হোম > সারা দেশ > রাজশাহী

কর্মশালায় কর্মকর্তারা, বাইরে তাঁদের গাড়ি চালকদের এসি বিলাস

রিমন রহমান, রাজশাহী

কর্মকর্তাদের গাড়ি সারি সারি দাঁড়িয়ে। একটুও নড়ছে না। কিন্তু ইঞ্জিন চলছে। কাছাকাছি গেলেই ইঞ্জিনের শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। ভেতরে চলছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি)। গাড়িতে কোনো কর্মকর্তা নেই। চালকদের কেউ আয়েশ করে ঘুমাচ্ছেন। কেউ আসনে বসে ঝিমাচ্ছেন।

বৈশ্বিক সংকটের কারণে সরকারের তরফ থেকে সবাইকে সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান জানানো। কিন্তু রাজশাহীতে আজ বৃহস্পতিবার এভাবে চালকদের এসি বিলাস দেখা গেছে। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে কর্মশালায় কর্মকর্তারা এসেছিলেন। বাইরে চালকেরা গাড়ির ইঞ্জিন চালিয়ে এসি উপভোগ করছিলেন। যদিও জ্বালানি সাশ্রয় করতে বেশিরভাগ সভা অনলাইনে করার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে।

কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক। ঢাকা থেকে এসেছিলেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রত্যেক অধিদপ্তর ও দপ্তরের শীর্ষ কর্মকর্তারা। এ ছাড়া রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের প্রত্যেক জেলা ও উপজেলার কৃষি কর্মকর্তারা এসেছিলেন এ কর্মশালায়। ঢাকা ও উত্তরের ১৬ জেলা থেকে সব মিলিয়ে শতাধিক গাড়ি এসেছিল সেখানে। এর মধ্যে অন্তত ৩০টি গাড়ির চালকদের ইঞ্জিন স্টার্ট দিয়ে এসি ছেড়ে রাখতে দেখা গেছে। 

সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত চলে এ কর্মশালা। কর্মশালা যতক্ষণ চলেছে ততক্ষণই গাড়ির ইঞ্জিন স্টার্ট রেখে ভেতরে বসে ছিলেন অনেক চালক। তাঁদের মধ্যে ১০ জনের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের।

ইঞ্জিন স্টার্ট দিয়ে এসি ছেড়ে বসে ছিলেন ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্ল্যান ব্রিডিং প্রধানের গাড়িচালক মানিক মৌয়ালী। গাজীপুর-ঠ ১১-০০৫৩ নম্বরের এই গাড়ির চালকের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বললেন, ‘একটু ঠান্ডা হওয়ার জন্য এই এখনই দিলাম।’ 

ইঞ্জিন স্টার্ট দিয়ে বসেছিলেন পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার গাড়িচালক মো. জুয়েল। ঢাকা মেট্রো-ঠ ১৩-৬২১৭ নম্বরের গাড়িটির এই চালক বলেন, ‘খুব গরম লাগছিল। তাই পাঁচ-দশ মিনিট ইঞ্জিন স্টার্ট দিয়ে একটু এসি চালাচ্ছি।’

গাড়ি (ঢাকা মেট্রো-ঠ ১৩-৭০৪৯) না চললেও ইঞ্জিন স্টার্ট দিয়ে রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালকের চালক মো. রাহী বলেন, ‘এসি ঠিক আছে কি না টেস্ট করে দেখলাম!’ 

ঢাকা মেট্রো-ঠ ১৩-৬১৯১ নম্বরের গাড়িটিও ইঞ্জিন স্টার্ট রাখা ছিল। জানালা দিয়ে দেখা গেল ভেতরে চালক ঘুমাচ্ছেন। ডেকেও তাঁর সাড়া পাওয়া গেল না। দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালকের গাড়িটির (ঢাকা মেট্রো-ঠ ১৩-৩৬৭৯) চালক মহসীন আলী বললেন, ‘মোবাইল বন্ধ হয়ে গেছে। চার্জ দিতে ইঞ্জিন স্টার্ট দিলাম। তাই এসিটাও ছাড়লাম।’ 

বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রকল্প পরিচালক রফিকুল ইসলামের গাড়ির (ঢাকা মেট্রো-ঠ ১১-৭০৬৯) চালক মিন্টু হোসেন বললেন, ‘গাড়ির ভেতরে খুব গরম। তাই এসি দিয়ে একটু নাশতা করছি।’

গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার গাড়ির (মেট্রো-ঠ ১৩-৭০৪২) চালক জহুরুল ইসলাম আরও কয়েকজন চালককে ভেতরে নিয়ে ইঞ্জিন স্টার্ট দিয়ে এসি ছেড়ে বসে ছিলেন। তিনি বলেন, ‘গরম লাগছে, তাই এসি দিয়েছি।’

সরকার ব্যয় সাশ্রয় করতে বললেও এভাবে জ্বালানি পোড়ানোর বিষয়ে জানতে চাইলে ভেতর থেকে চালক পরিচয় দিয়ে মো. হাশেম নামের এক ব্যক্তি বললেন, ‘আমরা এভাবেই অভ্যস্ত। সহজে তো যাচ্ছে না।’ 

সাশ্রয়ের দিকে কর্মকর্তাদেরও তো মনোযোগ দেওয়া উচিত! দায়টা অনেকখানি কর্তাদের ওপর চাপিয়ে হাশেম বলেন, ‘সরকার তো মিটিংও অনলাইনে করতে বলেছে। তাহলে ১৬টা জেলা থেকে এখানে এতগুলো গাড়ি আসল কেন? অন্তত ২০০-২৫০ গাড়ি এসেছে। এতে তেল পুড়েছে না? আমার জেলা থেকেই ছয়জন অফিসার এসেছেন ছয়টা গাড়ি নিয়ে। তাঁরা সবাই একটা গাড়ি আনলেও তো তেল বাঁচত।’

এমন অপচয়ের নিয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালকের কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ লিয়াজোঁ অফিসার মো. আবদুল মোমিন বলেন, ‘এই প্রোগ্রামটা অনেক আগে সেট করা। মন্ত্রী মহোদয়ের সময়সূচির কারণে পিছিয়েছে। আর এই কর্মশালায় কৃষক এবং সার-কীটনাশকের পরিবেশকেরাও অংশ নিয়েছেন। অনলাইনে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায় না।’ 

তিনি জানান, এই কর্মশালায় কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ ২০টি সংস্থার কর্মকর্তারা অংশ নেন। কর্মশালা চলাকালে চালকদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা ইঞ্জিন স্টার্ট দিয়ে এসি ছেড়ে রাখার প্রসঙ্গ তুললে আবদুল মোমিন বলেন, ‘এটা আমি বলতে পারব না। এই বিষয়ে আমার কোনো মন্তব্য নেই।’

বগুড়ায় ট্রাক-অটোরিকশার সংঘর্ষে চালক নিহত, আহত তিন

গভীর নলকূপ খনন: বরেন্দ্রজুড়ে শত শত মৃত্যুকূপ

শিশু সাজিদের শেষ বিদায়ে হাজারো মানুষের ঢল

আমার একটা কলিজা হারায় ফেলছি, বিচার চাই: সাজিদের বাবা

প্রাথমিকে শতভাগ বই, মাধ্যমিকে এল অর্ধেক

সব চেষ্টা—আকুতি বিফলে, মায়ের কোলে মৃত সাজিদ

শিশু সাজিদ মারা গেছে

শিশু সাজিদকে উদ্ধার, নেওয়া হয়েছে হাসপাতালে

শিশু সাজিদের বাঁচার আশা নেই, বন্ধ করা হয়েছে অক্সিজেন

বাড়ির পাশে পরিত্যক্ত ৩ গর্ত, শাস্তি চান সাজিদের মা