হোম > সারা দেশ > ফেনী

চুরির অভিযোগে দুই কিশোরকে মারধর, মায়েদের ‘নাকে খত’ দেওয়ালেন বিএনপি নেতা

মো. সাহাব উদ্দিন, ফেনী

মায়েদের নাকে খত। ছবি: সংগৃহীত

ফেনী সদর উপজেলার পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের মাথিয়ারা গ্রামে হাঁস ও কবুতর চুরির অভিযোগ তুলে দুই কিশোরকে প্রকাশ্যে মারধর করা হয়েছে। একই সঙ্গে তাদের মায়েদের ‘নাকে খত’ দিয়ে জনসমক্ষে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করা হয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার (১ মে) রাতে ইউনিয়নের ‘খালুর দোকান’ নামক স্থানে এক সালিস বৈঠকে এ ঘটনা ঘটে। এতে সভাপতিত্ব করেন ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন দেলু।

ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তা নিয়ে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়। ভিডিওতে দেখা যায়, দেলোয়ার হোসেন দেলু লাঠি হাতে দাঁড়িয়ে আছেন এবং কিশোরদের মা দুই নারী নাকে খত দিয়ে ক্ষমা চাইছেন। অন্য এক অংশে কিশোরদের লাঠি দিয়ে আঘাত করার দৃশ্যও দেখা যায়।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ১০ দিন আগে স্থানীয় জাহাঙ্গীর আলমের বাড়ি থেকে হাঁস ও কবুতর চুরির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় রাকিব ও তার বন্ধু রিফাতকে সন্দেহ করা হয়। পরে তাদের বিরুদ্ধে সালিস ডাকা হয়।

সেই সালিস বৈঠকে দুই কিশোর ও তাদের মায়েদের ডেকে আনা হয়। স্থানীয় কয়েকজন রাজনৈতিক নেতার উপস্থিতিতে কিশোরদের মারধর করা হয়। পরে তাদের মায়েদের বলা হয়, সন্তানদের সঠিকভাবে গড়ে তুলতে না পারার দায়ে জনসমক্ষে ক্ষমা চাইতে হবে।

রাকিবের মা বলেন, ‘আমার ছেলে যদি ভুল করে থাকে, তার বিচার হতে পারে। কিন্তু আমাকে সবার সামনে এভাবে অপমান করা হবে, তা কল্পনাও করিনি।’

রিফাতের মা বলেন, ‘আমি কোনো অন্যায় করিনি। শুধু একজন মা হওয়ার কারণে আমাকে এত বড় অপমান সহ্য করতে হলো।’

সালিসের সভাপতি বিএনপি নেতা দেলোয়ার হোসেন দেলু বলেন, ‘আমি কাউকে মারিনি। অভিযুক্ত কিশোরদের মায়েরা আমাদের কাছে আবদার করেছিলেন—বিষয়টি যেন সামাজিকভাবে মীমাংসা করা হয়। তাঁরাই স্বেচ্ছায় নাকে খত দিয়েছেন।’

তবে এ ঘটনায় প্রশাসন ও মানবাধিকারকর্মীরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।

ফেনী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুলতানা নাসরীন কান্তা বলেন, ‘নারীকে এভাবে হেনস্তা করার অধিকার কারও নেই। কেউ আইন নিজের হাতে তুলে নিতে পারে না। আমরা বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’

ফেনীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. আরিফুল ইসলাম সিদ্দিকী বলেন, ‘ভিডিওটি আমাদের নজরে এসেছে। তদন্ত শুরু হয়েছে। কেউ অভিযোগ করলে সেটিও গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে।’

জেলা বিএনপির সদস্যসচিব আলাল উদ্দিন আলাল বলেন, বিষয়টি কেন্দ্রীয় দপ্তরের নির্দেশে তিনি তদন্ত করছেন। সোমবারের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিয়ে দলের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতিমধ্যে দেলোয়ার হোসেনের বিএনপির সব পর্যায়ের পদ স্থগিত করা হয়েছে বলে জানান।

মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, কিশোরদের শারীরিকভাবে নির্যাতন এবং তাদের মায়েদের জনসমক্ষে অপমান করা আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন। তাঁরা এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

এদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটি ঘিরে জনমনে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

ফেসবুকে রাকিব নামে একজন লিখেছেন, ‘ছেলের দোষে মা কখনো দোষী হতে পারে না। ছেলের শাস্তি মা পেতে পারে না।’

শাহাদাত সাগর নামে একজন লেখেন, ‘গ্রাম্য সালিসের নামে একজন নিরপরাধ মাকে জনসম্মুখে নাকে খত দিতে বাধ্য করা হয়েছে। এটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’

রিয়াজ উদ্দিন নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ‘শুধুমাত্র দেলু চেয়ারম্যান নয়, সালিসে আরও কিছু মানুষরূপী জানোয়ার ছিল। তাদেরও শাস্তি হওয়া উচিত।’

ফেনীতে খালেদা জিয়ার আসনে বিএনপির ৩ নেতার মনোনয়নপত্র সংগ্রহ

ফেনী পৌরসভা: সরকারি জৈব সার উৎপাদন কেন্দ্র বন্ধ, মালামাল চুরি

কিছু রাজনৈতিক দল বুলেট বিপ্লবের প্রস্তুতি নিচ্ছে: হাসনাত

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে টমটমচালককে হত্যা: নিজাম হাজারীসহ ৭১ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

রেললাইনের পাশে সেরেস্তাদারের ঝুলন্ত লাশ

ফেনী-১ আসনে খালেদা জিয়ার পক্ষে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ

হাদি হত্যা: ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ

ওসমান হাদির খুনিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে ফেনীতে বিক্ষোভ

ফেনীতে ইজতেমা ময়দানে জুমার নামাজে হাজারো মানুষের ঢল

ফেনীতে থানার পাশে দীঘিতে মিলল অজ্ঞাত ব্যক্তির মরদেহ