আবারও ঝালকাঠির কাঠালিয়া উপজেলায় স্কুল শিক্ষার্থীদের পাঠদান বন্ধ রেখে ধানের শীষ প্রতীকের প্রচারণা চালিয়েছেন বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী গোলাম আজম সৈকত।
গতকাল বৃহস্পতিবার উপজেলার আওরাবুনিয়া ইউনিয়নের সবুরেন্নেছা বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় (এস এন গার্লস স্কুল) ও আব্দুস ছোমেদ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে তিনি এ প্রচারণা ও বক্তব্য দেন।
শুধু তা-ই নয়, প্রচারণার ছবি ও ভিডিও বিএনপি নেতা গোলাম আজম সৈকত নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে প্রকাশ করেন। এসব ভিডিওতে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সামনে দাঁড়িয়ে তিনি লিফলেট পড়ে বিএনপির ৩১ দফা ব্যাখ্যা করছেন।
এর আগে তিনি ১ নভেম্বর একইভাবে উপজেলার বলতলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শ্রেণিকক্ষে রাজনৈতিক প্রচার চালান—এ-সংক্রান্ত সংবাদ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশের পর সমালোচনার ঝড় ওঠে।
ভিডিওতে দেখা যায়, আব্দুস ছোমেদ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. জিয়াউল হক মাসুম নিজে বিএনপি নেতা গোলাম আজম সৈকতকে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের সামনে পরিচয় করিয়ে দেন এবং বক্তব্য দেওয়ার জন্য বলেন।
এরপর গোলাম আজম সৈকত শিক্ষার্থীদের ৩১ দফার লিফলেটটি পড়তে বলেন। পরে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘তোমাদের সবাইকে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের পক্ষ থেকে সালাম। তোমরা তো আমাকে চিন...আমার বাড়ি এই কাঠালিয়ায়। ভবিষ্যতে তোমাদের কেউ চাকরি করবে, কেউ ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হবে, কেউ রাজনীতিতেও আসবে।’
স্কুল চলাকালীন প্রচারণার বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক মো. জিয়াউল হক মাসুম বলেন, ‘গোলাম আজম সৈকত বিদ্যালয়ে এসেছিলেন। টিফিন টাইমে আসলেও তাকে রাজনৈতিক প্রচার না করতে নিষেধ করি। কিন্তু তিনি তা উপেক্ষা করেন।’ যদিও পরবর্তীকালে প্রধান শিক্ষক এ সংবাদ প্রকাশ না করার জন্য অনুরোধ করেন।
অপর দিকে সবুরেন্নেছা বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পরেশ চন্দ্র তালুকদার বলেন, ‘বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী গোলাম আজম সৈকত বিদ্যালয় চলাকালীন সময় এসেছিলেন। তখন একটি ক্লাস শেষের ঘণ্টা বেজে ছিল। সে সময় তিনি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শ্রেণিকক্ষে কথা বলেন এবং তাদের হাতে একটি করে লিফলেট দিয়ে বলেন, এটি বাড়িতে নিয়ে তাদের বাবা-মায়ের কাছে পৌঁছে দিতে এবং তার জন্য দোয়া করতে।’
তাঁকে বিদ্যালয় চলাকালে শ্রেণিকক্ষে প্রবেশের ব্যাপারে নিষেধ করা হয়েছিল কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, নিষেধ করা হয়েছিল; কিন্তু তিনি তা উপেক্ষা করেই এ কাজ করেছেন।’
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন অভিভাবক বলেন, ‘এখন মনে হচ্ছে পড়াশোনার পাশাপাশি রাজনৈতিক প্রচারও সিলেবাসে ঢুকে গেছে। কোমলমতি বাচ্চাদের সামনে রাজনৈতিক প্রচারণা গ্রহণযোগ্য নয়।’
জানতে চাইলে গোলাম আজম সৈকত মোবাইল ফোনে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আপনি আমার পেছনে লাগলেন কেন, ভাই? সমস্যাটা কী আপনার? আপনি অন্য কোনো লোক দেখেন না? জামায়াতের ফয়জুল তো প্রত্যেকটি স্কুলে যাচ্ছে; এগুলো আপনার চোখে পড়ে না? আপনার এত জানাজানির কোনো দরকার নেই।’
এরপর তিনি বলেন, ‘আপনি কি জামায়াতে ইসলামী, না কি সাংবাদিকতা করেন? আমার তো মনে হয় আপনি জামায়াতের সঙ্গে জড়িত। আপনার কি আমার রাজনৈতিক ইতিহাস সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই? তাহলে আপনি আমার পেছনে লাগলেন কেন, ভাই?’
গোলাম আজম সৈকত আরও বলেন, ‘আমি কালকে লাঞ্চের সময় গিয়েছিলাম; আপনি সেখানে প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে তাকে ডিস্টার্ব করছেন।’ এ কথা বলে তিনি মোবাইলের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
সনাকের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সত্যবান সেনগুপ্ত আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বিদ্যালয় শিক্ষা অর্জনের স্থান, রাজনীতির নয়। ভবিষ্যতে যেন কেউ এ ধরনের কাজ না করে, তা নিশ্চিত করতে হবে।’
এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মু. আনোয়ার আজীম বলেন, ‘পাঠদান চলাকালে কিংবা বিদ্যালয়ের কার্যক্রম চলাকালীন সময়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক কার্যক্রম কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়; এটি নিয়মবহির্ভূত। এর আগেও এ বিষয়ে শিক্ষকদের সতর্ক করা হয়েছিল।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘আগেও আজকের পত্রিকার মাধ্যমে বিষয়টি জেনে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানিয়েছিলাম। বিদ্যালয়ে পাঠদান চলাকালে রাজনৈতিক কার্যক্রমের কোনো সুযোগ নেই। বিষয়টি সম্পর্কে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছ থেকে প্রতিবেদন চাওয়া হবে। প্রয়োজন হলে এ বিষয়ে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’