাশের গ্রামগুলোতেও মেলা বসে।’
হজরত আলী আরও বলেন, ‘মেলাটি শুধু মেলা প্রাঙ্গণেই সীমিত নয়, বছরের পর বছর ধরে এ উপলক্ষে জামাতা ও আত্মীয়স্বজনকে আমন্ত্রণ করে আপ্যায়ন করার রেওয়াজও যথারীতি চলে আসছে। বাড়িতে বাড়িতে বানানো হয়েছে খই, মুড়কি, নারকেলের ও চালের আটার নাড়ু। মেলা থেকে দই মিষ্টি কিনে নিয়ে মুড়কি দিয়ে খাওয়ার রেওয়াজটিও ধরে রেখেছেন এলাকাবাসী।’
নাটোর জেলা থেকে কাঠের তৈরি খেলনা এনেছেন আশরাফুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘প্রায় ১৫ বছর ধরে এই মেলায় কাঠের খেলনা বিক্রি করে আসছেন তাঁরা। এখানে অনেক লোকের সমাগম হয়। বিক্রিও ভালো হয়। তিন দিন এই মেলায় কাঠের তৈরি বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করব।’
মেলায় এসেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শামীমা হক শুভা। তিনি বলেন, ‘ঐতিহ্য ধরে রেখেছে এই ঘোড়াদহ মেলা। এখানে এলে সব ধরনের জিনিস পাওয়া যায়। প্রতিবছরই আসা হয়। মেলার ঐতিহ্যবাহী গুড়ের জিলাপি আমার খুব পছন্দের।’
ঘোড়াদহ মেলা কমিটির সভাপতি আব্দুল মজিদ বলেন, ‘তিন দিনব্যাপীর এই মেলা গত সোমবার শুরু হয়েছে। তবে ফার্নিচারসহ লেপ-তোশকের দোকানপাট মাসব্যাপী থাকবে। কমিটির মাধ্যমে মেলা পরিচালনা করা হয়। গ্রামের জনসাধারণের সম্মতিতে গঠন করা হয় কমিটি। মেলা থেকে উপার্জিত আয় গ্রামের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কল্যাণে, গ্রামের মানুষের কর পরিশোধে ও সেবামূলক কাজে ব্যয় করা হয়।’
কিসমত গণকৈড় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উজালখলসী গ্রামের বাসিন্দা আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘কোনো ঘোষণা ও মাইকিং ছাড়াই প্রতিবছরই আশ্বিন মাসের শেষ তারিখে মেলা বসে। আগে মেলা উপলক্ষে রাইচাঁদ নদীতে নৌকাবাইচ হতো। গান-বাজনা সার্কাসও হতো। তবে সীমাবদ্ধতার কারণে এবার তা হচ্ছে না।’