হোম > সারা দেশ > ফেনী

ফেনীতে ভুল চিকিৎসায় চিকিৎসকের মৃত্যুর অভিযোগ, তদন্ত কমিটি গঠন

ফেনী সংবাদদাতা

ফেনীতে ভুল চিকিৎসায় রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. আকিফা সুলতানা টুম্পার মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ফেনী প্রাইভেট হাসপাতালের মালিক ও ল্যাপারোস্কোপিক সার্জন অধ্যাপক ডা. কাইয়্যুমের ভুল সিদ্ধান্ত ও অ্যানেসথেসিওলজিস্টকে দায়ী করছেন নিহতের পরিবার। গত শনিবার ওই চিকিৎসকের মৃত্যু হয়। এদিকে গত রোববার বিষয়টি তদন্তে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে ফেনী সিভিল সার্জন কার্যালয়। 

নিহতের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার রাতে ল্যাপারোস্কোপিক সার্জন অধ্যাপক ডা. কাইয়্যুমের ব্যক্তিমালিকানাধীন হাসপাতালটিতে ডা. আকিফা সুলতানার ল্যাপারোস্কোপি সার্জারি করার প্রস্তুতি নেওয়া হয়। এ সময় ডা. আবদুর রহমান নামে ফেনীর বাইরে থেকে আসা একজন অ্যানেসথেসিওলজিস্ট চিকিৎসক তাঁকে অ্যানেসথেসিয়া প্রয়োগ করেন। এর পর থেকে ক্রমেই তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। সেখান থেকে একপর্যায়ে রাতে তাঁকে প্রথমে ফেনী জেনারেল হাসপাতালের আইসিইউতে এবং শনিবার ভোরে অবস্থার আরও অবনতি হওয়ায় চট্টগ্রাম এভারকেয়ার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে সেখান থেকে ঢাকায় নেওয়ার পথে আকিফা সুলতানার মৃত্যু হয়। 

এ বিষয়ে নিহতের চাচা ইকরাম উল্ল্যাহ বলেন, ‘আমার ভাতিজি ৩৩তম বিসিএসের মাধ্যমে চিকিৎসা পেশায় যোগদান করেন। সর্বশেষ মোহাম্মদপুরের বাসায় থেকে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগে কর্মরত ছিলেন। মূলত তাঁর একসময়ের রুমমেট ফেনীতে কর্মরত ডা. নিলুফা পলির কথা অনুযায়ী সে ফেনীতে ল্যাপারোস্কোপিক সার্জারি করতে যায়। সেখানে আকিফা একজন অভিজ্ঞ ও সিনিয়র অ্যানেসথেসিওলজিস্ট চিকিৎসক চান। পরে প্রতিষ্ঠানের মালিক ল্যাপারোস্কোপিক সার্জন অধ্যাপক কাইয়্যুম আবদুর রহমান নামে এক বৃদ্ধ চিকিৎসককে নিয়ে আসেন।’

তিনি বলেন, ‘বয়সের ভারে অ্যানেসথেসিওলজিস্ট ওই চিকিৎসক নিজেই অসুস্থ। তা ছাড়া এত জটিল অবস্থায় এমন রোগীকে অ্যানেসথেসিয়া প্রয়োগে তাঁর পূর্ব কোনো অভিজ্ঞতাও ছিল না। তবু প্রতিষ্ঠানের মালিক প্রফেসর ডা. কাইয়্যুম তাঁকে নিয়ে এসেছেন। অ্যানেসথেসিয়া দেওয়ার পরেই আমার ভাতিজির শারীরিক অবস্থা খারাপ হতে থাকে। তাঁর (ডা. কাইয়্যুম) এমন ভুল সিদ্ধান্তের কারণেই ভাতিজির এই পরিণতি হয়েছে।’ 

নিহতের চাচা ইকরাম উল্ল্যাহ আরও বলেন, ‘শুক্রবার রাত ১০টার দিকে ফেনী প্রাইভেট হাসপাতাল থেকে আমাদের ফোনে ঢাকা থেকে একটি আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে ফেনী যেতে বলে। কথা অনুযায়ী রাত ৩টায় আমরা ফেনী জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে আকিফাকে আইসিইউতে সংকটাপন্ন অবস্থায় চিকিৎসাধীন দেখতে পাই। তখন সেখানে অবস্থান করা হাসপাতালের চারজন চিকিৎসক আকিফাকে দ্রুত ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার কথা বলেন। কিন্তু শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় দ্রুততার জন্য চিকিৎসকদের পরামর্শে সেখানের দুজন চিকিৎসকসহ আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে চট্টগ্রাম এভারকেয়ার হাসপাতালে নিয়ে যাই। কিন্তু এভারকেয়ারের মেডিকেল বোর্ড থেকে আমাদের জানায়, ফেনী প্রাইভেট হাসপাতাল থেকে বের হওয়ার পর তার শারীরিক অবস্থা এমন জটিল আকার ধারণ করে যে আর কিছু করার সুযোগ নেই। পরে ঢাকায় নেওয়ার পথে আমার ভাতিজির মৃত্যু হয়।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফেনী জেনারেল হাসপাতালের এক চিকিৎসক বলেন, সেদিন সারা রাত ধরে ফেনী জেনারেল হাসপাতালের বেশ কয়েকজন চিকিৎসক তাঁকে বাঁচানোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হন তাঁরা। 

অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ফেনী প্রাইভেট হাসপাতালের মালিক ল্যাপারোস্কোপিক সার্জন অধ্যাপক ডা. কাইয়্যুম বলেন, ‘ডা. আকিফা সুলতানাকে অ্যানেসথেসিয়া দেওয়ার জন্য সিনিয়র ও অভিজ্ঞ অ্যানেসথেসিওলজিস্ট ডা. আবদুর রহমানকে নিয়ে আসা হয়। চিকিৎসকের বয়স ও অভিজ্ঞতা নিয়ে যে অভিযোগ তোলা হচ্ছে, তা সঠিক নয়। কারণ বয়স বাড়লেই যে অভিজ্ঞতা বা চিকিৎসা ভুলে যান এমন নয়। অ্যানেসথেসিয়া দেওয়ার জন্য ডা. আবদুর রহমানের সঙ্গে স্থানীয় একজন জুনিয়র চিকিৎসকও উপস্থিত ছিলেন।’ 

এ বিষয়ে জানতে অ্যানেসথেসিওলজিস্ট ডা. আবদুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য ফেনী প্রাইভেট হাসপাতালের মালিকের সহায়তা চাওয়া হলেও সাড়া মেলেনি। 

এদিকে গত রোববার বিষয়টি তদন্তে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে ফেনী সিভিল সার্জন কার্যালয়। কমিটিতে ফেনী জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. মো. জালাল হোসেনকে সভাপতি করা হয়েছে। এতে সদস্য হিসেবে রয়েছেন হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যান্ট (সার্জারি) ডা. মো. কামরুজ্জামান, দাগনভূঞা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. তৌহিদুল ইসলাম, ফেনী জেনারেল হাসপাতালের জুনিয়র কনসালট্যান্ট (গাইনি) ডা. তাহিরা খাতুন ও জুনিয়র কনসালট্যান্ট (অ্যানেসথেসিয়া) ডা. মো. ইলিয়াছ ভূঞা। 

ফেনীর সিভিল সার্জন ডা. শিহাব উদ্দিন বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালকের নির্দেশনা অনুযায়ী সার্জারি করার সময় জটিলতার পরিপ্রেক্ষিতে রোগীর মৃত্যুর ঘটনায় পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে পাঁচ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। 

তদন্ত কমিটির সদস্য ফেনী জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যান্ট (সার্জারি) ডা. মো. কামরুজ্জামান বলেন, সিভিল সার্জন অফিস থেকে একটি চিঠি পেয়েছি আজ (মঙ্গলবার)। কমিটির অন্য সদস্যদের সঙ্গে তদন্ত শেষে বিস্তারিত বলা যাবে।

ফেনীতে ইজতেমা ময়দানে জুমার নামাজে হাজারো মানুষের ঢল

ফেনীতে থানার পাশে দীঘিতে মিলল অজ্ঞাত ব্যক্তির মরদেহ

ফেনীতে ব্যাংক হিসাব থেকে গ্রাহকের ১৯ লাখ টাকা উধাও, গেটে তালা-মানববন্ধন

ভাতিজাদের হামলায় বৃদ্ধের মৃত্যুর অভিযোগ

ফেনীতে গভীর রাতে জুলাই স্মৃতিস্তম্ভে আগুন

তদন্ত করতে গিয়ে হামলার শিকার এসআইসহ তিন পুলিশ

ফেনীতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বাসে আগুন

ফেনীতে ট্রেনের ছাদ থেকে পড়ে যুবকের মৃত্যু

চুরি মামলায় স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা কারাগারে

সোনাগাজীতে শিশুর হাতে বন্দুক—ফেসবুকে ছবি