পটুয়াখালী-মির্জাগঞ্জ সড়কের পায়রা নদীর পায়রাকুঞ্জ এলাকায় একটি সেতুর দাবিতে ২০১৬ সালে চিঠি লিখেছিল সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র শীর্ষেন্দু। আবেদনের জবাবে সে সময় সেতু নির্মাণে প্রতিশ্রুতি দেন প্রধানমন্ত্রী। আর এরই ধারাবাহিকতায় প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে ৫ বছর পর কাজ শুরু করেছে সেতু বিভাগ।
ইতি মধ্যে জমি অধিগ্রহণ, পরামর্শক ও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান নিয়োগ শেষ পর্যায়ে। এতে আনন্দিত স্কুলছাত্র শীর্ষেন্দু বিশ্বাস, তার পরিবার এবং স্থানীয়রা।
বুধবার বিকেলে সেতু এলাকা পরিদর্শনে আসেন বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক ও সেতু বিভাগের সচিব মো. আবু বকর ছিদ্দীক। এ সময় জেলা জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা, সেতু কর্তৃপক্ষ ও সেতু বিভাগের কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
সেতু বিভাগ সূত্র জানা যায়, পায়রা নদীর ওপর সেতু নির্মাণে প্রকল্পের ডিপিপি ২০২০ সালে মার্চে একনেক সভায় অনুমোদিত হয়। প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ৪২ কোটি টাকা। ২০২৫ সালের মধ্যে সেতুটির নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। বর্তমানে ডিপিপি অনুসারে ১০ একর জমি অধিগ্রহণের প্রশাসনিক অনুমোদন শেষে অধিগ্রহণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। অতিরিক্ত জমি ডিপিপি সংশোধনপূর্বক অধিগ্রহণ করা হবে। গত ১২ আগস্ট ঠিকাদার নিয়োগের দরপত্র জমা নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে দরপত্র মূল্যায়ন চলমান রয়েছে। সেতুর মোট দৈর্ঘ্য ১৬৯০ মিটার। এর মধ্যে মাঝের ১০০ মিটার দৈর্ঘ্যের ৯টি স্প্যান এবং উভয় প্রান্তে ৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের ২টি স্প্যান ও ৩০ মিটার দৈর্ঘ্যের ২৩টি স্প্যান।
সেতুর প্রাথমিক ডিজাইন অনুযায়ী বিআইডব্লিউটিএ (BIWTA) এর শ্রেণিবিন্যাস অনুযায়ী এই রুটটি ১ম শ্রেণির হওয়ায় নৌযান চলাচলের সুবিধার্থে সেতুর ভার্টিক্যাল ক্লিয়ারেন্স (vertical clearance) ধরা হয়েছে ১৮ দশমিক ৩ মিটার। প্রকল্প বাস্তবায়নকালীন প্রকল্প এলাকার জনগণের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। তা ছাড়া নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার পরও সেতুর রক্ষণাবেক্ষণেও নতুন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। উক্ত এলাকায় নতুন নতুন শিল্প কারখানা প্রতিষ্ঠিত হবে। এতে কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ ওই এলাকার জনগণের আয় বৃদ্ধি পাবে। যা জিডিপিতে অবদান রাখবে।
এ দিকে কচুয়া-বেতাগী-পটুয়াখালী সড়কের ১৭ তম কিলোমিটারে পায়রা নদীর ওপর পায়রাকুঞ্জ নামক স্থানে ১৬৯০.০০ মিটার দীর্ঘ প্রস্তাবিত সেতুটি নির্মিত হলে হলে মির্জাগঞ্জ উপজেলার সঙ্গে পটুয়াখালী সদরের ভ্রমণ সময় প্রায় দেড় ঘণ্টা হ্রাস পাবে এবং লেবুখালী ও পদ্মা সেতুর মাধ্যমে মির্জাগঞ্জ উপজেলার সঙ্গে ঢাকার সরাসরি ও নিরবচ্ছিন্ন সড়ক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হবে।
মির্জাগঞ্জ উপজেলার মো. জাকির হোসেন বলেন, ‘পায়রাকুঞ্জ সেতু হবে এটা ছিল আমাদের স্বপ্ন। ঝুঁকি নিয়ে খেয়া পারাপার করতে হতো আজ এখানে সেতু হবে। ধন্যবাদ জানাই প্রধানমন্ত্রীকে।’
শীর্ষেন্দু বিশ্বাস বর্তমানে সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষায় নবম শ্রেণি অধ্যয়নরত।
শীর্ষেন্দু বলেন, ‘২০১৬ সালে আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে এই ব্রিজের জন্য চিঠি দিয়েছিলাম সেই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে আজ এই সেতুটি বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে। আমি সহ পটুয়াখালীবাসী অনেক আনন্দিত।’
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক ও সেতু বিভাগের সচিব মো. আবু বকর ছিদ্দীক বলেন, ‘এটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিজস্ব উপহার। একজন স্কুলছাত্রের চিঠিতে তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের সে মোতাবেক নির্দেশনা দিয়েছেন। তখনই আমরা কাজ শুরু করেছি। জমি অধিগ্রহণ শেষে মূল কনস্ট্রাকশনের কাজ শুরু হবে।'