হোম > সারা দেশ > রাজশাহী

‘চোখের পলকে যমুনায় তলিয়ে গেল গোটা জনবসতি’

বগুড়া প্রতিনিধি

‘চোখের পলকে ২২টা বাড়ি ও তিনটা দোকানসহ গোটা জনবসতি তলিয়ে গেল যমুনা নদীতে। লোকজন সাঁতরে প্রাণ বাঁচাতে পারলেও রক্ষা করতে পারেনি ঘরের মালামাল এবং অর্থকড়ি। নদীতে ভেসে যাওয়া গবাদিপশু, টিনের চাল, খাট-চৌকির কিছু উদ্ধার করা গেলেও মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকু হারিয়ে এখন নিঃস্ব পরিবারগুলো।’ 

এভাবে যমুনার নদীভাঙনের বর্ণনা দিচ্ছিলেন বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার কামালপুর ইউপি চেয়ারম্যান রাছেদুজ্জামান রাসেল। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে ইছামারা গ্রামের একটি বসতি দেবে গিয়ে নদীগর্ভে চলে গেছে। 

রাসেল আরও বলেন, ‘এমন দৃশ্য দেখে গ্রামের আরও প্রায় ৩০০ পরিবার ঘরবাড়ি ভেঙে নিয়ে যাচ্ছে বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধে। আশঙ্কায় কেউ খোলা আকাশের নিচে, কেউ আবার ঝুপড়িতে অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছেন।’ 

এ ঘটনার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে (পাউবো) দায়ী করছেন স্থানীয়রা। তাদের অভিযোগ, গত ৯ বছরেও ধুনট উপজেলার শেষসীমা শহরাবাড়ি থেকে শুরু করে সারিয়াকান্দি উপজেলার কামালপুর ইউনিয়নের ইছামারা পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার এলাকায় নদীতীরে কোনো সংস্কার বা মেরামত কাজ করা হয়নি। অথচ গত বছরেও বর্ষা মৌসুমে ইছামারায় ভাঙন দেখা দিলে সেখানে জরুরি ভিত্তিতে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন ঠেকানো হয়েছে। কিন্তু এবার শুষ্ক মৌসুমে সেখানে কোনো কাজই করেনি পাউবো।

আজ রোববার সরেজমিন ইছামারাসহ আশপাশের এলাকায় গিয়ে কথা হয় স্থানীয়দের সঙ্গে। স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল জলিল, লোকমান হোসেন, রাজু হোসেনসহ আরও অনেকে জানান, একসময় নদী ছিল তাঁদের গ্রাম থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে। কয়েক বছর আগে নদীর মাঝে চর জেগে উঠলে নদীর গতিপথ ঘুরে মূল স্রোত গ্রামের পাশ দিয়ে প্রবাহিত হতে শুরু করে। এই সময়ে নদী খনন এবং তীর সংরক্ষণের জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের দফায় দফায় বলা হলেও তাঁরা কোনো কাজ করেননি। এ কারণে প্রতিবছরই বন্যার সময় যমুনার পশ্চিম তীর ভাঙতে থাকে। 

তাঁরা আরও জানান, গত বছরেও ইছামারা এলাকায় ভাঙন দেখা দেয়। ভরা বর্ষায় পানির ভেতরে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন ঠেকানো হয়েছিল। পরে বন্যার পানি নেমে গেলে আর কোনো কাজ করেনি পাউবো। 

বোহাইল ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা টুকু ও কামালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাছেদুজ্জামান রাসেলের সঙ্গেও কথা হয় আজকের পত্রিকার।

চেয়ারম্যানরা জানান, ২০১৪ সালে বন্যার সময় নদীতীর সংরক্ষণের জন্য কিছু কাজ করা হয়। এরপর দীর্ঘ ৯ বছরে শহরাবাড়ি থেকে ইছামারা পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার এলাকায় কোনো প্রকার সংস্কার বা মেরামত করা হয়নি। এ কারণে এই অংশটি খুবই নাজুক পরিস্থিতিতে রয়েছে। এবার এই দেড় কিলোমিটার এলাকাতেই শুধু ভাঙন দেখা দিচ্ছে। সারিয়াকান্দি উপজেলার অন্য কোনো এলাকায় তেমন ভাঙন নেই। 

বোহাইল ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান টুকু বলেন, ‘পানি উন্নয়ন বোর্ড বন্যার সময় জরুরি কাজ করতে যতটা পছন্দ করে, শুষ্ক মৌসুমে ততটা করে না। কারণ, বন্যায় পানির ভেতরে কত বস্তা বালু বা সিসি ব্লক ফেলা হলো, তার হিসাব করা কঠিন। কিন্তু শুষ্ক মৌসুমে কাজ করলে সেই হিসাব যে কেউ বের করতে পারে।’ 

কামালপুর ইউপি চেয়ারম্যান রাছেদুজ্জামান রাসেল বলেন, ‘যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি এবং আবারও দেবে যাওয়ার আশঙ্কায় লোকজন ঘরবাড়ি ভেঙে সরিয়ে নিচ্ছে। তাদের আপাতত বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। তারা সেখানে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।’ 

এসব অভিযোগের বিষয়ে বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী নাজমুল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, মূলত নদীর গতিপথ পরিবর্তনের ফলে পশ্চিম তীরে লোকালয়ের দিকে পানির চাপ বেড়েছে। নদীর মাঝে চর জেগে গতিপথ পরিবর্তনের কারণেই তীরবর্তী এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। সেখানে ভাঙন ঠেকাতে জরুরি ভিত্তিতে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। 

দীর্ঘদিন কোনো সংস্কার ও মেরামত না করার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ওই এলাকার নদীতীর সংরক্ষণকল্পে ২০১৯ সালে ৮২৪ কোটি টাকার একটি প্রকল্পপত্র মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়। সেটি এখন পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে রয়েছে। ওই প্রকল্পটি অনুমোদন হয়নি। ফলে কোনো অর্থ বরাদ্দও পাওয়া যায়নি। এ কারণে সেখানে কোনো সংস্কার বা মেরামতকাজ করা যায়নি।’

সাজিদের মৃত্যুতে রাষ্ট্রের কাছে ৫ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি

দুর্গাপুরে বধ্যভূমিতে শহীদদের স্মরণে শ্রদ্ধা ও মোনাজাত

রাকসুর জিএসকে ‘হত্যার হুমকি’ দিয়ে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতার ফেসবুক পোস্ট

বগুড়ায় ট্রাক-অটোরিকশার সংঘর্ষে চালক নিহত, আহত তিন

গভীর নলকূপ খনন: বরেন্দ্রজুড়ে শত শত মৃত্যুকূপ

শিশু সাজিদের শেষ বিদায়ে হাজারো মানুষের ঢল

আমার একটা কলিজা হারায় ফেলছি, বিচার চাই: সাজিদের বাবা

প্রাথমিকে শতভাগ বই, মাধ্যমিকে এল অর্ধেক

সব চেষ্টা—আকুতি বিফলে, মায়ের কোলে মৃত সাজিদ

শিশু সাজিদ মারা গেছে