কুড়িগ্রামের চার আসনে এবার বড় ফ্যাক্টর হতে পারে জাতীয় পার্টির (জাপা) ভোটব্যাংক। দলটির নেতারা বলছেন, আগামী নির্বাচনে তাঁদের অংশ নেওয়ার বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত নয়। সে ক্ষেত্রে শেষ পর্যন্ত দলটি ভোটে অংশ না নিলে তাদের ভোটে নজর থাকবে দুই বড় দল বিএনপি ও জামায়াতের। আবার জাপা নির্বাচনে গেলে আওয়ামী লীগ সমর্থকদের একাংশকে কাছে পেতে পারে তারা।
২০১৪ সালের নির্বাচনে জেলার চার আসনের তিনটিতেই বিজয়ী হয় জাপা। অন্যটি পায় জাতীয় পার্টি-জেপি (মঞ্জু)। তবে ২০১৮ সালে এ চিত্র বদলে যায়। ওই বছর চার আসনের তিনটি আওয়ামী লীগের দখলে যায়। শুধু কুড়িগ্রাম-২ আসনটি ধরে রাখতে সমর্থ হয় জাপা। ২০২৪ দুটিতে আওয়ামী লীগ ও একটিতে জাপা প্রার্থী বিজয়ী হন। অন্যটিতে জয় পান স্বতন্ত্র প্রার্থী।
জুলাই অভ্যুত্থানের পর উদ্ভূত বাস্তবতায় আগামী নির্বাচনে এখানে বিএনপি ও জামায়াত দুই দলই আশাবাদী। জেলা জামায়াতের আমির মাওলানা আব্দুল মতিন ফারুকী বলেন, ‘আমরা ভোটারদের কাছে যাচ্ছি। চারটি আসনেই বিজয়ী হব ইনশা আল্লাহ।’
জেলা বিএনপির সদস্যসচিব সোহেল হোসনাইন কায়কোবাদ বলেন, ‘বড় দল হিসেবে বিএনপিতে কিছু মতবিরোধ থাকলেও চারটি আসনে দলীয় প্রার্থীদের বিজয়ী করতে নেতা-কর্মীরা কাজ করে যাচ্ছেন। উন্নয়নের স্বার্থে জনগণ আমাদের প্রার্থীদের বিজয়ী করবেন ইনশা আল্লাহ।’
কুড়িগ্রাম-১: নাগেশ্বরী ও ভূরুঙ্গামারী নিয়ে গঠিত আসনটিতে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী সাবেক এমপি সাইফুর রহমান রানা। জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী আনোয়ারুল ইসলাম। জাপার পাঁচবারের এমপি মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাকের নির্বাচনে অংশগ্রহণের গুঞ্জন রয়েছে। সে ক্ষেত্রে এখানে ত্রিমুখী লড়াই হতে পারে। মোস্তাক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘জাপার নির্বাচনে অংশ নেওয়ার মতো পরিস্থিতি নেই। তবে শেষ পর্যন্ত অংশ নিলে বৃহত্তর রংপুরে আমাদের বিজয় ঠেকানোর মতো দল নেই।’ আসনটিতে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী হতে পারেন হারিসুল বারি রনি।
কুড়িগ্রাম-২: জেলার চারটি আসনের মধ্যে এখানে অপেক্ষাকৃত স্বস্তিতে রয়েছে বিএনপি। আসনটিতে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী সোহেল হোসনাইন কায়কোবাদ।
জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী অ্যাডভোকেট ইয়াসিন আলী সরকার। তাঁদের দুজনকেই শক্ত চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে পারেন জাতীয় পার্টির সাবেক এমপি পনির উদ্দিন আহমেদ। ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী হতে পারেন অধ্যক্ষ মো. নূর বখত মিয়া। এনসিপির মনোনয়ন পেতে পারেন ড. আতিক মুজাহিদ।
কুড়িগ্রাম-৩ : উলিপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত আসনটিতে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী দলের সাবেক জেলা সভাপতি তাসভীর উল ইসলাম। জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী ব্যারিস্টার মাহবুবুল আলম সালেহী। ইসলামী আন্দোলন থেকে আলোচনায় রয়েছেন সাবেক এমপি ডা. আক্কাছ আলী সরকার। জাতীয় পার্টি থেকে আব্দুস সোবহান নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন বলে এলাকায় গুঞ্জন রয়েছে। তবে অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে এখানে কিছুটা বেকায়দায় রয়েছে বিএনপি। দলের প্রাথমিক মনোনয়নবঞ্চিত আব্দুল খালেকের অনুসারীরা প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে এলাকায় নানা কর্মসূচি পালন করছেন।
কুড়িগ্রাম-৪: ব্রহ্মপুত্রবিধৌত চিলমারী, রৌমারী ও চর রাজিবপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত এই আসনে বিএনপি ও জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী আপন দুই ভাই। জামায়াতের পক্ষ থেকে অনেক আগেই এখানে মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাককে সবুজ সংকেত দেওয়া হয়। পরে বিএনপি থেকে তাঁর বড় ভাই ও দলের রৌমারী উপজেলা শাখার সাবেক সভাপতি আজিজুর রহমানকে প্রাথমিক মনোনয়ন দেওয়া হয়। তবে এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করছেন দলের আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী মহিলা দলের কেন্দ্রীয় নেত্রী মমতাজ হোসেন লিপির সমর্থকেরা। ইসলামী আন্দোলনের সম্ভাব্য প্রার্থী হাফিজুর রহমানও একই গ্রামের বাসিন্দা। জাপা থেকে রৌমারীর সাইফুর রহমানের নাম শোনা গেলেও এখন পর্যন্ত তাঁকে জনসংযোগ চালাতে দেখা যায়নি।