মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার কদমবাড়ি ইউনিয়নের কলাবাড়ি গ্রামের অসীম গাইন বিভিন্ন সরকারি নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের উত্তর বিক্রি করে হয়েছেন কোটিপতি। গড়ে তুলেছে বাগানবাড়ি। কিনেছেন বহু জমি। ব্যাংকেও আছে বহু টাকা।
বাবা দরিদ্র কৃষক হলেও মাত্র পাঁচ বছরের ব্যবধানে তিনি এই সম্পত্তির মালিক হয়েছেন। এদিকে অসীম গাইন হঠাৎ এত সম্পত্তির মালিক হওয়ায় দুদক অনুসন্ধানে নেমেছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার কদমবাড়ি ইউনিয়নের কলাবাড়ি গ্রামের মৃত ফটিক চন্দ্র গাইনের ছেলে অসীম গাইন (৪৮)। বাবা ছিলেন দরিদ্র কৃষক। দিন আনে দিন খান, এমনভাবেই চলত তাঁদের সংসার। গ্রামে তিনি ডিশ ব্যবসা করতেন। মাঝে মাঝে দালালদের মাধ্যমে বিদেশে লোকও পাঠাতেন অসীম গাইন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি বছরের ২৯ মার্চ মাদারীপুরের ১৮টি কেন্দ্রে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। সেই পরীক্ষায় অর্থের বিনিময়ে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে প্রশ্নপত্র ফাঁস ও উত্তরপত্র সরবরাহ করে একটি চক্র।
এ সময় পুলিশ ৮ জনকে আটক করে। এ ছাড়া ইলেকট্রিক ডিভাইস ও একাধিক মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। পরে এই ঘটনার পরদিন ৩০ মার্চ মাদারীপুর সদর উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের উচ্চমান সহকারী রেজাউল করিম বাদী হয়ে অসীম গাইনসহ ১০ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ১৫ জনের বিরুদ্ধে মাদারীপুর সদর মডেল থানায় মামলা করেন।
পরে অভিযান চালিয়ে অসীম গাইনের সহযোগী রনি বিশ্বাসকে গ্রেপ্তার করা হয়। তবে এখন পর্যন্ত পলাতক অসীম গাইনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারেননি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা জানান, অসীম গাইন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষাসহ সরকারি চাকরি নিয়োগ অনেক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনার সঙ্গে জড়িত। একসেট প্রশ্ন উত্তরসহ দেওয়ার শর্তে ৫ থেকে ১৫ লাখ টাকা নিতেন। মোবাইল ফোনে মেসেজ ও হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে উত্তর পাঠিয়ে দিতেন। সবচেয়ে বেশি টাকা নিয়েছেন গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর ও শরীয়তপুরের বহু প্রার্থীর কাছ থেকে।
অসীম গাইনের বৌদি গৌরি দে বলেন, ‘অসীম গাইনের পারিবারিকভাবে কয়েক বিঘা জমিজমা আছে। তাছাড়া সে দীর্ঘদিন ধরে ডিশলাইন ও ইন্টারনেট ব্যবসা করেন। এ ছাড়া গরু বেচা-কেনাও করতেন। এইসব ব্যবসার আয়ের টাকা দিয়েই সে বাড়ি বানিয়েছেন। সে নির্দোষ। সে কোনো অন্যায় করেনি। তার বিরুদ্ধে একটি চক্র মিথ্যা অপবাদ দিয়েছেন।’
মাদারীপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাসুদ আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এই প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনার কাজের সঙ্গে অসীম গাইন ও তাঁর পরিবারের অন্য সদস্যরাও জড়িত আছে। অসীম ঢাকা থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নেওয়া প্রার্থীদের সঙ্গে লাখ লাখ টাকার চুক্তি করেন। পরে তাঁর অন্য সহযোগীদের নিয়ে উত্তরপত্র মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সরবরাহ করেন। পুরো ঘটনা জেলার গোয়েন্দা পুলিশ নজরদারি রেখেছেন। গোয়েন্দা পুলিশ তদন্তও করছে। দ্রুত প্রশ্নপত্র ফাঁস ও উত্তরপত্র সরবরাহের ঘটনায় মামলার চার্জশিট আদালতে দেওয়া হবে। প্রাথমিকভাবে এই ঘটনার প্রধান অভিযুক্ত অসীম গাইন, তা নিশ্চিত হয়েছে জেলা পুলিশ। এ ছাড়া এটা নিয়ে ঢাকা থেকে আলাদাভাবে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশও কাজ করছে।’