হোম > সারা দেশ > ময়মনসিংহ

রওশনই সোহেলের একমাত্র স্ত্রী নন, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার তথ্যও ভুয়া

সাইফুল আলম, ত্রিশাল (ময়মনসিংহ) ও আল-মামুন বিশ্বাস, গোমস্তাপুর (চাঁপাইনবাবগঞ্জ) 

বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল সোহেল ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন রওশনের প্রেম কাহিনি। ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশালের এই দম্পতিকে নিয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকেও খোঁজখবর নেওয়া হয়েছে বলে সাংবাদমাধ্যমে খবর এসেছে। 

কিন্তু অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসছে ভিন্ন তথ্য। সোহেলের দেওয়া তথ্যের মিল পাওয়া যাচ্ছে না। তাঁর আরেকটি স্ত্রী ও সন্তানের সন্ধান পাওয়া গেছে। এমনকি তাঁর প্রকৃত নাম সোহেল নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার তথ্যও সঠিক নয়। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ত্রিশালের আলোচিত রওশনের স্বামী সোহেলের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার গোমস্তাপুর উপজেলা বাঙ্গাবাড়ী ইউনিয়নের শ্যামপুর গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের মৃত আব্দুল হামিদের ছেলে। সোহেলের আসল নাম মোখলেসুর রহমান বকুল। তাঁর গোমস্তপুরে আরও একটি পরিবার আছে। সেখানে তাঁর স্ত্রী, তিন ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। 

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার গোমস্তাপুর উপজেলা বাঙ্গাবাড়ী ইউনিয়নের বাসিন্দারা জানান, মোখলেসুর রহমান বকুল (সোহেল) ছোটবেলা থেকে সন্তোষপুর বাজার এলাকায় চায়ের দোকান করতেন। সবার সঙ্গে মিষ্টি করে কথা বলতেন। 

তাঁরা জানান, ২০ বছর আগে একই এলাকার সন্তোষপুর গ্রামের বাসিন্দা সাজ্জাদ আলীর মেয়ে শুরাতনকে বিয়ে করেন বকুল। তাঁরা সুখেই ছিলেন। কিছুদিন পর অভাব অনটনের পড়েন। বিভিন্ন জনের কাছে ধার-দেনা করতে থাকেন। বকুল ভয়ানক ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন। হঠাৎ এলাকা থেকে লাপাত্তা হয়ে যান। ১৫ বছর পর টিভিতে তাঁকে দেখে বিস্মিত হয়ে গেছে তাঁরা। তাঁর আগের ও বর্তমান পরিস্থিতি এলাকায় আলোচনার কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। সন্তোষপুর এলাকায় বকুলের স্ত্রীসহ তিন ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। চায়ের দোকানটি এখনো আছে। তাঁর ছেলেরা সেটি চালায়। 

এলাকাবাসী আরও জানান, বকুল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে কখনো পড়েননি। তবে স্কুলে গেছেন। 

এ বিষয়ে কথা হয় গোমস্তাপুর উপজেলায় বকুলের স্ত্রী শুরাতন বেগমের সঙ্গে। তিনি জানান, আজ থেকে ২০ বছর আগে তাঁদের বিয়ে হয়।। স্বামী নিখোঁজ বলেই এত দিন জানতেন। তাঁদের বিবাহ বিচ্ছেদও হয়নি। ১৫ বছর পরে স্বামীর খোঁজ পেয়ে কিছুটা বিস্মিত শুরাতন বেগম। জানান, তাঁর স্বামীর নাম সোহেল নয়, বকুল। 

শুরাতন আরও জানান, প্রায় ১৫ বছর আগে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ে তাঁর স্বামী তাঁদের রেখে চলে যান। যোগাযোগের জন্য একটা মোবাইল নম্বরও দিয়ে যান। এরপর থেকে তাঁর খোঁজ পাননি। তিনিও আর খোঁজখবর নেননি। খেয়ে না খেয়ে তিন ছেলে ও এক মেয়েকে বড় করেছেন। ক্ষোভের সঙ্গে শুরাতন বলেন, তিনি (বকুল) দূরে থাকলেই ভালো। স্বামীর খবর টিভিতে দেখেছেন বলে জানান তিনি। 

সোহেলের ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ুয়া ছোট ছেলে নীরব আলী বলে, ‘শুনেছি আমি যখন পেটে ছিলাম তখন বাবা এলাকা থেকে চলে যায়। কখনো তাকে দেখিনি। বাবার স্নেহ ভালোবাসা পাইনি। শুধু মার কাছে গল্প শুনেছি। আজ টিভি ও মোবাইল ফোনে দেখছি এটা আমার বাবা।’ 

সোহেলের বড় ছেলে শিহাব জানান, ছোট বেলায় মা ও তাদের রেখে চলে যান তাঁদের বাবা। কখনো খোঁজ নেননি তিনি। বাবা চলে যাওয়ার পর অসহায় হয়ে পড়েন মা। অনেক কষ্ট করে তাঁদের বড় করেছেন। মা তাঁদের বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন। ওই বাজারে চায়ের দোকান করে সংসার চালাচ্ছেন তিনি। তাঁদের একমাত্র বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। তিন ভাই মাকে নিয়ে ভালোই আছেন। 

এদিকে প্রথম স্ত্রী ও পরিবার নিয়ে কথা হয় বকুল ওরফে সোহেলের সঙ্গে। রওশনের প্রতি ভালোবাসা থেকেই নিরুদ্দেশ হয়েছিলেন বলে দাবি করেন তিনি। সোহেলের দাবি, রওশনকে বিয়ের পর বিষয়টি আগের স্ত্রীকে জানিয়েছিলেন। একসঙ্গে সবাইকে নিয়ে থাকতে চেয়েছিলেন। কিন্তু প্রথম স্ত্রী রাজি না হওয়ায় তিনি আর ফিরে যাননি। তাঁরাও আর তাঁর খোঁজ করেননি। রওশনকে নিয়ে এই গ্রামেই ১৪ বছর পার করেছেন তিনি। 

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন বলে গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে। এ সত্যাসত্য জানতে চাইলে সোহেল বলেন, ‘আমি কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করিনি। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছি। এ মিথ্যাটুকু বলার জন্য সবার কাছে আমি ক্ষমা চাচ্ছি।’ তবে নাম গোপন কেন করেছেন তা জানা যায়নি। 

স্বামীর আগের বিয়ে সম্পর্কে আগে থেকে জানতে কি না এ প্রশ্নে সোহেলের দ্বিতীয় স্ত্রী রওশন বলেন, ‘স্বামীর অতীত সম্পর্কে কিছুই জানতে চাই না আমি। জানতে আগ্রহীও নই। এই সংসারেই আমি সুখী। স্বামীর ভালোবাসায় আমি কৃতজ্ঞ।’ 

রওশন আরও বলেন, ‘আমার মতো প্রতিবন্ধী অচল একটা মানুষকে নিয়ে সে ১৪টি বছর পার করেছে। কখনো সে আমার এ অক্ষমতা নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেনি। অনেক মানুষের অনেক কথা শুনেও আমার প্রতি, আমার মেয়ের প্রতি তাঁর কোনো অবহেলা দেখিনি।’ 

রওশনের প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা হয়। প্রতিবেশীরা জানান, এই ১৪ বছরের মধ্যে সোহেল-রওশনের সংসার জীবনে বড় ধরনের কোনো মনমালিন্য দেখা যায়নি। তাঁদের এই ভালোবাসা দেখে তাঁরা সবাই মুগ্ধ। এত দিনে তাঁদের কারও কখনো মনে হয়নি সোহেল বাজে লোক। রওশনের প্রতি এই ভালোবাসা থেকেই সোহেল আগের পরিবার ছেড়ে এসেছেন বলেই ধারণা এলাকাবাসীর। 

উল্লেখ্য, ১০ টাকা দিয়ে একজনের কাছ থেকে একটি মোবাইল নম্বর পেয়েছিলেন বকুল ওরফে সোহেল। গণমাধ্যমকে এমনটাই জানিয়েছেন তিনি। সেই থেকে ভালোবাসার শুরু, তা আজ ১৪ বছর পেরিয়েছে। প্রতিদিনের কথোপকথনে সম্পর্ক গভীর হয়। রওশন শুরুতেই জানিয়েছিলেন তিনি শারীরিক প্রতিবন্ধী। 

রাজশাহীর গোদাগাড়ীর বকুল ওরফে সোহেল মিয়া বলেন, ২০০৭ সালে পরিবারের অমতে বিয়ে করেন রওশনকে। কিন্তু জন্মগতভাবে বিকলাঙ্গ রওশন আরাকে মেনে নেয়নি তাঁর পরিবার। পরে রওশনকে নিয়ে ময়মনসিংহে বসবাস শুরু করেন। স্ত্রীকে পিঠে নিয়ে সোহেলের চলাফেলার ছবি ও ভিডিও এখন সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল।

দীপু দাস হত্যা: নিথর দেহ গাছে ঝোলানোর ‘মূল হোতা’ গ্রেপ্তার

গফরগাঁওয়ে মনোনয়ন দ্বন্দ্বে নাশকতা, তিন শতাধিক আসামি করে দুই মামলা

ভালুকায় সহকর্মীর গুলিতে আনসার সদস্য নিহত, অভিযুক্ত গ্রেপ্তার

ময়মনসিংহ বিভাগ: অবৈধভাবে চলছে ৪৫৯ ইটভাটা

ময়মনসিংহে সদস্যপদ স্থগিত জামায়াত নেতার মনোনয়নপত্র দাখিল

ত্রিশালের এমপি হতে চান ভিক্ষুক আবুল মুনসুর, জমা দিলেন মনোনয়নপত্র

গফরগাঁওয়ে ট্রেন লাইনচ্যুত: গতি কম থাকায় রক্ষা পেয়েছেন যাত্রীরা

ভালুকায় শ্রমিকবাহী বাস উল্টে এক শ্রমিক নিহত, আহত ২০

রেললাইন খুলে ফেলেছে দুর্বৃত্তরা, ট্রেন লাইনচ্যুত হয়ে ঢাকা-ময়মনসিংহ রেল যোগাযোগ বন্ধ

বিএনপি থেকে পদত্যাগ করলেন সাবেক এমপি শাহিন, স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা