হোম > সারা দেশ > ঢাকা

জল ও যানজটে দিনভর ভোগান্তিতে ঢাকাবাসী, ঘটেছে প্রাণহানিও

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

গতকাল রোববার রাত থেকে আজ সোমবার সকাল পর্যন্ত বৃষ্টিতে জলাবদ্ধ ঢাকা। ছবি: আজকের পত্রিকা।

টানা ভারী বর্ষণে আবারও জলমগ্ন হয়ে পড়েছে রাজধানী শহর ঢাকা। গতকাল রোববার রাত থেকে আজ সোমবার সকাল পর্যন্ত মুষলধারে বৃষ্টির কারণে শহরের বিভিন্ন সড়ক থেকে গলিপথে জমেছে হাঁটু থেকে কোমরপানি।

বৃষ্টি ও জলজটে সকাল থেকে চরম দুর্ভোগে পড়েন অফিসগামী মানুষ। রাস্তায় সৃষ্টি হয় প্রচণ্ড যানজট। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষার পরও অনেক যাত্রী পাননি কোনো বাহন। আবার সড়কে জমে থাকা পানিতে প্রাইভেট কার ও বাস আটকা পড়ে। অনেক যানবাহন বিকল হয়ে সড়কেরই দাঁড়িয়ে থাকে। ফলে অনেকে কর্মস্থলে সময়মতো পৌঁছাতে পারেননি।

মেরুল বাড্ডায় সিএনজিচালিত অটোরিকশার জন্য অপেক্ষারত ব্যাংক কর্মকর্তা শারমীন আক্তার বলেন, ‘বাসার সামনে পানি জমে আছে। বাসা থেকে বের হতে দেরি হয়েছে। এখন আবার এক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও অটোরিকশা পাচ্ছি না।’

গতকাল রোববার রাত থেকে আজ সোমবার সকাল পর্যন্ত বৃষ্টিতে জলাবদ্ধ ঢাকা। ছবি: আজকের পত্রিকা

বৃষ্টি ও জলজটের কারণে রিকশা এবং সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালকেরা অতিরিক্ত ভাড়া দাবি করছেন। রাইড শেয়ারিং অ্যাপগুলোতেও ভাড়া বেশি দেখাচ্ছে। জিগাতলার বেসরকারি চাকরিজীবী তৈমুর আলম বলেন, ‘রাইড শেয়ারিং অ্যাপে প্রতিদিন দেড় শ টাকার মধ্যে সেগুনবাগিচায় পৌঁছাতে পারি। আজ ৩০০ টাকায়ও বাইক পাওয়া যাচ্ছে না।’

দ্বিগুণ ভাড়ার নিচে রিকশাচালকেরা যেতে রাজি হচ্ছেন না বলে জানান শংকরের বাসিন্দা ফারিয়া ইসলাম। তিনি বলেন, রাস্তায় পানি জমে আছে। এই সুযোগে রিকশাভাড়া দু-তিন গুণ বেড়ে গেছে। ৩০ টাকার ভাড়া ১০০ টাকা নিচ্ছে।

অন্যদিকে রিকশাচালকেরা জানান, জলজটের মধ্যে ঝুঁকি নিয়ে রিকশা চালাতে হচ্ছে। তাই ভাড়া বেশি নিচ্ছেন। জিগাতলার রিকশাচালক কলিম মিয়া বলেন, ‘পানির মইদ্দে কাচভাঙা, লোহাভাঙা—কত কিছু থাকে। কোনোরকমে আমার পা কাডলে হাজার টাকার মামলা—সেলাই, ডাক্তার, ওষুধ। আর রিকশার যদি কোনো ক্ষতি হয়, তাইলে তো কোনো কথাই নাই। মহাজনরে রক্ত বেইচ্চা হইলেও টাহা দেওন লাগব। ভাড়া তো আমরা এমনে এমনে বেশি নিই না।’

বৃষ্টি ও জলজটের কারণে শিক্ষার্থীরাও পড়েছেন দুর্ভোগে। অনেক স্কুল-কলেজে পরীক্ষা চলমান থাকায় ছাত্রছাত্রীদের ভেজা কাপড়ে পরীক্ষার হলে প্রবেশ করতে হয়েছে। গলিপথে পানিতে নেমে অনেককে জুতা হাতে নিয়ে হাঁটতে দেখা গেছে।

অনেক এলাকায় বাসাবাড়ির নিচতলায় পানি ঢুকে পড়ায় পরিবারগুলো বিপাকে পড়েছে। মালিবাগ, মগবাজার, হাতিরঝিল, বাড্ডা, শেওড়াপাড়া, কাজীপাড়া, মিরপুর, ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, পুরান ঢাকার বেশ কিছু অংশ, খিলগাঁওয়ের মতো এলাকায় ড্রেনেজ ব্যবস্থার দুর্বলতার কারণে জলজট ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।

টানা বর্ষণে শুধু নাগরিক ভোগান্তিই নয়, এতে যোগ হয়েছে অর্থনৈতিক ক্ষতিও। বাজারে পণ্য পরিবহনে দেরি হওয়ায় ব্যবসায়ীরা ক্ষতির মুখে পড়েছেন। দোকান ও শপিং মলে পানি ঢুকে নষ্ট হয়েছে পণ্যসামগ্রী। দিনমজুর শ্রেণির মানুষ কাজের জন্য বের হতে না পারায় তাঁদের আয়ও ব্যাহত হয়েছে।

জলজটের কারণে প্রাণহানিও ঘটেছে। পুরান ঢাকার নাজিরাবাজার এলাকায় রাস্তায় বৃষ্টির পানিতে বিদ্যুতায়িত হয়ে আমিন (৩০) নামের বাইসাইকেল আরোহী এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। তিনি বেকারি দোকানের কর্মচারী ছিলেন।

সামান্য বৃষ্টিতেই রাজধানীতে জলজটের চিত্র নতুন নয়। বছরের পর বছর নানা উন্নয়ন প্রকল্পের নামে ব্যয় হলেও সমস্যার স্থায়ী কোনো সমাধান হয়নি।

রামপুরার বাসিন্দা বেসরকারি চাকরিজীবী তানভির রহমান বলেন, ‘ড্রেনেজ ব্যবস্থার দুর্বলতা ও অব্যবস্থাপনা এই জলজটের কারণ—এ কথা শুনতে শুনতে আমরা অতিষ্ঠ। সিটি করপোরেশন বলে ওয়াসার দোষ। ওয়াসা বলে করপোরেশনের দোষ। আমাদের দেশে বৃষ্টি, অতিবৃষ্টি—সবই হবে। একটা রাজধানী শহরে এটার স্থায়ী সমাধান হবে না কেন?’

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা রাসেল রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, কিছু এলাকায় ইতিমধ্যে সমাধান হয়ে গেছে। আর কিছু এলাকায় পানি নামানোর কাজ চলমান রয়েছে। কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণকক্ষের মাধ্যমে সার্বিক পরিস্থিতি তদারক করা হচ্ছে।

ডিএসসিসির পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়, জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রতিটি ওয়ার্ডে ডিএসসিসির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের কর্মীরা এবং ওয়ার্ডভিত্তিক ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম নিরলস কাজ করে যাচ্ছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল রাত থেকে আজ সকাল পর্যন্ত কেবল রাজধানী ঢাকাতেই বৃষ্টি হয়েছে ১০৫ মিলিমিটার। এর মধ্যে গতকাল রাত ১২টা থেকে আজ সকাল ৬টা পর্যন্ত ৩৪ মিলিমিটার। এরপর সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত ৭১ মিলিমিটার। আজ সারা দিন বৃষ্টিপাত হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

আবহাওয়াবিদ শাহীনুল ইসলাম জানান, গতকাল রাত থেকে বৃষ্টি হয়েছে মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে। কারণ, মৌসুমি বায়ু সারা দেশে সক্রিয় রয়েছে। তবে দক্ষিণাঞ্চলে সক্রিয় বেশি। আজকের সারা দিন বৃষ্টি হলেও কাল থেকে (২৩ সেপ্টেম্বর) বৃষ্টি কমে আসবে। বৃষ্টি কমে গেলে এরপর তাপমাত্রা কিছুটা বাড়বে।

আবহাওয়াবিদ আরও জানান, মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে আরও কয়েক দিন বৃষ্টি হবে। অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহের দিকে মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশ থেকে বিদায় নিতে পারে।

জাবিতে শেখ পরিবারের নামে থাকা ৪ হলের নাম পরিবর্তন

সাবেক এমপি শাজাহান খানের মেয়ে ও নুরুন্নবী চৌধুরীর স্ত্রীর নামে দুদকের মামলা অনুমোদন

ধর্ষণের মামলায় গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন ছাত্র রিমান্ডে

নির্বাচনের আগে ডিএমপির ৫০ থানায় নতুন ওসি

যন্ত্রপাতি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে অনন্ত নিটওয়্যারের এমডিসহ চারজনের বিরুদ্ধে ঠিকাদারের মামলা

বাম দলের যমুনা যাত্রা কর্মসূচিতে পুলিশের লাঠিপেটা, আহত ২০

দলবদ্ধ ধর্ষণ ও ভিডিও করে ব্ল্যাকমেল: গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের চার শিক্ষার্থী গ্রেপ্তার

দেশজুড়ে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টদের দ্বিতীয় দিনের অর্ধদিবস কর্মবিরতি

কর্মচারীদের আন্দোলনে যাওয়া রাষ্ট্রের ব্যর্থতা: রাজেকুজ্জামান রতন

পরকীয়ার সন্দেহ, ডেমরায় স্ত্রী ও শাশুড়িকে যুবকের ছুরিকাঘাত