ডিএমটিসিএলের এমডি
মেট্রোরেল প্রকল্পের জন্য ভবিষ্যতে বিদেশ থেকে ট্রেনের যেসব কোচ কেনা হবে, সেগুলো দেশেই সংযোজন করার কথা ভাবা হচ্ছে। মেট্রোরেল নির্মাণ ও পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. ফারুক আহমেদ আজ সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানালেন। সম্প্রতি দক্ষিণ কোরিয়া সফরে এ নিয়ে তাঁর সঙ্গে সেখানকার কর্তৃপক্ষের ইতিবাচক প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন এমডি।
গতকাল রোববার দুপুরে রাজধানীর উত্তরায় মেট্রোরেলের ডিপোতে সাম্প্রতিক বিভিন্ন বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে ডিএমটিসিএল। এতে রোববার রাতে মেট্রোরেলের ছাদে লোক ওঠা, ভূমিকম্পের সম্ভাব্য প্রভাব, বিয়ারিং প্যাড পড়ে দুর্ঘটনা ঘটা ইত্যাদি বিষয়ে কথা বলেন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
ট্রেনের কোচ দেশে এনে সংযোজন করা প্রসঙ্গে মো. ফারুক আহমেদ বলেন, ‘সম্প্রতি দক্ষিণ কোরিয়ার কয়েকটি কারখানা আমি পরিদর্শন করেছি। মেট্রোর পরবর্তী লাইনগুলোর জন্য ভবিষ্যতে ট্রেনের যে কোচগুলো কেনা হবে, সেগুলো বাংলাদেশেই সংযোজন করার বিষয়ে সেখানে আলোচনা হয়েছে। কোরিয়ার পক্ষ থেকে প্রাথমিক সম্মতিও পাওয়া গেছে। ডিসেম্বরের মধ্যে দেশটির একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল বাংলাদেশে আসবে। উদ্যোগটি বাস্তবায়িত হলে যন্ত্রাংশের জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হবে না। ভবিষ্যতে বাংলাদেশে এ ধরনের কারখানা স্থাপনের সম্ভাবনাও তৈরি হবে।’
রোববার রাতে এক কিশোরসহ দুই ব্যক্তির মেট্রোরেলের ছাদে ওঠার বিষয়ে এমডি বলেন, ‘ভিডিও ফুটেজে প্রাথমিকভাবে দেখা যায়, ছেলেটি সম্ভবত কারওয়ান বাজার এলাকার কোনো স্থান থেকে ট্রেনে উঠে আগারগাঁও পর্যন্ত আসে। আগারগাঁও স্টেশনে সে ট্রেন বদলায়। স্বাভাবিক প্রবেশপথ ব্যবহার না করে দুটি কোচের মাঝের ফাঁক দিয়ে সে ওপরে উঠে পড়ে। সচিবালয় স্টেশনে পৌঁছার পর তাকে ছাদে দেখা গেলে কর্তব্যরত নিরাপত্তাকর্মীরা তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি জানান। বৈদ্যুতিক লাইনে সংযোগ না থাকায় বড় ধরনের দুর্ঘটনা এড়ানো গেছে।’
এমডি বলেন, ভিডিওগুলো আরও বিশ্লেষণ করে এ বিষয়ে সঠিক তথ্য দেওয়া যাবে। এটা নিয়ে তদন্ত হচ্ছে।
এমডি জানান, মেট্রোরেলের পিলারের ওপর থেকে বিয়ারিং প্যাড পড়ার ঘটনার তদন্তকাজ এখনো চলছে। তিনি বলেন, ‘ধীরে ধীরে নতুন নতুন তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। বিয়ারিং পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য সেটি বিদেশে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আসার অপেক্ষায় তদন্ত কমিটির মেয়াদ বাড়িয়ে ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়েছে।’
মেট্রোর নিরাপত্তার বিষয়ে ফারুক আহমেদ বলেন, ‘গত সপ্তাহে ট্র্যাকের ওপর ড্রোন পড়েছে এবং সম্প্রতি সাতটি ককটেল পাওয়া গেছে। এতে জনগণেরও সচেতনতা প্রয়োজন। এটি শুধু ডিএমটিসিএলের নয়, আমাদের সবার সম্পদ।’
সাম্প্রতিক ভূমিকম্পের প্রভাবের বিষয়ে ফারুক আহমেদ বলেন, ‘ভূমিকম্পের পরে পুরোটাই পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। কোথাও কোনো কাঠামোগত ত্রুটি হয়নি। তবে মেট্রোর (স্টেশনের) দেয়াল কেন ফেটেছে, তা বলতে পারব না।’
দিয়াবাড়ি থেকে টঙ্গী পর্যন্ত মেট্রো সম্প্রসারণের বিষয়ে কোনো অগ্রগতি নেই জানিয়ে ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, পরবর্তী সরকার না এলে এটির অর্থায়ন পাওয়া যাবে না।
সংবাদ সম্মেলনে মেট্রোর এমডি আরও জানান, ডিএমটিসিএলের আওতাধীন জমি অস্থায়ীভাবে লিজ দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে। এতে প্রতিষ্ঠানটির কিছু বাড়তি আয় হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এ বিষয়ে আগামী মাস থেকে দরপত্র আহ্বান করা হবে।
এমডি বলেন, মেট্রোর পাঁচ লাইনের জন্য পাঁচটি ডিপোর পরিকল্পনা থাকলেও তাঁরা তিনটিতে সীমিত করার কথা ভাবছেন। বাকি দুটি ডিপোর জায়গা অন্য কাজে ব্যবহার করে আয় বাড়ানো সম্ভব বলে মনে করছেন তাঁরা।
ফারুক আহমেদ জানান, বিয়ারিং প্যাড পড়া, ভূমিকম্প এবং লাইনের ওপর ককটেল পাওয়ার ঘটনায় চলাচল বিঘ্নিত হওয়ায় যাত্রী চলাচলের হার প্রায় ১০ শতাংশ কমেছে। আগে দৈনিক গড়ে ৪ লাখ ৬০ হাজার যাত্রী যাতায়াত করলেও এখন তা কমে প্রায় ৪ লাখে এসেছে।
মেট্রোর এমডি জানান, চলতি বছরে মেট্রোর রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ৪৬০ কোটি টাকা। এ ছাড়া রাজস্ব-বহির্ভূত আয় হবে ১০০ কোটি টাকা। বর্তমানে বেতন-ভাতা এবং অন্যান্য বাবদ প্রায় ২০০ কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে।