শয্যার তুলনায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (মমেক) তিনগুণের বেশি রোগী ভর্তি হওয়ায় ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে রোগী ও তাঁদের স্বজনদের। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অবশ্য বলছে, হাসপাতালটি আস্থার সাক্ষর রাখায় দিন দিন এ হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। ১ হাজার শয্যা বিশিষ্ট ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বৃহত্তর ময়মনসিংহের ৬ জেলা ছাড়াও গাজীপুর, সুনামগঞ্জ এবং রংপুরের রোগীরা চিকিৎসা সেবা নিতে আসেন।
জানা গেছে, হাসপাতালটিতে গড়ে প্রতিদিন ৩০০০-৩২০০ রোগী ভর্তি হয়ে থাকেন। এতে শয্যা সংকটের কারণে মেঝে ও বারান্দায় শুয়ে সেবা নিতে হচ্ছে অনেককে। রোগীদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কষ্টের পরেও হাসপাতালে কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা পেয়ে তাঁরা সন্তুষ্ট।
সেবার মান ধরে রাখায় সারা দেশে ২০১৮-২০২০ সালে পরপর তিন বছর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রথম স্থান অর্জন করে মমেক। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, বেশ কয়েকটি স্থাপনার কাজ চলমান রয়েছে। ২০২৬ সালের মধ্যে সেগুলোর কার্যক্রম শুরু হলে শয্যা সংকটের যে ভোগান্তি সেটি অনেকটাই কমে যাবে।
নেত্রকোনার মদন উপজেলার বাসিন্দা হায়াতুর রহমান জানান, গত তিন দিন ধরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে তাঁর বাবা ভর্তি আছেন। এত রোগীর মধ্যেও সাধ্য অনুযায়ী চিকিৎসকেরা সার্বক্ষণিক সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। তবে শয্যা স্বল্পতার কারণে মানুষকে কষ্ট পেতে হচ্ছে। ওয়ার্ড সংখ্যা বাড়ালে রোগী ও স্বজনদের দুর্ভোগ কমবে।
কুড়িগ্রাম থেকে আসা হাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমি সাত দিন ধরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছি। অনেক লোকজনের আনাগোনার কারণে আমার একটি মোবাইল চুরি হয়ে গেছে। নিরাপত্তা ভালো থাকার পরেও কেন এমন হলো বুঝতে পারছি না।’
ময়মনসিংহ সদর উপজেলার বেগুনবাড়ি এলাকার হাবিবুল ইসলাম ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি আছেন। তিনি বলেন, ‘ময়মনসিংহ মেডিকেল হচ্ছে স্বাস্থ্য সেবার আস্থার প্রতীক। যদিও বেডে সিট না পাওয়ায় মেঝেতে চিকিৎসা সেবা নিতে হচ্ছে। তারপরেও সেবার মানে আমরা খুশি।’
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. ওয়ায়েজ উদ্দিন ফরাজী বলেন, ‘এই অঞ্চলের মানুষের আস্থার প্রতীক এই হাসপাতালের সেবার মান অটুট রাখার জন্য আমরা বদ্ধপরিকর। করোনা থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত সকল চিকিৎসকেরা আন্তরিকভাবে কাজ করছে। সারা দেশে অক্সিজেন সিলিন্ডার সংকট হলেও ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনার রোগীর অনেক চাপ থাকার পরেও কোনো সংকট হয়নি। কোনো মানুষ হাসপাতালে আসতে পারলেই সর্বোচ্চ সেবাটুকু নিয়ে এখান থেকে বের হয়ে যাচ্ছে। সাধারণ রোগীদের বিশ্বাস আমাদের মনোবল আরও সেবার দিক দিয়ে বৃদ্ধি করছে।’
মো. গোলাম কিবরিয়া আরও বলেন, ‘নতুন একটি বিল্ডিং হচ্ছে ১৭ তলা। আগামী ২০২৬ সালে সেটি উদ্বোধন করা হবে। এখানে ৪৬০টি বেড থাকবে। এছাড়াও আরও দুইটি ভবন হচ্ছে। মানুষকে সেবা দিতে সরকার বদ্ধপরিকর। আমরাও সরকারের নির্দেশনা সঠিকভাবে বাস্তবায়নের মাধ্যমে সেবার মান ঠিক রাখার চেষ্টা করছি। সারা দেশে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একটা সুনাম রয়েছে। সেটা সকলের সহযোগিতায় অক্ষুণ্ন রাখতে চাই।’