সীমান্ত পার করে ভারত থেকে প্রথমে হেরোইন আসে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের সীমান্তবর্তী চরে। এরপর চরেই কেজি কেজি হেরোইন ছোট ছোট প্যাকেটে ঢোকানো হয়। এসব প্যাকেট পদ্মা নদীর এই পারে রাতের আঁধারে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। চর থেকে এই পারে আসার সময় নদীতে হেরোইন নিয়ে নৌকা ভাসতে থাকে। এই পার থেকে লাইটের মাধ্যমে সংকেত না পাঠানো পর্যন্ত নৌকা তীরে ভেড়ে না। লাইটের সংকেতের ভাষা শুধু মাদক কারবারিরাই বোঝেন। তাই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সহজে তাঁদের নাগাল পায় না।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার সীমান্তবর্তী চর হাকিমপুর টুকপাড়া গ্রামে অভিযান চালিয়ে প্রায় তিন কোটি টাকা মূল্যের ৩ কেজি ১৮৯ গ্রাম হেরোইন ও একটি ওয়ান শুটার গান উদ্ধারের পর এক প্রেস ব্রিফিংয়ে চোরাচালানের এই কৌশলের কথা জানান র্যাব-৫ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল রিয়াজ শাহরিয়ার। আজ রোববার দুপুরে রাজশাহীতে নিজের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে প্রেস ব্রিফিং করেন তিনি। রিয়াজ জানান, উদ্ধার করা হেরোইন নৌকায় করে এই পারে আনার কথা ছিল। তবে এর আগেই বাড়িতে প্যাকেজিং করার সময় হেরোইনগুলো উদ্ধার করা হয়।
র্যাব অধিনায়ক জানান, গতকাল শনিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে র্যাব-৫ এর রাজশাহীর সিপিএসসি কোম্পানির একটি দল চর হাকিমপুর টুকপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মো. আমিনুল (৩৭) ইসলামের বাড়িতে অভিযান চালায়। ওই বাড়িতে হেরোইনের প্যাকেজিং করার সময় আমিনুলকে হাতেনাতে আটক করা হয়। পরে সেখান থেকে একটি আগ্নেয়াস্ত্রও উদ্ধার করা হয়।
ভারতীয় সীমান্তবর্তী হাকিমপুর এলাকা মাদক চোরাচালানের অন্যতম রুট হিসেবে মাদক চোরাকারবারিরা দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার করছেন বলে জানান র্যাব অধিনায়ক। তিনি আরও জানান, এলাকাটি পদ্মানদীর পাড়ে হওয়ায় নদীপথে সীমান্তের ওপার থেকে নৌকাযোগে মাদক এই এলাকায় এনে সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। গোপন তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব-৫ এর সিপিএসসি টিম জানতে পারে একটি বড় চালান আমিনুল চোরাচালান করে এনেছেন।
র্যাবের অভিযানকারী দল দুই ভাগ হয়ে কাজ শুরু করে ওই এলাকায়। একটি দল পদ্মা নদীতে নৌকায় করে ও অপর দল স্থলভাগে রাস্তা দিয়ে আমিনুলের বাড়ির এলাকায় পৌঁছায়। দুই দলই তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় তথ্য বিশ্লেষণ করে বাড়িটি শনাক্ত করতে সক্ষম হয়। এরপর বাড়িটি ঘেরাও করা হয়। পরে বাড়িতে ঢুকে আমিনুলকে হেরোইন প্যাকেজিংরত অবস্থায় আটক করা হয়। বাড়িটি তল্লাশি করলে আমিনুল নিজে তাঁর শোয়ারঘরের টেবিলের নিচ থেকে একটি প্লাস্টিকের কৌটা থেকে হেরোইনের বড় অংশ ও বিপুল পরিমাণ মোটা পলিথিনের প্যাকেট বের করে দেন। আমিনুল মাদক চোরাচালানের সময়ে অস্ত্রও বহন করেন। তাই র্যাব সদস্যরা আরও তল্লাশি শুরু করলে আমিনুলের শোয়ারঘরের বিছানার পাশে রাখা ট্রাংকের ভেতর থেকে অবৈধ ওয়ান শুটার গান উদ্ধার করা হয়।
র্যাব অধিনায়ক জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আমিনুল জানান হেরোইনগুলো ঢাকাসহ দেশের বেশ কয়েকটি জেলায় পাচার করার কথা ছিল তাঁর। এই ঘটনায় তাঁর বিরুদ্ধে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ ও অস্ত্র আইনে দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।