'নির্বাচন আসলে সব প্রার্থী এবং তাঁর সমর্থকেরা কয় সামনে সেতু হবে। মাপজোক করি হামাক দেখায়, আশা দেয়। পরে আর দেখা পাওয়া যায় না। ফির নির্বাচন আসলে দেখা হয়। ওই আগের কথায় কয়। বাপো কথা দিলোং, এবার হইবে। দিন যায়, বছর যায়, সেতু আর হয় না। ২৫ বছর ধরি দেইখলং।' অনেকটা আক্ষেপ আর অবিশ্বাস নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার পশ্চিম ফুলমতি খাড়াপাড়া গ্রামের বারোমাসিয়া নদীর ইনতুর ঘাটের পূর্ব তীরের বাউল শিল্পী ওমর আলী (৭৬)। শুধু তিনি একা নন, ওই এলাকার ও আশপাশের শাহজালাল, সৈয়দ আলী, সন্তোষ কুমার, মজিবর, নান্নু মুন্সি, একাব্বর আলী, সানাউল হকসহ হাজারো মানুষের একই কথা।
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার বারোমাসিয়া নদীর পূর্ব ফুলমতি-পশ্চিম ফুলমতি সংযোগ সড়কের খাড়াপাড়া ইনতুর ঘাটে সেতুর অভাবে ২০ গ্রামের প্রায় ৬০ হাজার মানুষের ভোগান্তি দিনদিন বাড়ছে। এই হাজারো মানুষের যাতায়াতের একমাত্র পথ জরাজীর্ণ একটি বাঁশের সাঁকো। গ্রামবাসীর চাঁদার টাকা দিয়ে দুই বছর আগে ২৫০ ফুট দৈর্ঘ্যের বাঁশের সাঁকোটি নির্মাণ করা হয়। এসব গ্রামের মানুষের নিত্যদিনের চাষাবাদ, কৃষিপণ্য বেচাকেনা, চিকিৎসা ও শিক্ষার্থীদের স্কুল-কলেজে যাতায়াত, মুমূর্ষু রোগী আনা-নেওয়াসহ সবকিছুর ভরসা এই বাঁশের সাঁকো। কিন্তু এখন এই সাঁকোর অবস্থা এতটাই নাজুক যে যেকোনো সময় ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। তাই একরকম আতঙ্কের মাঝেই বাস করছে এই এলাকার মানুষ। কিন্তু তাও টনক নড়ছে না স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের।
আনন্দবাজার এলাকার বাসিন্দা আব্দুর রহিম মিয়া বলেন, জনপ্রতিনিধিরা যুগ যুগ ধরে এই এলাকায় সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে চলেছেন, কিন্তু বাস্তবায়ন হয়নি কিছুই। নেতাদের এসব কথার বেশি ফুলঝুরি হয় ভোটের আগে। ভোট শেষ হলে আর কেউই এই সেতুর বিষয়ে মাথা ঘামায় না। তাই চরম ভোগান্তির মধ্য দিয়ে আমাদের দিন পার করতে হচ্ছে। পশ্চিম ফুলমতির বারোমাসিয়া নদীতে একটি ব্রিজ হলে হাজার হাজার লোক চরম ভোগান্তি থেকে রেহাই পেত।
এ বিষয়ে কুড়িগ্রাম সদর আসনের সংসদ সদস্য জনাব পনির উদ্দিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, `এরই মধ্যে ব্রিজের স্থানটি পরিদর্শন করা হয়েছে। জনদুর্ভোগ লাঘবে এই সেতু নির্মাণের জন্য মন্ত্রণালয়ে ডিও (ডিমান্ড) লেটার দেওয়া হয়েছে। করোনা মহামারির কারণে এত দিন বিষয়টি আটকে থাকলেও এখন গতি আসবে বলে আশা করছি।'
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) উপজেলা প্রকৌশলী আসিফ ইকবাল রাজীব বলেন, সেতুর বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য প্রাক্কলন তৈরি করে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বরাবর পাঠানো হয়েছে, যা অনুমোদন হলে এই এলাকায় সেতু তৈরির কাজ বাস্তবায়ন করতে সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে।