নীলফামারী জেলার ডিমলা উপজেলার আদর্শ পাড়া গ্রামের একাদশী রায় এখন পরিচিত ‘রায় রুপন্তী ভার্মি কম্পোস্ট’-এর সফল উদ্যোক্তা হিসেবে। স্বামীর সামান্য আয়ের ওপর নির্ভরশীলতা কাটিয়ে পরিবেশবান্ধব কেঁচো সার (ভার্মি কম্পোস্ট) উৎপাদন করে তিনি কৃষি উদ্যোক্তা হিসেবে নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তাঁর এই উদ্যোগ শুধু পরিবারের জন্য আয়ের গুরুত্বপূর্ণ উৎসই তৈরি করেনি, স্থানীয় কৃষি অর্থনীতিতেও এনেছে নতুন মাত্রা।
একাদশী রায় জানান, একসময় দিনমজুর স্বামীর আয়ে সংসার চালানো কঠিন ছিল। কিন্তু গত বছর কৃষি অফিসের প্রশিক্ষণ নিয়ে তিনি কেঁচো সার উৎপাদন শুরু করেন। প্রথমে মাত্র ২টি রিং দিয়ে শুরু করলেও বর্তমানে তাঁর খামারে রয়েছে ১২টি রিং ও ৪টি বড় হাউস।
একাদশী রায় বলেন, ‘আগে অভাবে দিন কাটত। এখন প্রতি মাসে আমার খামার থেকে প্রায় ৪০ মণ সার উৎপাদিত হয়, যা বিক্রি করে মাসে প্রায় ৪০ হাজার টাকা আয় করছি। আমার কাজের মাধ্যমে পরিবেশের ক্ষতি কমানো যাচ্ছে এবং কৃষকেরাও সাশ্রয়ী ও বিষমুক্ত সার পাচ্ছেন।’
একাদশীর উৎপাদিত ভার্মি কম্পোস্ট কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। তাঁরা এটিকে সাশ্রয়ী, মাটির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধিকারী এবং ফলন সহায়ক হিসেবে দেখছেন।
স্থানীয় কৃষক অচিন্ত্য কুমার বলেন, রাসায়নিক সারের তুলনায় কেঁচো সার অনেক সাশ্রয়ী। এর ফলে ফলন ভালো হচ্ছে, এবং পরিবেশের ক্ষতিও কমে যাচ্ছে।
আরেক কৃষক হাবিবুর রহমান বলেন, ‘প্রাকৃতিক সার মাটির গুণ বাড়িয়ে দেয়। আমার জমিতে বিশেষ করে বেগুন, টমেটো এবং মরিচের ফলন আগের তুলনায় অনেক ভালো হয়েছে।’
কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, ভার্মি কম্পোস্ট তৈরিতে কোনো রাসায়নিক উপাদান ব্যবহার করা হয় না। ১৫ দিনের পুরোনো গোবরকে কেঁচো খেয়ে যে মল ত্যাগ করে, তা থেকেই তৈরি হয় এই সার।
ডিমলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মীর হাসান আল বান্না বলেন, ‘আমরা স্থানীয় কৃষকদের কেঁচো সার উৎপাদনে উৎসাহিত করছি। এর ফলে কৃষকেরা লাভবান হচ্ছেন, আর কৃষি ক্ষেত্রে নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি হচ্ছে। একাদশী রায়ের সাফল্য স্থানীয় অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।’
উপজেলা কৃষিবিদ আবু নোমান সায়েম জানান, ভার্মি কম্পোস্ট সব ধরনের ফসলে ব্যবহার করা যায়। এটি মাটির উর্বরতা শক্তি বজায় রাখে এবং বিষমুক্ত খাদ্য উৎপাদনে সহায়ক।