বিরোধ নিষ্পত্তি নিয়ে ফাঁকা গুলির ঘটনায় রাজশাহীতে যৌথ বাহিনীর অভিযানে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল বুধবার বিকেল ৪টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত নগরীর খুলিপাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন নগরীর খুলিপাড়া মহল্লার বাসিন্দা নজরুল ইসলাম জুলু (৪৮), তাঁর ছেলে নাজমুল ইসলাম জিম (২৫) এবং একই এলাকার বাসিন্দা মো. মুন্না (২৩)। মুন্না সম্পর্কে নজরুল ইসলামের ভাতিজা।
গত মঙ্গলবার ওই ঘটনায় নগরীর বোয়ালিয়া থানায় সিয়াম ইসলাম রাজ (১৯) নামের এক তরুণের দায়ের করা মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
মামলার এজাহারে বলা হয়, পূর্ববিরোধের নিষ্পত্তির জন্য তিনি মঙ্গলবার বিকেলে বাসার রোড মাঠে কয়েকজনের সঙ্গে বসেছিলেন। সেখানে নাদিম (২৯) নামের এক যুবক তাঁকে কিলঘুষি মারেন। এ ছাড়া মো. সাকিব (২৪) নামের আরেক যুবক পিস্তল বের করে দুটি ফাঁকা গুলি করেন। পরে তাঁরা সেখান থেকে পালিয়ে যান। গুলি ছোড়ার ওই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
এ বিষয়ে নগরীর বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাক আহম্মেদ বলেন, ‘এই মামলা হওয়ার পর পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা খুলিপাড়া মহল্লায় নজরুল ইসলাম জুলুর বাড়িতে অভিযান চালায়। বাড়ি থেকে নজরুল ও তার ছেলে জিম এবং একই এলাকা থেকে মুন্নাকে গ্রেপ্তার করা হয়। রাজের করা মামলায় তদন্তে প্রাপ্ত আসামি হিসেবে এদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, নজরুল ইসলাম জুলুসহ তিন আসামিকে মারামারির মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে দুপুরে (বৃহস্পতিবার) আদালতে পাঠানো হয়েছে। নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে আরও ১৩টি মামলা আছে। ঢাকার মোহাম্মদপুর থানার একটি হত্যা মামলার কথাও জেনেছি। তাকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি মোহাম্মদপুর থানায় জানানো হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গ্রেপ্তার নজরুল ইসলাম রাজশাহী থেকে প্রকাশিত দৈনিক নতুন প্রভাত পত্রিকার বিশেষ প্রতিনিধি। তিনি এক সময় দেশের প্রথম শ্রেণির বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকায় ফটোসাংবাদিক হিসেবে কাজ করেছেন। পরে তিনি খবর ২৪ ঘণ্টা প্রতিষ্ঠা করে লেখালেখি শুরু করেন। তাঁর ছেলে নাজমুল ইসলাম জিম এই পোর্টালের সম্পাদক ও প্রকাশক।
তবে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ঢাকার মোহাম্মদপুরে জুবাইদ ইসলাম নামের এক ব্যক্তি নিহতের মামলায় ২৯৪ নম্বরের আসামি নজরুল ইসলাম জুলু। ওই মামলার প্রধান আসামি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মামলায় তাঁকে রাজশাহী মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের উপদপ্তর সম্পাদক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। যদিও এই পদ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
এদিকে গণমাধ্যমে পাঠানো রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের বিজ্ঞপ্তি বলা হয়েছে, ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তারা (গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা) চাঁদাবাজি, অবৈধ অস্ত্র বহন, ধর্ষণ, জুয়া, মারামারিসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। এর মধ্যে নজরুল ইসলাম জুলু এলাকায় অবৈধ প্রভাব বিস্তারকারী হিসেবে পরিচিত এবং তাঁর ছত্রচ্ছায়ায় একাধিক সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সংঘটিত হয়ে আসছে। এ ছাড়া জুলুর নেতৃত্বে রাজশাহী প্রেসক্লাব দখলসহ ব্যাপক চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে।’