ময়মনসিংহে অনুষ্ঠিত হয়েছে হাটুরে কবিতার আসর। গতকাল শুক্রবার (২১ নভেম্বর) সমাজ রূপান্তর সাংস্কৃতিক সংঘের উদ্যোগে এই আয়োজন করা হয়। নগরীর জয়নুল উদ্যানের তেঁতুলতলায় বিকেল সাড়ে ৫টায় এই আসর শুরু হয়ে চলে রাত ৯টা পর্যন্ত।
হাটুরে কবিতা হলো এক প্রকারের দীর্ঘ ও সুর করে পড়া পয়ার ছন্দের কবিতা, যা আগেকার দিনে হাটবাজারে, রেলস্টেশনে, বাস স্টেশনে আসর জমিয়ে, গ্রামের পথে-ঘাটে ঘুরে ঘুরে পথচলতি মানুষকে আনন্দ দিতে পরিবেশিত হতো। চলন্ত লোকাল ট্রেনের কামরায় পরিবেশিত হতো। এটি ‘ভাট কবিতা’ নামেও পরিচিত। এতে সহজ ভাষায় সমসাময়িক ঘটনা, প্রেম, পুরাণ, ঐতিহাসিক বা লোককাহিনির গল্প, সামাজিক বিভিন্ন বিষয়, ধর্ম, নীতিকথা ও মানুষের জীবনযাত্রার নানা বিষয় তুলে ধরা হয়। এই কবিতাগুলো সুরে সুরে পড়া হয়, যা এক বিশেষ আবেদন সৃষ্টি করে। হাটুরে কবিতার সঙ্গে গ্রামীণ জীবন ও সংস্কৃতির গভীর সম্পর্ক রয়েছে।
সমাজ রূপান্তর সাংস্কৃতিক সংঘের সভাপতি ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘আমাদের রয়েছে সমৃদ্ধ লোকজ সংস্কৃতি। যথাযথ সংরক্ষণ ও পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে লোকজ সংস্কৃতির বিভিন্ন মাধ্যম আজ বিলুপ্তির পথে। হাটুরে কবিতা তার একটি। বর্তমান প্রজন্ম জানে না যে হাটুরে কবিতা নামে লোকজ সংস্কৃতির একটি মাধ্যম রয়েছে। সমৃদ্ধ লোকজ সংস্কৃতির সকল মাধ্যমকে টিকিয়ে রাখা অতীব প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি। এই প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেই আমরা হাটুরে কবিতার আসরের আয়োজন করেছি। ভবিষ্যতেও লোকজ সংস্কৃতির বিলুপ্তপ্রায় বিভিন্ন মাধ্যম আমরা এভাবেই প্রজন্মের কাছে তুলে ধরব। আমাদের এই কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।’
আসরে মো. নুরুল ইসলাম, আব্দুর রশিদ সরকার ও মো. খোকন মিয়া বিভিন্ন বিষয়ের হাটুরে কবিতা পরিবেশন করে উপস্থিত দর্শকদের দীর্ঘক্ষণ মাতিয়ে রাখেন। উপস্থিত দর্শকেরা হাটুরে কবিতা শুনে খুবই উচ্ছ্বসিত হন। বিলুপ্তপ্রায় সুস্থধারার লোকজ সংস্কৃতির এই মাধ্যম যাতে হারিয়ে না যায়, সে জন্য সরকার, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, সংস্থা, সংগঠন, ব্যক্তিকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তাঁরা।