রাজশাহী: রাজশাহীর খ্রিশ্চিয়ান মিশন হাসপাতালের সামনে একটি স্থায়ী ভাগাড় নির্মাণ করছে রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক)। আজ সোমবার এটির নির্মাণ কাজ শুরু হলে বাধা দেয় এলাকাবাসী ও মিশন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পরে পুলিশ ডেকে কাজ চালিয়ে যান ঠিকাদার।
জানা যায়, নগরীর চণ্ডিপুর এলাকায় যেখানে এই সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশনটি (এসটিএস) নির্মাণ করা হচ্ছে সেখানে আগে থেকেই বাসাবাড়ির বর্জ্য ফেলা হতো। পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা দিনভর গোটা মহল্লার ময়লা এনে এখানে জমা করতেন। রাতে সিটি করপোরেশনের গাড়ি এসে ময়লা তুলে নগরীর উপকণ্ঠ সিটিহাট এলাকার ভাগাড়ে নিয়ে যেত।
অস্থায়ী এ ভাগাড়টি দীর্ঘদিন স্থানান্তরের দাবি জানিয়ে আসছিলেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয়রা। কিন্তু রাসিক সেখানেই স্থায়ী ভাগাড় নির্মাণ শুরু করেছে। জায়গাটি রাসিকের দাবি করে আজ সকালে শ্রমিকেরা একটি কৃষ্ণচূড়ার গাছ কেটে ফেলেন। পরে খোঁড়াখুড়ি শুরু করলে হাসপাতালের কর্মকর্তা এবং নার্সিং ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা গিয়ে বাধা দেন। শুরুতে শ্রমিকরা কাজ বন্ধ করলেও ঠিকাদার মামুনুর রশীদ বাচ্চু গিয়ে কাজ চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন। পরে পুলিশের উপস্থিতিতে কাজ চালিয়ে যাওয়া হয়।
নার্সিং ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী সঙ্গীতা বিশ্বাস বলেন, আমাদের আবাসিক রুমের সামনে এই ভাগাড়। এখানে আমরা থাকি। দুর্গন্ধে খেতে পারি না, জানালা খুলতে পারি না। আমরা এখানে ভাগাড় চাই না।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত মিশনের রাজশাহী ডিনারির অঞ্চল পালক রেভারেন্ড দানিয়েল মণ্ডল বলেন, সামনে আমাদের নার্সিং ট্রেনিং ইনস্টিটিউট। পাশে হাসপাতাল। এখানে ভাগাড়ের দুর্গন্ধে টেকা যায় না। আবাসিক কোয়ার্টারে ১০০ মেয়ে থাকে। তাঁদের ভীষণ কষ্ট হয়। পাশেই আমাদের অধ্যক্ষের কার্যালয়। তিনিও বসতে পারেন না। একটু দূরে গির্জা। সেখানেও দুর্গন্ধ পৌঁছে যায়। তাই আমরা এটি বন্ধের দাবি জানাচ্ছি। অন্তত হাসপাতালের সামনে তো কোন ভাগাড় হতে পারে না।
এসটিএস নির্মাণ বন্ধের দাবি জানিয়ে স্থানীয় বাসিন্দা মনোয়ার করিম বলেন, রাজশাহী শহর সুন্দর। মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন শহরটাকে সুন্দরভাবে সাজাচ্ছেন। কিন্তু সিটি করপোরেশনের কিছু অদক্ষ কর্মকর্তা বিতর্কিত পরিকল্পনা গ্রহণ করে জনভোগান্তি সৃষ্টি করছে। এটি তার সবচেয়ে বড় উদাহরণ।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বাড়িতে বসে খেতে পারি না। দুর্গন্ধে বমি আসে। বর্ষায় পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে যায়। এই ভাগাড়টিই আমরা অন্যত্র সরানোর দাবি জানাচ্ছিলাম। এখন উল্টো স্থায়ী ভাগাড় করা হচ্ছে।
ঠিকাদার মামুনুর রশীদ বাচ্চু বলেন, আমার তো কিছু যায় আসে না। জনগণ বাধা দিয়েছে, আমি সিটি করপোরেশনকে জানিয়েছি। প্রকৌশলী এসেছেন। এসটিএস হবে কিনা সেটা তিনিই দেখবেন।
রাসিকের উপ-সহকারী প্রকৌশলী সজিবুর রহমান বলেন, এই জায়গাটি সিটি করপোরেশনের। সিটি করপোরেশন প্রয়োজন মতো যে কোনো কিছু নির্মাণ করতে পারে। এখন এখানে ২৫ লাখ টাকায় এসটিএস নির্মাণ করা হচ্ছে। এসটিএস খোলা ভাগাড় না হওয়ায় দুর্গন্ধ ছড়াবে না বলেও আশ্বাস দেন তিনি।