গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ থানার জনসেবা জেনারেল হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে শরীরে ভুল গ্রুপের রক্ত দেওয়ায় প্রসূতির মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় ডায়াগনস্টিকের পরিচালক, চিকিৎসক ও নার্সসহ ৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
র্যাব জানায়, অপারেশনের পরে প্রসূতির শরীরে এবি পজিটিভ রক্তের পরিবর্তে বি পজিটিভ রক্ত প্রবেশ করানো হয়। এতেই রোগীর অবস্থার অবনতি হয়। পরবর্তীতে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় আনার পথে অ্যাম্বুলেন্সেই রোগীর মৃত্যু হয়।
গ্রেপ্তাররা হলেন-হাসপাতাল পরিচালক বন্যা আক্তার (৩১), ওটি বয় মো. আশিকুর রহমান (২৫), সিনিয়র নার্স সংগিতা তেরেজা কস্তা (৩৩), জুনিয়র নার্স মেরী গমেজ (৪০), নার্স সীমা আক্তার (৩৪) ও রিসিপশনিস্ট শামীমা আক্তার (৩২)।
আজ বুধবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
ভুল চিকিৎসায় প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনায় উপজেলা স্বাস্থ্য অফিসের নির্দেশনায় কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গাইনি ডাক্তার সানজিদা পারভীনকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এই ঘটনায় হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল মঙ্গলবার (২৩ আগস্ট) রাতে র্যাব-১ এর অভিযানে পরিচালকসহ ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় চিকিৎসা সংক্রান্ত তথ্য ও হাসপাতাল পরিচালনার মেয়াদ উত্তীর্ণ নথিপত্র উদ্ধার করা হয়।
প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে কমান্ডার খন্দকার মঈন জানান, জনসেবা জেনারেল হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়মিত কোনো ডাক্তার ছিল না। মেয়াদোত্তীর্ণ কাগজে চিকিৎসা সেবা চালিয়ে যাচ্ছিল হাসপাতালটি। হাসপাতালটিতে গড়ে প্রতি মাসে ২৫ থেকে ৩০টি সিজারিয়ান অপারেশনসহ প্রায় ৫০ টির অধিক বিভিন্ন অপারেশন করা হতো। এ ক্ষেত্রে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগী প্রাপ্তি সাপেক্ষে অন কলে থাকা বিভিন্ন ডাক্তারদের ডাকা হতো। সিজারিয়ান অপারেশনের ক্ষেত্রে একজন গাইনোকোলজিষ্টের অপারেশন চার্জ ছিল ৩ হাজার টাকা এবং এনেস্থলজিষ্টের দেড় হাজার টাকা সর্বমোট সাড়ে চার হাজার টাকা। ক্লিনিক কর্তৃক রোগী ভেদে বিভিন্ন প্যাকেজে ১০-১৫ হাজার টাকা নেওয়া হতো। হাসপাতালে কর্মরত সকল নার্স এবং স্টাফদের প্রতি মাসে মোট বেতন ছিল দেড় লাখ টাকা। আর ডাক্তারদের রোগী প্রাপ্তি সাপেক্ষে ভিজিট দেওয়া হতো। এছাড়াও হাসপাতালটিতে অল্প কিছু টেস্টের ব্যবস্থাও ছিল।
গ্রেপ্তার বন্যা আক্তারকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে খন্দকার মঈন জানান, বন্যা ডিগ্রি পাস। হাসপাতালের অন্যতম অংশীদার ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তাঁর কোনো নার্সিং ডিগ্রি নেই। তবে সে স্থানীয় একটি হাসপাতালে ৭ বছর নার্সিং ও আড়াই বছর ম্যানেজার হিসেবে কাজ করেছিল। পরবর্তীতে সে ২০১৮ সালে আটজনের যৌথ মালিকানায় এই ডায়াগনস্টিক সেন্টার চালু করে। বর্তমানে হাসপাতালটির মালিক তিনজন বলে জানা যায়।
খন্দকার মঈন আরও জানান, জনসেবা জেনারেল হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কাগজপত্র বিশ্লেষণে জানা যায়, হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের লাইসেন্সের মেয়াদ ২০২১ সালের ৩০ জুন শেষ হয়েছে। এছাড়া ট্রেড লাইসেন্স চলতি বছরের ৩০ জুন শেষ হয়েছে। এছাড়া হাসপাতালটির ফায়ার লাইসেন্স ও শিল্প প্রতিষ্ঠান লাইসেন্স মেয়াদ উত্তীর্ণ। তবে হাসপাতালের কোনো পরিবেশগত ছাড়পত্র পাওয়া যায়নি। গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।