‘গতকাল বিকালে কাজে গেছিলাম, সাতটা বাজে আইছি। আইয়া শুনি আমাগোর এদিকে আগুন। আমাগোরে ঢুকতে দেয় না। আগুন খালি ছইড়া যায় আর বাড়ে। পরে আইয়াতো দেখি সব পুড়ে শেষ। কিচ্ছু নাই।’
আজ বুধবার বেলা পৌনে ১২টায় রাজধানীর কড়াইল বস্তির কবরস্থান রোডে নিজের পুড়ে যাওয়া ঘরে দাঁড়িয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে আজকের পত্রিকাকে এসব কথা বলছিলেন খাদিজা বেগম।
খাদিজা বেগম তাঁর স্বামী সন্তান ও নাতি নিয়ে কড়াইল বস্তি দর বউবাজার কবরস্থান রোডের ক ব্লকে থাকেন। গত ৩০ বছর ধরে বস্তিটিতে থাকেন তিনি। তিলে তিলে ১১টা ঘর, একটি ছোট দোকান ঘর করেছিলেন তিনি।
গতকাল মঙ্গলবার পাঁচ ঘণ্টার আগুনে পুড়ে গেছে খাদিজা বেগমের সব ঘর ও দোকান। রাতে খোলা আকাশের নিচে রাতযাপন করেন। সকাল থেকেই পুড়ে যাওয়া ঘরে এসে কোনো কিছু অবশিষ্ট আছে কিনা তা ভালো করে উল্টে পাল্টে দেখেন। কোনো কিছুই আর নেই।
খাদিজা বেগম বলেন, ‘গতকাল বিকালে কাজে গেছিলাম। আইসা দেখি আগুন। বাসায় আমার অসুস্থ স্বামী ছিল। তাকে লোকজন বাইরে নিসে। আমার ছেলে কাজে ছিল। মেয়ে আমার নাতিকে আনতে মাদ্রাসায় গেছে। এর মধ্যেই নাকি আগুন লাগছে। আমি এক কাপড়ে আছি। কোনো কিছু আমরা বের করতে পারি নাই।’
খাদিজা বেগমের মতো এমন নিঃস্ব কড়াইল বস্তির হাজারো মানুষ। তাঁদের অধিকাংশই ঘর থেকে কিছু নিয়ে বের হতে পারেননি। সবই পুড়ে গেছে। গায়ের কাপড় ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট নাই। সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন অসহায় এই মানুষেরা।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেল ৫টা ২২ মিনিটে কড়াইল বস্তির বউবাজার কবরস্থান রোডের একটি ঘর থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। এরপর সেই আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এতে পাঁচ ঘণ্টার আগুনে পুড়ে যায় বস্তির ১৫০০টি ঘর। বুধবার সকাল সাড়ে ৯টায় আগুন পুরোপুরি নিভিয়ে ফেলেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।