ভোলার চরফ্যাশনে প্রথমবারের মতো বস্তায় আদা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন কৃষকেরা। বন্যা, লোনাপানি ও জমির সংকটের কারণে যখন অনেকেই চাষাবাদ থেকে পিছিয়ে পড়ছেন, তখন কম খরচে, কম জায়গায়, ঝুঁকিমুক্তভাবে আদা চাষ কৃষকদের জন্য নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে।
চরফ্যাশন উপজেলার আসলামপুর, হাজারীগঞ্জ, জাহানপুর, আব্দুল্লাহপুর, চর মাদ্রাজ ও পৌরসভাসহ বিভিন্ন এলাকায় বস্তায় আদা চাষ শুরু হয়েছে। চলতি মৌসুমে ১৩ হাজার ৫০০ বস্তায় আদা চাষ হয়েছে, যা কৃষি বিভাগের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা ১২ হাজার ৮০০-এরও বেশি।
আসলামপুরের কৃষক মো. বারেক বলেন, ‘আগে বর্ষায় জমিতে কিছু করা যেত না। এখন বারোমাস বস্তায় আদা চাষ করতে পারছি। আমি ৩০০ বস্তায় চাষ করেছি। সহজেই সার-পানি দেওয়া যায়, কষ্টও কম।’
পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মাওলানা ইউসুফ বলেন, ‘আমার উঠানে এবং রাস্তার পাশে ২০০ বস্তায় আদা চাষ করছি। প্রতিটি বস্তায় দুটি করে আদা লাগিয়েছি। ১০-১২ মাসে একেক বস্তায় তিন কেজি আদা পাওয়া যাবে বলে আশা করছি।’
বস্তায় চাষের ফলে মাটি সহজে সরানো যায়, উঁচু জায়গায় রাখা যায়, ফলে বন্যার পানি থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। পুরোনো চালের বস্তা, প্লাস্টিকের বস্তা কিংবা পরিত্যক্ত বালুর বস্তাই এখানে মূল মাধ্যম। খরচও কম। বীজ আদা, কিছু জৈব সার ও বেলে দোআঁশ মাটি হলেই চলবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাজমুল হুদা বলেন, ‘এখানে বারি আদা-১ ও বারি আদা-২ জাতের চাষ হচ্ছে। বস্তায় শুধু আদা নয়, কচু, আলু, হলুদ, এমনকি মিষ্টি আলুও চাষ করা সম্ভব। এটি আমাদের কৃষিকে বহুমুখী করে তুলবে।’
তিনি জানান, কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে কৃষি বিভাগ প্রশিক্ষণ, প্রদর্শনী ও উপকরণ সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। চলতি মৌসুমে বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় মোট ১৩ হাজার ৫০০ বস্তায় আদা চাষ হচ্ছে।
এই পদ্ধতিতে পোকামাকড়ের আক্রমণ কম হয় এবং সমস্যা দেখা দিলে আক্রান্ত বস্তা আলাদা করে রাখা যায়। এতে রাসায়নিক ব্যবহারের প্রয়োজন কমে, যা স্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য ভালো। অনেক নারী উদ্যোক্তা ও তরুণ ঘরের আঙিনা, বারান্দা বা ছায়াযুক্ত জায়গায়ও বস্তায় চাষ করছেন।
কৃষি অফিস বলছে, বাজারে আদার চাহিদা ও দাম সারা বছর থাকে। তাই এই উদ্যোগ শুধু কৃষকদের বিকল্প আয়ের উৎসই নয়, বরং স্থানীয় অর্থনীতিতে নতুন প্রাণও যোগ করছে।