হোম > সারা দেশ > নেত্রকোণা

ভাঙারি কুড়িয়ে বড় করেছিলেন ছেলেকে, গুলিতে শেষ সব স্বপ্ন

সাইফুল আরিফ জুয়েল, নেত্রকোনা

ঢাকা-চট্টগ্রাম রোডে কাঁচপুর সেতুর কাছে ঠিকাদারের অধীনে ওয়াসার পানির লাইন মেরামতের কাজ করতেন জাকির হোসেন (২৪)। কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সংঘর্ষ ও সারা দেশে কারফিউ জারি হওয়ায় বাসায় ফিরতে পারছিলেন না। তাই সেখানেই একটি ভবনে থেকে কাজ করে যাচ্ছিলেন। গত ২১ জুলাই রোববার বিকেলে কাজ শেষে সহকর্মীদের সঙ্গে পাশের একটি দোকানে চা-নাশতা খেতে যান জাকির। কিন্তু হঠাৎ একটি গুলি এসে লাগে জাকিরের পিঠে। গুলি লাগার পর দৌড়ে পাশের একটি গলিতে গিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। সেখানেই মৃত্যু হয় তাঁর। 

পরে অন্য সহকর্মীরা দ্রুত লাশ নিয়ে যান জাকিরের মায়ের কাছে বাড্ডা নতুন বাজার এলাকায়। মা রাতেই লাশ নিয়ে রওনা হন গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার বাকলজোড়া ইউনিয়নের বাকলজোড়া গ্রামে। পরদিন সোমবার সকাল ১০টায় জানাজা শেষে দাফন করা হয় জাকির হোসেনের লাশ। 

জাকিরের নিহত হওয়ার খবর শুনে রোববার দুর্গাপুর উপজেলার বাকলজোড়া গ্রামে গেলে এসব তথ্য জানান মা মিছিলি বেগম। 

জাকির হোসেন নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার বাকলজোড়া ইউনিয়নের বাকলজোড়া গ্রামের মৃত ফজলু মিয়ার ছেলে। ফজলু মিয়া দরিদ্র দিনমজুর ছিলেন। অন্যর বাড়িতে বসবাস করতেন। জাকিরের বয়স যখন ৫ বছর, তখন মারা যান তিনি। 

ছেলের কাপড় হাতে নিয়ে বিলাপ করতে করতে মিছিলি বেগম জানান, ভিটেমাটি না থাকায় ছোট জাকিরকে নিয়ে রাজধানীর বাড্ডা নতুন বাজার এলাকায় চলে যান। সেখানে গিয়ে রাস্তা থেকে ভাঙারি কুড়িয়ে, মানুষের বাসায় কাজ করে ছেলেকে বড় করতে থাকেন। ১৫-১৬ বছর বয়স হওয়ার পর কাজ শুরু করেন জাকির। এতে দুঃখ ঘুচতে শুরু করে তাঁর। ভাঙারি কুড়ানো বন্ধ করে দেন। ছেলের আয়ের টাকা দিয়ে সম্প্রতি গ্রামে ঘর তৈরির জন্য ১৫ শতক জায়গা কেনেন। থাকার জন্য একটা ঘর নির্মাণের পরিকল্পনাও করছিলেন মিছিলি বেগম। কিন্তু হঠাৎ একটি গুলি জাকিরের জীবন কেড়ে নিল। মিছিলির স্বপ্ন শেষ হয়ে গেল।  

মিছিলি বেগম বলেন, ‘আন্দোলন শুরুর তিন-চার দিন আগে কাঁচপুর সেতুর কাছে ওয়াসার লাইনের কাজ করতে গিয়েছিল জাকির। ঠিকাদারের অধীনে রোজ হিসেবে কাজ করত। আন্দোলনের কারণে বিপদের ভয়ে বাসায় না ফিরে সেখানেই থেকে যায়। ফোনে প্রতিদিন বলত, মা আন্দোলন চলছে, গুলি চলছে, বাসায় আসলে রাস্তায় গুলি লাগতে পারে ৷ রোববার বিকেলে সহকর্মীদের সঙ্গে পাশের একটি চায়ের দোকানে চা-নাশতা খেতে যায়। দোকানের সামনে যেতেই পাশের একটি উঁচু বিল্ডিং থেকে একটি গুলি এসে জাকিরের পিঠে বিদ্ধ হয়। দৌড়ে সে একটা গলিতে গিয়ে পড়ে যায় মাটিতে। তার নাক-মুখ দিয়ে রক্ত বের হতে থাকে। সেখানেই মারা যায় জাকির। সোমবার ঘরের জন্য কেনা জায়গাটাতেই জাকিরকে দাফন করা হয়।’  

মিছিলি বেগম আরও বলেন, ‘স্বামীর মৃত্যুর পর ছেলের দিকে চেয়ে জীবনটা পার করে দিয়েছি। ছেলে বড় হলে দুঃখ ঘুচবে সেই আশায় ছিলাম। ভাঙারি কুড়িয়ে ছেলেকে বড় করেছি। ছেলে বড় হয়েছে, দুঃখও ঘুচে যাচ্ছিল। কিন্তু একটা গুলি এসে আমার সব স্বপ্ন আশা ভেঙে দিয়েছে। আমার আর কোনো আশা নেই। আমার পৃথিবী শেষ হয়ে গেছে। এভাবে বেঁচে থাকারও আর মানে নেই। আল্লাহ যেন এর বিচার করেন।’  

প্রতিবেশী হাবিবুর রহমানসহ অন্যরা জানান, মিছিলির জীবনের গল্পটা ভীষণ করুণ। যে ছেলের জন্য জীবনটা উজাড় করে দিয়েছেন, সেই ছেলেকে বিনা দোষে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এখন তাঁর আর কোনো অবলম্বন রইল না। এত কষ্ট সহ্য করে মানুষ কীভাবে বাঁচে জানা নেই। 

নিহত জাকিরের খালতো ভাই এন্টাস মিয়া বলেন, ‘জাকির প্রায় সময়ই কল করে আমাকে সাবধানে থাকার পরামর্শ দিত। অথচ এখন তার মৃত্যু দেখতে হলো।’  

দুর্গাপুর থানার ভরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উত্তম চন্দ্র দেব বলেন, মানুষের কাছে শুনেছি জাকির নামের একটি ছেলে ঢাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছে। তবে অফিশিয়ালি কিছু জানানো হয়নি এ বিষয়ে।

ময়মনসিংহ বিভাগ: অবৈধভাবে চলছে ৪৫৯ ইটভাটা

ময়মনসিংহে সদস্যপদ স্থগিত জামায়াত নেতার মনোনয়নপত্র দাখিল

ত্রিশালের এমপি হতে চান ভিক্ষুক আবুল মুনসুর, জমা দিলেন মনোনয়নপত্র

গফরগাঁওয়ে ট্রেন লাইনচ্যুত: গতি কম থাকায় রক্ষা পেয়েছেন যাত্রীরা

ভালুকায় শ্রমিকবাহী বাস উল্টে এক শ্রমিক নিহত, আহত ২০

রেললাইন খুলে ফেলেছে দুর্বৃত্তরা, ট্রেন লাইনচ্যুত হয়ে ঢাকা-ময়মনসিংহ রেল যোগাযোগ বন্ধ

বিএনপি থেকে পদত্যাগ করলেন সাবেক এমপি শাহিন, স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা

মনোনয়ন পরিবর্তনের দাবিতে ফের ঢাকা-ময়মনসিংহ রেলপথ অবরোধ

ময়মনসিংহে মাজার ভাঙচুর ও মলমূত্র নিক্ষেপের ঘটনায় মামলা

বিএনপির প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে রেলপথ অবরোধ-আগুন, ট্রেন চলাচল বন্ধ