ঘরে খাবার নেই। তাই সকালে অটোরিকশা নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে ছিলেন চালক আল আমিন (২৮)। বলে এসেছিলেন বাজার করে বাড়ি ফিরে দুপুরে স্ত্রী-সন্তানসহ বৃদ্ধ মা-বাবার সঙ্গে খাবার খাবেন। এক সঙ্গে আর খাওয়া হলো না তাঁর। বেপরোয়া গতির বাস পথে তার অটোরিকশাকে ধাক্কা দিলে ঘটনাস্থলেই মারা যান চালক আল আমিনসহ ৭ যাত্রী।
আজ শুক্রবার বিকেল ৪টার দিকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের লাশ ঘরের সামনে বসে ছেলের মৃত্যু শোকে এভাবেই বিলাপ করছিলেন বৃদ্ধ মা আনিছা খাতুন।
আনিছা খাতুন ফুলপুর উপজেলার ভিউ পূর্বপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ছাহের উদ্দিনের স্ত্রী। বর্তমানে পরিবার নিয়ে উপজেলার বালিয়া মোড়ে একটি রুম ভাড়া করে বসবাস করে আসছিলেন। এ সময় তাঁর পাশে বসে কান্না করছিল নিহত আল আমিনের বোন উম্মে কুলসুম।
আনিছা খাতুন বলেন, ‘আমার কোনো বসত ভিটা নেই। স্বামী অসুস্থ হয়ে অনেক দিন ধরে বিছানায় পড়ে আছে। এখন ছেলে আল আমিনই ছিল পরিবারের একমাত্র ভরসা। তার রোজগারেই চলত সংসার। আল আমিন বিয়ে করেছে। ছয় বছর বয়সী লামিয়া ও তিন বছর বয়সী মোবারক নামে তার দুটি শিশু সন্তান রয়েছে।’
ছেলে হারানোর শোকে কাতর মা আনিছা কাঁদতে কাঁদতে আরও বলেন, ‘আমার ছেলে কই গেল? এখন সংসারের বাজার কে করবে? কে আমাদের দেখবে? আল্লাহ গো তুমি আমার ছেলেরে ফিরাইয়া দেও।’
এদিকে দুর্ঘটনার খবর শুনে আলালপুর এসে স্বামী হারানোর শোকে কাঁদতে কাঁদতে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন আল আমিনের স্ত্রী হালিমা খাতুন। তখন স্থানীয়রা তাঁকে পানি ঢেলে সুস্থ করে বাড়ি পৌঁছে দেন।
হালিমা খাতুন বলেন, ‘অভাবের সংসারে টেনেটুনে দিন যেত। আজকে প্রশাসন আমাদের সহযোগিতার কথা বলছে, তা দিয়ে কদিন চলবে। এমন বেপরোয়া গতিতে যেন কারও প্রাণ না যায়। আমার মতো কেউ যেন অল্প বয়সে বিধবা না হয়।’
আজ দুপুর সাড়ে ১১টায় ময়মনসিংহ সদর উপজেলার আলালপুর এলাকায় বাস ও অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে এ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে।