ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষ মঙ্গলবার সকালে তীব্র হলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ সদস্যদের সেভাবে মাঠে দেখা যায়নি। যদিও গতকাল রাতে একই সংঘর্ষের সময় বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্য ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। একদিকে যখন পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে, ঠিক তখনই পুলিশের এমন অনুপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
শেষ পর্যন্ত জবাব মিলেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের কাছেই। অবশ্য ততক্ষণে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আহত শিক্ষার্থী, সাংবাদিক ও ব্যবসায়ীদের সংখ্যা ৪০ ছাড়িয়ে গেছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষা কমিটির বৈঠক শেষে পুলিশ কমিশনার শফিকুল ইসলাম বলেছেন, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ ‘সাবধানতা অবলম্বন’ করতে গিয়েই ঘটনাস্থলে যাওয়া বা অ্যাকশনে যাওয়া থেকে বিরত ছিল। তা ছাড়া পরিস্থিতি খারাপের দিকে গেলেও সংগত কারণেই শিক্ষার্থীদের ওপর তারা গুলি চালাতে পারত না।
একই সময়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী ও নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীদের মধ্যকার অনাহূত ঘটনা নিয়ে প্রথমে তর্কাতর্কি, পরে মারামারি এবং একপর্যায়ে তা সহিংসতায় রূপ নেয়। পুলিশ চরম ধৈর্যের সঙ্গে বিষয়টি মোকাবিলা করছে। সহিংস ঘটনায় সাংবাদিকসহ অনেকেই আহত হয়েছেন, তাঁদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই পরিস্থিতি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, গতকাল রাতে পুলিশি হামলার প্রতিবাদে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা মঙ্গলবার বেলা ১১টায় মানববন্ধন কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন। তার আগেই বেলা সাড়ে ১০টার দিকে কলেজের হলগুলোতে খবর যায় যে, ব্যবসায়ীরা কলেজের প্রধান ফটকে ঢিল ছুড়ছেন। এই খবর পেয়ে মঙ্গলবার সকালে সব হল থেকে শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে আসেন। আবারও সংঘর্ষ শুরু হয়। কলেজের প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান নেন ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা। আর ব্যবসায়ীরা অবস্থান নেন চন্দ্রিমা মার্কেটের সামনে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, এরপর দুই পক্ষই একে অপরের দিকে ঢিল ছুড়তে শুরু করে। পাল্টাপাল্টি ধাওয়া চলতে থাকে। কয়েক দফা ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনাও দেখা গেছে। বিক্ষুব্ধদের দুই পক্ষের হাতেই ছিল দেশীয় অস্ত্র। আহত হন বেশ কয়েকজন।
এমন পরিস্থিতিতে দুপুর ১টা পর্যন্ত কোনো পুলিশ সদস্যদের দেখা মেলেনি ওই এলাকায়। পরে দুপুরের পর পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। গিয়েই কাঁদানে গ্যাস ছোড়ার পর শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান।
বেলা ৩টার দিকে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ঢাকা কলেজের ভেতর থেকে ইটপাটকেল ছুড়তে দেখা গেছে শিক্ষার্থীদের। ওদিকে ব্যবসায়ীরা লাঠিসোঁটা নিয়ে চন্দ্রিমা মার্কেটের সামনে অবস্থান করছেন। পুরো রাস্তায় পুলিশ অবস্থান করছে। পরিস্থিতি আগের তুলনায় কিছুটা শান্ত হয়েছে।