কারও হাতে পলো, কারও হাতে খেয়া জাল, বাদাই জালসহ মাছ ধরার নানা উপকরণ। এরপর দল বেঁধে বিলে নেমে মনের আনন্দে মাছ শিকার করছেন। কেউ পাচ্ছেন বোয়াল, কেউবা শোল, রুই, কাতল। অনেকে ফিরছেন খালি হাতে।
এভাবেই চলনবিলে মাছ শিকারে মেতেছেন শৌখিন মৎস্য শিকারিরা। পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার রুহুল বিলে দল বেঁধে মাছ ধরার এই আয়োজনের নাম ‘বাউত উৎসব’। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বাউত উৎসবে অংশ নেন নানা বয়সী হাজারো মানুষ।
তবে, এ বছর বিলে কাঙ্ক্ষিত মাছের দেখা মিলছে না। এতে হতাশ ও ক্ষুব্ধ মৎস্য শিকারিরা। তাদের অভিযোগ, নিষিদ্ধ জাল আর গ্যাস ট্যাবলেট দিয়ে মাছ ধরে নিয়েছে প্রভাবশালীরা। ফলে মাছ ও পোকামাকড় মরে গিয়ে পানিতে সৃষ্টি হয়েছে দুর্গন্ধ।
আজ মঙ্গলবার ভোর ৬টার দিকে পাবনা-ফরিদপুর আঞ্চলিক সড়কের ভাঙ্গুড়া ইউনিয়নের পাটুলিপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তার পাশে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ানো অন্তত ২০টি বাস। এসব বাসে কুষ্টিয়া, নাটোর, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ থেকে এসেছেন অনেক মৎস্য শিকারি। আবার অনেকে ইজিবাইক, অটোরিকশা, মোটরসাইকেল, ভ্যানসহ বিভিন্ন যানবাহনে এসেছেন।
বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর নভেম্বরের শেষে অথবা ডিসেম্বরের শুরুতে মাসব্যাপী চলে এই উৎসব। সপ্তাহের প্রতি শনি ও মঙ্গলবার ভোর থেকে বিলাঞ্চলের পূর্বনির্ধারিত এলাকায় দল বেঁধে মাছ শিকারে নামেন বাউতেরা। বিভিন্ন বয়সী মানুষের উপস্থিতিতে বিলপাড়ে তৈরি হয় উৎসবমুখর পরিবেশ।
নাটোর থেকে বাউত উৎসবে আসা আরেক মৎস্য শিকারি সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতিবছরই আসি এই বাউত উৎসবে। কিন্তু এবার মাছ নেই বললেই চলে। তবে আমরা মাছ পাই বা না পাই, সবাই মিলে আনন্দ করি এটাই ভালো লাগে।’
বিলে বাউত উৎসব দেখতে আসা সাংস্কৃতিক কর্মী মুস্তাফিজ রাসেল বলেন, ‘বিলে যেভাবে গ্যাস ট্যাবলেট ব্যবহার করা হয়েছে, তাতে দেশি মাছের প্রজনন নষ্ট হচ্ছে। জীববৈচিত্র্য হারিয়ে যাচ্ছে। প্রকাশ্যে অবৈধ চায়না দুয়ারী ও কারেন্ট জাল ব্যবহার হচ্ছে। এখনই প্রশাসনের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। না হলে ভবিষ্যতে দেশি মাছের সঙ্গে বাঙালি সংস্কৃতির এই উৎসবও হারিয়ে যাবে।’
এ বিষয়ে পাবনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘মাছের প্রজনন ও জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি না করে বাউত উৎসব পালন করতে হবে। এ বিষয়ে মৎস্য শিকারিদের সচেতন হতে হবে। সেই সঙ্গে বিলে গ্যাস ট্যাবলেট বা নিষিদ্ধ জাল ব্যবহার করে মাছের ও পরিবেশের ক্ষতি করছে এমন অভিযোগ পেলে মৎস্য আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’