চাঁপাইনবাবগঞ্জের একটি সড়কের একপাশে মাত্র ২৫০ মিটারের একটি ড্রেন নির্মাণ করা হবে। এ জন্য সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ এই অংশের গাছগুলো কেটে নিতে জেলা পরিষদকে অনুরোধ করেছিল। এখন জেলা পরিষদ সড়কের দুই পাশের প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকার গাছ কেটে ফেলছে। ঠিকাদারের লোকজন ১২ দিন ধরে এসব গাছ কাটছে।
জেলা পরিষদ জানিয়েছে, প্রায় ২৬ লাখ টাকায় ২৫০টি গাছ বিক্রি করা হয়েছে। তবে বাস্তবে এর কয়েক গুণ বেশি গাছ কাটার অভিযোগ পাওয়া গেছে। যদিও ঠিকাদারের লোকজন অতিরিক্ত গাছ কাটার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। আর জেলা পরিষদ বলছে, গাছ কাটার সময় তাদের একজন প্রতিনিধি থাকছে। অতিরিক্ত গাছ কাটার সুযোগ নেই। তবে গতকাল বুধবার সরেজমিন গাছ কাটার স্থানে জেলা পরিষদের কোনো প্রতিনিধি দেখা যায়নি।
সড়কটি রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলা সদর থেকে বেরিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর ও নাচোল উপজেলার ভেতর দিয়ে নওগাঁর সাপাহার উপজেলা সদরে গিয়ে শেষ হয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার কেন্দুল থেকে আমনুরা বাইপাস রেলস্টেশন পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে গাছ কাটা হচ্ছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা পরিষদ সম্প্রতি গাছগুলো বিক্রি করেছে। অনাবৃষ্টি ও প্রচণ্ড তাপপ্রবাহের কারণে যখন গাছ কেটে ফেলার বিষয়টি তুমুলভাবে আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে, ঠিক তখনই চাঁপাইনবাবগঞ্জের এই গাছগুলোতে কুড়ালের কোপ পড়ছে।
গতকাল সকালে কেন্দুল থেকে আমনুরা বাইপাস রেলস্টেশন পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার সড়কটিতে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তার দুই পাশে শিমুল, কড়াই, শিশুসহ নানা প্রজাতির হাজারখানেক গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। কিছুদিন আগেও ছায়াঘেরা আমনুরা বাজারটি এখন খাঁ খাঁ করছে। কাটা গাছের গুঁড়ি পড়ে আছে সড়কের দুই পাশে।
আমনুরা বাজারের ব্যবসায়ী আবদুস সালাম বলেন, ‘গাছগুলা হারাক ছায়া দিত। জেলা পরিষদের এখুন টাকার খুব দরকার। তাই কাইট্যা ফেলছে। হারা আর কী কহাবো? কহার কুনু জাগা আছে? শুননু যে আড়াই শ গাছ বিককিরি করা হয়্যাছে। এখুন দেখছি হাজারের বেশি কাছ কাইট্যা সাপা কইররা দিছে। এগলা তো দেখার কেহু নাই। যা ইচ্ছা তাই চলছে।’
কেন্দুল এলাকায় একটি তাজা কড়ইগাছ কাটছিলেন কয়েকজন শ্রমিক। কিছু কাটা গাছ সেখানে ট্রলিতেও তোলা হচ্ছিল। সেখানে জেলা পরিষদের কোনো প্রতিনিধিকে পাওয়া যায়নি। সেখানে ছিলেন ঠিকাদারের প্রতিনিধি কবির হোসেন। তিনি অতিরিক্ত গাছ কাটার অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ১০ দিন ধরে তাঁরা গাছ কাটছেন। আরও ১০ দিন লাগবে।
ঠিকাদারের লোকজনের অতিরিক্ত গাছ কেটে নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে আফাজ উদ্দিন বলেন, ‘অতিরিক্ত গাছ কাটার সুযোগ নেই। আমাদের প্রতিনিধি সেখানে উপস্থিত থাকে।’ গতকাল সেখানে কোনো প্রতিনিধিকে দেখা যায়নি জানালে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, মে দিবসের ছুটির জন্য হয়তো ছিল না।’
গাছ কাটার জন্য জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সওজের চিঠির কথা জানালেও সওজ বলছে, ওই এলাকায় সড়কের একপাশে মাত্র ২৫০ মিটার ড্রেন নির্মাণ করা হবে। সওজের চাঁপাইনবাবগঞ্জের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মেহেদী হাসান এ বিষয়ে বলেন, ‘আমাদের মাত্র ২৫০ মিটার ড্রেন হবে। সেটাও রাস্তার একপাশে। রাস্তার দুই পাশে কেন জেলা পরিষদ গাছ কাটছে, তা বলতে পারব না।’