বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে দেশত্যাগে বাধ্য হন শেখ হাসিনা। এই সফলতা পেতে আন্দোলনকারীদের নানা হুমকি, হামলা ও মামলার শিকারের পাশাপাশি জীবন দিতে হয়েছে। এখন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশ পরিচালনা করলেও ময়মনসিংহের বেশ কয়েকজন সমন্বয়ক জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত বলে অভিযোগ করেছেন।
সরকারি চাকরিতে কোটাবৈষম্য নিরসনে সারা দেশের মতো ৬ জুলাই ময়মনসিংহের আনন্দ মোহন কলেজসহ বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ১০-১৫ জন শিক্ষার্থী আন্দোলনে নামেন। শুরুতে তাঁরা কয়েকজন থাকলেও সেই আন্দোলন অবশেষে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভে রূপ নেয়। প্রশাসন এবং আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে আন্দোলনের নগরী হয়ে ওঠে ময়মনসিংহ।
আনন্দ মোহন কলেজের শিক্ষার্থী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক গোকুল চন্দ্র মানিক বলেন, ‘বহু হতাহতের বিনিময়ে আমরা সুন্দর বাংলাদেশ পেয়েছি। শুরুটা স্বল্প পরিসরে হওয়ায় মানুষের হাসি-ঠাট্টার শিকার হয়েছি। প্রশাসন ও আওয়ামী লীগের হুমকি ছিল আন্দোলন অব্যাহত না রাখার। নানাভাবে আমাদের পরিবারকে করা হয়েছে হয়রানি। আজকে স্বৈরাচারী সরকারের কাছ থেকে দেশ স্বাধীন করলেও তার প্রেতাত্মারা প্রকাশ্যে ঘোরাফেরা করায় নিরাপত্তা নিয়ে কিছুটা শঙ্কিত।’
আরেক সমন্বয়ক আব্দুল্লাহ আল নাহিন বলেন, ‘আমরা চাই দেশে গণতন্ত্র ফিরে আসুক, অন্তত মানুষ যেন কথা বলার স্বাধীনতা পায়। যার জন্য জীবনের মায়া ত্যাগ করে দ্বিতীয়বারের মতো দেশকে স্বাধীন করেছি। আমাদের এই অর্জন কোনোভাবেই যেন কলঙ্কিত না হয়, সেদিকে সবাইকে খেয়াল রাখতে হবে। বিগত সময়েও হুমকি আসছে, ভবিষ্যতেও হুমকি আসবে। তবে ছাত্রসমাজ এসব উপেক্ষা করেই বুক ফুলিয়ে সামনের দিকে অগ্রসর হবে।’
সমন্বয়ক আশিকুর রহমান বলেন, ‘এখন আমরা আমাদের ভাইবোন হত্যার বিচার চেয়ে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছি। নানা হুমকি আসছে। এসবে ছাত্রসমাজ ভয় পায় না। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত ব্যক্তিদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথে সামনের সারিতে থেকে আন্দোলন চালিয়ে যাব। আমরা চাই দেশের মানুষ অধিকার ফিরে পাক। এর মধ্যে কোনো অপশক্তি যদি মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে চায়, তাদের শক্ত হাতে দমন করা হবে।’
যোগাযোগ করা হলে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাইমেনুল ইসলাম বলেন, ‘এখন ছাত্র-পুলিশ মিলে দেশটাকে প্রগ্রেসিভ করতে চাই। ছাত্রদের সার্বিক নিরাপত্তায় পুলিশ বদ্ধপরিকর।’
উল্লেখ্য, আন্দোলনে জেলায় চারজন ছাত্র ও একজন কৃষক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছে শতাধিক মানুষ।