রাজধানীর কলাবাগান থানার সেন্ট্রাল রোডের ভূতের গলির ৭৭ নম্বর বাসা থেকে গত ২৬ আগস্ট উদ্ধার হয় শিশু গৃহকর্মী হেনার লাশ। এ ঘটনায় গৃহকর্ত্রী সাথী পারভীন ডলিকে যশোর থেকে গত ৩১ আগস্ট গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সন্তানের খাবার খেয়ে ফেলায় শিশু গৃহকর্মী হেনাকে প্রায়ই ডালঘুটনি, দা, বটি, লাঠি দিয়ে নির্যাতন করতেন ডলি।
আজ রোববার বেলা সাড়ে ১২টায় ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন ডিএমপির রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার ডিসি মোহাম্মদ আশরাফ হোসেন।
মোহাম্মদ আশরাফ হোসেন বলেন, ‘গত ২৬ আগস্ট ফ্ল্যাটের দরজা ভেঙে ওই শিশু গৃহকর্মীর লাশ উদ্ধার করা হয়। পরে শনাক্ত হয়, উদ্ধার হওয়া মরদেহ এতিম শিশু গৃহকর্মী হেনার। সে ২০২০ সাল থেকে সাথী পারভীন ডলির বাসায় কাজ করত। তার শরীরে অনেক নতুন ও পুরোনো আঘাতের চিহ্ন, মুখে ফেনা, শরীর ফোলা দেখা যায়। বাসার সিসি ফুটেজ থেকে আমরা দেখতে পাই, শিশুটির গলায় পা দিয়ে গৃহকর্ত্রী সাথী নির্যাতন করছে। সাথী ঘটনার পরপর তার সন্তান নিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে যায়।’
জিজ্ঞাসাবাদ সূত্রের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, ‘ডালঘুটনি, দা, বটি দিয়ে শিশুটিকে নির্যাতন করা হতো। কখনো লাঠি দিয়ে নির্যাতন করেছে। অপরাধ হলো তাঁর সন্তানের জন্য রাখা খাবার খেয়ে ফেলা এবং খেলার সঙ্গী হিসেবে একজন আরেকজনকে মারা—এমন ছোটখাটো বিষয়ে এই হত্যাকারী নির্যাতন চালাতো। নির্যাতনের ফলে শিশু গৃহকর্মী হেনা মৃত্যুবরণ করে। বিছানায় মল ত্যাগ পর্যন্ত করে ফেলে।’
নির্যাতনের কারণ বিষয়ে এক প্রশ্নের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘নির্যাতনের কারণ একটাই তাঁর নিজের সন্তানের খাবারটা খেয়ে ফেলত। এটাই ছিল শিশু গৃহকর্মীর অপরাধ। এর কারণে মেরে ফেলাটা যে যৌক্তিক হয়নি আসামি নিজেই এখন শিকার করছে।’
আসামির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এলজিইডি মন্ত্রণালয়ের একজন সার্ভেয়ার তিনি। তবে ২০০৩ সালে প্রথমে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে যোগ দেন। পরে ডিপ্লোমা করে ২০১১ সালে সার্ভেয়ার হিসেবে চাকরি পান। ২০১৬ সালে বিএসসি করে নিজেকে ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে পরিচিত দেন। তাঁর রাজনৈতিক কী পরিচয় সেগুলো আমরা বিবেচনায় আনতে চাই না। আমরা তাঁকে শুধু একজন আসামি হিসেবেই দেখছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘তাঁর দ্বিতীয় স্বামী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ডাক্তার ছিলেন। ২০২০ সালে তাঁদের মধ্যে ডিভোর্স হয়। আর তাঁর প্রথম স্বামী ছিল একজন ড্রাইভার। এলজিইডিতে চাকরি করা অবস্থায় তাঁর সঙ্গে বিয়ে হয়। পরে সার্ভেয়ার হিসেবে চাকরি হলে তাঁকে ডিভোর্স দেয়। ১২ বছর তাঁর স্বামী ছিল না। ২০১৯ সালে এসে দ্বিতীয় স্বামীর সঙ্গে বিয়ে হয়। এ সময় তাঁদের যমজ বাচ্চার জন্ম হয়। একটি বাচ্চা মারা যায় আরেকটি বাচ্চা জীবিত রয়েছে। সেই বাচ্চাকে লালনপালন করার জন্যই হেনাকে আনা হয়।’