‘আগের বছরগুলোতে আমি সারা দিন কাজ করে প্রতিদিন ৪০০-৫০০ টাকা রোজগার করে সংসার চালাতাম। এ বছর মাছের অভাবে বেকার দিন কাটাচ্ছি। কোনো কাজ নাই।’ কথাগুলো পাবনার চাটমোহর উপজেলার নিমাইচড়া ইউনিয়নের নিমাইচড়া গ্রামের শুঁটকি তৈরির শ্রমিক রহিমা বেগমের। চলনবিলে পর্যাপ্ত মাছ না পাওয়ায় শুঁটকির অসংখ্য চাতাল বন্ধ হয়ে গেছে। এতে শুধু রহিমা নন, তাঁর মতো কয়েক শ শ্রমিকের আয় বন্ধ হয়ে গেছে। অনেক কষ্টে তাঁদের দিনাতিপাত করতে হচ্ছে।
চলনবিলটি উত্তরাঞ্চলের নাটোর, সিরাজগঞ্জ ও পাবনা জেলার প্রায় ১১৫০ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তীর্ণ। এটি মূলত অনেক ছোট বিলের সমষ্টি। বর্তমানে বিলটিতে পলিমাটি জমার ফলে এর আকার সংকুচিত হয়ে এসেছে। বিলটির আয়তন শুরুতে আরও বেশি ছিল। বড় আকারের বিলগুলোর বেশির ভাগই পাবনায় অবস্থিত। এখানে দেশি প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়। বিল শুকিয়ে এলে সাধারণত অক্টোবর-নভেম্বর মাসে সেই মাছ ধরে শুঁটকি করা হয়।
সম্প্রতি সরেজমিনে পাবনার চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া ও ফরিদপুর উপজেলা ঘুরে অনেক শুঁটকির চাতাল বন্ধ দেখা যায়। কোথাও কোথাও শুঁটকি উৎপাদন হলেও তা বিগত বছরের তুলনায় কম বলে দাবি করেন শ্রমিকেরা।
চাটমোহরের বিলচলন ইউনিয়নের নটাবাড়িয়া গ্রামের শুঁটকি ব্যবসায়ী জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘চলনবিল এলাকায় এবার মাছ নেই বললেই চলে। বিলে যে মা মাছ এসেছিল, মৌসুমের শুরুতেই চায়না দুয়ারি জাল দিয়ে তা নিধন করা হয়। এবার অগ্রহায়ণ মাসেই মাছসংকট প্রকট আকার ধারণ করে।’
একই উপজেলার নিমাইচড়া ইউনিয়নের চিনাভাতকুর গ্রামের ব্যবসায়ী কুমারী বীথি রানী বলেন, ‘১০ বছর ধরে মাছ শুকানোর কাজ করি। এবারের মৌসুমে ১৫ দিন ধরে শুকানোর জন্য কোনো মাছ পাইনি। যে সামান্য মাছ বাজারে আসে, তার দাম অনেক বেশি।’
ভাঙ্গুড়া উপজেলার কৈডাঙ্গা গ্রামের শুঁটকি ব্যবসায়ী জুলহাস আলী বলেন, ‘দিলপাশার, পুইবিল, আদাবাড়িয়া বিল, দত্তখারুয়া বিলে একসময় প্রচুর মাছ পাওয়া যেত। কিন্তু অবৈধভাবে চায়না দুয়ারি জাল দিয়ে মা মাছসহ অন্যান্য মাছ শিকার করার কারণে দেশীয় প্রজাতির মাছের উৎপাদন ও প্রজনন কমে গেছে।’
চাটমোহরের জ্যেষ্ঠ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আব্দুল মতিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘চায়না দুয়ারি জাল দিয়ে মাছ শিকারের ফলে সংকট দেখা দিয়েছে। এবার জেলেরা অবৈধ সুতি জাল
স্থাপন করতে না পারায় নদ-নদী হয়ে মাছ ভাটিতে চলে যাওয়ায় সংকট চলছে।’
পাবনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা দীপক কুমার পাল বলেন, ‘বর্তমানে অবৈধ সুতি জাল দিয়ে মাছ শিকার বন্ধ থাকায় সংকট দেখা দিয়েছে।’