গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে ড. এম আই পাটোয়ারী বালিকা উচ্চবিদ্যালয় মাঠে আট দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হলো গ্রামবাংলার প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী হাডুডু খেলা। ১৬টি দলের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত এই খেলার ফাইনাল ম্যাচ গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হয়। ঐতিহ্যবাহী এই খেলার আয়োজন করেছিল ফলগাছা বাজার যুব সমাজ ক্লাব।
ফাইনাল খেলায় মুখোমুখি হয় ‘টাইগার’ বনাম ‘সিংহ’ দল। হাড্ডাহাড্ডি লড়াই শেষে সিংহ দল ২৪ পয়েন্ট এবং টাইগার দল ১৭ পয়েন্ট অর্জন করে। খেলা শেষে বিজয়ী সিংহ দলকে গরু এবং রানার্সআপ টাইগার দলকে খাসি পুরস্কার হিসেবে তুলে দেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি জাতীয় পার্টির মহাসচিব ও সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী। এর আগে ২৪ অক্টোবর এই খেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়।
দীর্ঘদিন পর এই ধরনের ঐতিহ্যবাহী খেলার আয়োজনে খুশি হয়েছেন দর্শনার্থীরা। তাঁরা বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে খেলা উপভোগ করেছেন। আশপাশের গ্রাম ছাড়াও বিভিন্ন উপজেলা থেকে হাজার হাজার দর্শক খেলা দেখতে আসেন। আগত দর্শকদের উপচে পড়া ভিড় দেখে আয়োজকেরা বেশ আনন্দিত হন।
দর্শনার্থী মো. শিপন মিয়া (২৫) বলেন, ‘এটা খুব মজার খেলা। বর্তমান প্রজন্মের ৮০ শতাংশ ছেলে-মেয়ে হয়তো জানে না হাডুডু কীভাবে খেলে, কতজন খেলোয়াড় লাগে। তারা শুধু বইয়ে পড়েছে যে এটি আমাদের জাতীয় খেলা।’
বিজয়ী সিংহ দলের অধিনায়ক মো. আলমগীর হোসাইন বলেন, ‘এই বিজয়ের আনন্দ আমার একার নয়, মাঠে উপস্থিত সবার। মাঠের দর্শকদের আনন্দ দিতে পেরেছি, এটাই আমাদের সবচেয়ে বড় খুশি।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বাইরে থেকে যতটা সহজ মনে হয়, আসলে এই খেলা ততটা সহজ নয়। খেলতে গেলে অনেক সাহস, শক্তি ও কৌশলী হতে হয়। যেকোনো পরিস্থিতি সামাল দিতে লাগে উপস্থিত বুদ্ধি। খেলাধুলায় থাকলে মন ও শরীর ভালো থাকে, মাদক বা কুচিন্তা কখনো মাথায় আসে না।’
শিক্ষক ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মো. নজমুল হুদা আয়োজকদের মধ্যে একজন। তিনি বলেন, ‘ইয়াং জেনারেশনকে নিয়ে আমরা খুবই চিন্তিত। তাদের অধঃপতনের যে রাস্তা তৈরি হয়েছে, আমার বিশ্বাস, খেলাধুলার মধ্যে ধরে রাখতে পারলে ওই জায়গা থেকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব।’ তিনি আরও বলেন, ‘মাদকের করাল গ্রাস এবং মোবাইল আসক্তি আমাদের জীবনীশক্তিকে যেভাবে ধ্বংস করছে, একমাত্র খেলাধুলাই পারে সেখান থেকে তাদের ফিরিয়ে আনতে। আগামীতে আরও বৃহৎ পরিসরে এই খেলার আয়োজন করার চিন্তাভাবনা আছে।’
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, ‘আমি এখানে প্রধান অতিথি বা এমপি হিসেবে আসিনি, এসেছি প্রতিবেশী হিসেবে। এই হাডুডু খেলাটি গ্রামবাংলার পুরাতন ও ঐতিহ্যবাহী খেলা। এখন এটি বিলুপ্তির পথে। নতুন প্রজন্ম যেন এই খেলার মাধ্যমে আমাদের ঐতিহ্যকে জানতে পারে, সে কারণে আয়োজকদের ধন্যবাদ জানাই।’