গাজীপুরের শ্রীপুরে ২০ টাকায় টিকিট কেটে চায়না ম্যান্ডারিন জাতের বাহারি কমলাবাগান ঘুরে দেখতে দর্শনার্থীদের ভিড় জমে প্রতিদিন। বিশেষ করে শুক্র ও শনিবার উপচে পড়া ভিড়। সারি সারি চায়না কমলায় ভরপুর বাগান দেখে বিমোহিত দর্শনার্থীরা। উদ্যোক্তারাও বেশ আনন্দে আছেন মানুষের এমন আগ্রহে।
উপজেলার বরমী ইউনিয়নের সাতখামাইর পশ্চিম পাড়া গ্রামে প্রায় তিন একর জমিতে মিশ্র বাগানে চাষ করা হয়েছে ম্যান্ডারিন ও দার্জিলিং জাতের কমলা। চার উদ্যোক্তা মিলে এখানে এই মিশ্র ফলের বাগান গড়ে তোলেন। এই বাগানেই রয়েছে অন্তত ১০ জাতের আম, ড্রাগন, বল সুন্দরী বরইসহ বেশ কিছু ফলের গাছ। তবে সবকিছু ছাপিয়ে মানুষের নজর আটকায় হলুদ টসটসে ম্যান্ডারিন কমলার থোকায়।
গতকাল শনিবার বিকেলে বাগান ঘুরে দারুণ কমলার দেখা মিলেছে। সারি করে লাগানো কমলার চারার ফাঁক দিয়ে হাঁটার পথ রয়েছে। তিন বছর আগে রোপণ করা কমলার চারাগুলো এখন প্রাপ্তবয়স্ক। প্রায় সব গাছে কমলা ধরেছে। কোনো গাছে খুব বেশি কমলা এসেছে। একসঙ্গে ডালে ডালে ঝুলে আছে অসংখ্য ম্যান্ডারিন জাতের হলুদ কাঁচা রঙের বাহারি কমলা। গাছে গাছে ঝুলছে রসে টইটম্বুর পাকা কমলার থোকা। বাগান ঘুরে দেখার সুযোগে ক্রেতাদের মধ্যে ভিন্ন একটা আনন্দ দেখা গেছে।
স্কুলশিক্ষক সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘কমলাবাগানে এসে দেখি অসাধারণ সুন্দর। বাগানে এসে মুগ্ধ হয়েছি। আমাদের এই মাটিতে এত সুন্দর বাগান করেছে। উনার মাধ্যমে আরও বেশি কৃষক উৎসাহিত হবে।’
ঢাকা থেকে আসা দর্শনার্থী সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘গত বছর অনলাইনে দেখার পর বাগান পরিদর্শনে আসি। সে সময় কমলা পাইনি। এ বছর স্ত্রীকে নিয়ে চলে আসলাম। খুবই সুন্দর লাগছে। প্রতিটি গাছে প্রচুর কমলা।’
দর্শনার্থী লিপি বলেন, ‘বাগানে এসে কমলা দেখতে পারলাম। অনেক ভালো লাগছে। এখনো বিক্রি শুরু হয়নি। বিক্রি শুরু হলে কিনতে আসব।’
দর্শনার্থী মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘স্ত্রী-সন্তান ও পরিবারের সবাইকে নিয়ে কমলা বাগান পরিদর্শনে এসেছি। আমাদের শ্রীপুরে এমন একটি পরিবেশে বিভিন্ন জেলার মানুষ আসছে। এতে আমাদের অনেক আনন্দ হচ্ছে।’
কমলাবাগানের সার্বিক তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে থাকা মো. সবুজ মিয়া বলেন, ‘আমাদের এই বাগানে ১০০টি দার্জিলিং কমলা ও ১০০টি চায়না ম্যান্ডারিন জাতের চারা রোপণ করা হয়েছিল। মাওলানা অলিউল্লাহ বাইজিদ, ফারুক আহমেদ, আব্দুল মতিন ও আইনুল হক মিলে ২০২১ সালে বাগানটি শুরু করেন। পরে তাঁরা এই বাগানের নাম রাখেন তাওয়াক্কালনা ফ্রুট অ্যান্ড অ্যাগ্রো লিমিটেড।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের এই বাগানে দুই জাতের কমলা রয়েছে। চায়না ম্যান্ডারিন ও দার্জিলিং কমলা। এ ছাড়াও বিভিন্ন জাতের আম, বল সুন্দরী বরই, সফেদা, জাম্বুরা ও ড্রাগন ফল চাষ করা হয়েছে।’
সবুজ মিয়া বলেন, ‘১৫ দিন ধরে অনেক দর্শনার্থী কমলা বাগানে আসছেন। চায়না ম্যান্ডারিন কমলাগাছের মধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশ গাছে আশানুরূপ ফলন এসেছে। দর্শনার্থীরা বাগান ঘুরে দেখছেন, ছবি তুলছেন। বেশ ভালো লাগছে মানুষের আগ্রহ দেখে।’
শ্রীপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুমাইয়া সুলতানা বলেন, ‘ব্যক্তি উদ্যোগে চায়না ম্যান্ডারিন ও দার্জিলিং কমলা চাষে চার উদ্যোক্তা বেশ সফল হয়েছেন। তাঁদের বাগানের কমলার মান চমৎকার। কমলা আকার ও রঙে খুবই সুন্দর হয়েছে। তাঁদের এমন সাফল্য অন্যদের আগ্রহী করবে কমলা চাষে।’
সুমাইয়া সুলতানা আরও বলেন, ‘শ্রীপুরে অন্তত ৮ হেক্টর জমিতে কমলা চাষ হচ্ছে। আমাদের এই আবহাওয়া চায়না ম্যান্ডারিন ও দার্জিলিং কমলা চাষে বেশ উপযোগী। কমলার আকার, রং ও স্বাদে চমৎকার হয়। আমরা কৃষদের উদ্বুদ্ধ করছি কমলা চাষে। এতে লাভও পাবে কৃষক। সতেজ ও পরিপক্ব কমলা পেতে ক্রেতারা বাগান থেকে কমলা নিতে পারেন উপযুক্ত দামে।