হোম > সারা দেশ > ঢাকা

দেড় বছরে ১০ বার থমকে গেছে মেট্রোরেল চলাচল

তৌফিকুল ইসলাম, ঢাকা 

ফাইল ছবি

যানজটের নগরী ঢাকায় যাতায়াতে কিছুটা স্বস্তি আনা মেট্রোরেলের চলাচল হঠাৎ হঠাৎ থমকে যাচ্ছে। গত প্রায় দেড় বছরে ১০ বার বিঘ্ন ঘটেছে চলাচলে। বিঘ্ন ঘটার বেশির ভাগ কারণই মানবসৃষ্ট। বাকিগুলো বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়াসহ কারিগরি বা যান্ত্রিক ত্রুটি। মানুষের অসচেতনতা আধুনিক এই গণপরিবহন সেবার নিরাপত্তায় বড় হুমকি হয়ে উঠেছে।

মেট্রোরেল পরিচালনাকারী সংস্থা ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) সূত্র বলেছে, মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়াসহ বিভিন্ন কারণে যাত্রীসংখ্যা প্রায় ১০ শতাংশ কমেছে।

ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুক আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মানবসৃষ্ট সমস্যাগুলো অবশ্যই আমাদের কাটিয়ে উঠতে হবে। এ জন্য জনসচেতনতা আরও বাড়াতে হবে। কারণ, মানুষ সচেতন না হলে মেট্রোরেল লাইনের ওপর পুরোপুরি বেড়া দিয়ে ঘেরা সম্ভব নয়। পাশাপাশি আমাদের নজরদারি বা এনফোর্সমেন্ট আরও জোরদার করতে হবে। যান্ত্রিক ত্রুটি স্বাভাবিকভাবে ঘটতেই পারে। কিন্তু বেশি বিঘ্ন ঘটাচ্ছে মানবসৃষ্ট নানা ধরনের সমস্যা।’

ডিএমটিসিএলের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজের সব নোটিশ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে চলতি বছরের ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ১০ বার মেট্রোরেল চলাচল বিঘ্নিত হয়েছে। এগুলোর মধ্যে ৬টির বেশি কারণ মানবসৃষ্ট, বাকিগুলো কারিগরি বা যান্ত্রিক ত্রুটি। মানবসৃষ্ট কারণের মধ্যে রয়েছে মেট্রোরেলের লাইনে কাপড়, ব্যাগ, ড্রোন, বৈদ্যুতিক লাইনে তার নিক্ষেপ এবং ট্রেনের ছাদে ওঠা। এ ছাড়া বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ার কারণে দুবার চলাচল কয়েক ঘণ্টার জন্য বন্ধ থাকে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মেট্রোরেল লাইনে কোনো বস্তু পড়লে বা কোনো ধরনের বাধা শনাক্ত হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দুর্ঘটনা এড়াতে এটি মেট্রোরেলের একটি বিশেষ নিরাপত্তাব্যবস্থা। তবে চলমান অবস্থায় হঠাৎ ট্রেন থেমে যাওয়ায় যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়েন এবং আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

ডিএমটিসিএলের ফেসবুক পেজের পোস্ট বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সর্বশেষ ৩ ডিসেম্বর উত্তরা উত্তর-উত্তরা দক্ষিণ স্টেশনের মাঝপথে মেট্রোলাইনের ওপর কাপড় পড়ে যাওয়ায় ১৫ মিনিট ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখতে হয়। এর তিন দিন আগে ৩০ নভেম্বর বাংলাদেশ সচিবালয় স্টেশনে এক কিশোর ট্রেনের দুটি কোচের মধ্যবর্তী স্থানে উঠে গেলে নিরাপত্তাজনিত কারণে মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ থাকে। ২৫ নভেম্বর লাইনে পড়ে থাকা ব্যাগের জন্য ২০ মিনিট চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। ২২ নভেম্বর উত্তরা সেন্টার-উত্তরা দক্ষিণ অংশে লাইনে ড্রোন পড়ে থাকায় কিছু সময় ট্রেন বন্ধ থাকে। ২ নভেম্বর পল্লবী-মিরপুর ১১ ঢালের মাঝে বৈদ্যুতিক লাইনের ওপর বাইরে থেকে তার নিক্ষেপ করা হলে ৩০ মিনিট ট্রেন চলেনি। এসবই মানবসৃষ্ট। এমন অসচেতনতায় চলাচলে বিঘ্ন ঘটনার পাশাপাশি দুর্ঘটনার ঝুঁকি তৈরি করছে।

যান্ত্রিক ত্রুটিও চলাচল বিঘ্নের কারণ

যান্ত্রিক ও প্রযুক্তিগত কারণেও মেট্রোরেল চলাচলে কয়েকবার বিঘ্ন ঘটেছে। এর মধ্যে ২৬ অক্টোবর বিয়ারিং প্যাডে ত্রুটি দেখা দিলে ট্রেন চলাচল থামাতে হয়। ২৮ মে অতিরিক্ত যাত্রীর চাপে ট্রেনের দরজায় সমস্যা হলে সন্ধ্যার ব্যস্ত সময়ে ২০ মিনিট চলাচল বন্ধ থাকে। ২৫ জানুয়ারি দুবার বিঘ্ন ঘটে। সেদিন সকালে দরজা বিকল হয়ে ৯টা ২৩ থেকে ৯টা ৪৯ পর্যন্ত সেবা বন্ধ থাকে। সিগন্যালের সমস্যার জন্য আবার বেলা ১টা ৩৩ থেকে ২টা ৬ মিনিট পর্যন্ত চলাচল বন্ধ থাকে। সেদিন ধাপে ধাপে রুট খুলে পুরো নেটওয়ার্ক সন্ধ্যায় স্বাভাবিক হয়।

২০২৪ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ফার্মগেটে একটি বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়লে ১১ ঘণ্টা ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল আগারগাঁও-মতিঝিল অংশে। চলতি বছরের ২৬ অক্টোবর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ফার্মগেটে আবারও ৮০ কেজি ওজনের বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে এক যুবকের মৃত্যু হয়। এই ঘটনায় কয়েক ঘণ্টা পুরো ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকে। পরে প্রথমে উত্তরা-আগারগাঁও অংশে এবং এর কয়েক ঘণ্টা পর মতিঝিল পর্যন্ত ট্রেন চলাচল করে।

ঘটনা বিশ্লেষণে দেখা যায়, যেসব ঘটনায় মেট্রোরেল চলাচল ব্যাহত হয়েছে, তার অধিকাংশই যাত্রী, পথচারী বা লাইনের আশপাশের মানুষদের সচেতনতা থাকলে এড়ানো যেত। কাপড় বা ব্যাগ লাইনে পড়ে থাকা, ড্রোন ওড়ানো, বৈদ্যুতিক লাইনে বস্তু নিক্ষেপ; এগুলো শুধু ট্রেন চলাচলই ব্যাহত করেনি, যাত্রীদেরও ভোগান্তিতে ফেলেছে। একই সঙ্গে বড় দুর্ঘটনার ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।

গণপরিবহন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন ঘটনা এড়াতে মেট্রো স্টেশন ও লাইনে নজরদারি আরও শক্তিশালী করতে হবে। বহিরাগত বস্তু শনাক্তের সেন্সর ও মনিটরিং বাড়াতে হবে এবং জনসচেতনতা তৈরিতে ব্যাপক প্রচার চালাতে হবে।

যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, এটি মেট্রোর পরিকল্পনাগত ত্রুটি। লাইনে কাপড়, ব্যাগ বা অন্য বস্তু পড়লে দ্রুত শনাক্ত করতে অবজেক্ট ডিটেকশন সেন্সর ও এআই-চালিত সিসিটিভি কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। ড্রোন প্রতিরোধে ড্রোন ডিটেকশন রাডার ও জিওফেন্সিং সিস্টেম ব্যবহার করলে অনুমতিহীন ড্রোন লাইনের কাছে এলেই সতর্কতা জারি হবে। বৈদ্যুতিক লাইনের পাশে সুরক্ষা নেট বসালে বাইরে থেকে তার বা বস্তু নিক্ষেপ রোধ করা সম্ভব। অতিরিক্ত যাত্রীর চাপে দরজার সমস্যা কমাতে দরজা-সেন্সর ও সফটওয়্যার উন্নয়নের পাশাপাশি ব্যস্ত স্টেশনে রিয়েল-টাইম যাত্রী ব্যবস্থাপনা চালু করা যেতে পারে।

ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুক আহমেদ বলেন, ‘মেট্রোরেল আমাদের সবার সম্পদ, তাই এটি রক্ষার দায়িত্বও সবার। এই সংস্কৃতি এক দিনে তৈরি হয় না। সময়ে সময়ে সচেতনতা ও অভ্যাস গড়ে তুলতেই হবে।’

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অস্ত্র-গুলিসহ গ্রেপ্তার ২

‎গৃহকর্মী নিয়োগের পূর্বে পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার অনুরোধ ডিএমপি কমিশনারের

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে খুন: অভিযুক্ত গৃহকর্মীর আসল নাম-পরিচয় শনাক্ত

নরসিংদীতে অবৈধ দুই ইটভাটা গুঁড়িয়ে দিল প্রশাসন

বিডিআর হত্যার তদন্ত প্রতিবেদনে আইজিপি বাহারুলের নাম, অপসারণের দাবিতে শাহবাগে পিন্টু সমর্থকেরা

কালীগঞ্জে ৪ করাতকলের মালিককে জরিমানা

মেজর জিয়াউলের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহারসহ ৭ দাবি

রাজধানীর লালবাগে ছুরিকাঘাতে যুবক খুন

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা, আসামি গৃহকর্মী

‘শান্তিচুক্তি’ ভেঙে ঢাকা কলেজ–আইডিয়াল কলেজ শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ