রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে খুনের মামলার আসামি আয়েশা আক্তারকে নিয়ে প্রথমবারের মতো ঝালকাঠির নলছিটিতে নিজ বাড়িতে আসেন জামাল সিকদার রাব্বি। ১৫ বছর আগে বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ হলে তিনি বাড়ি ছাড়েন। এরপর আর তাঁকে এলাকায় ফিরতে দেখা যায়নি।
আজ বুধবার সকালে হঠাৎ আয়েশাকে নিয়ে বাড়িতে হাজির হন রাব্বি। আয়েশাকে সবার কাছে পরিচয় করিয়ে দেন তাঁর স্ত্রী হিসেবে। কিন্তু কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তাঁদের বাড়িতে এসে হাজির হয় মোহাম্মদপুর থানা-পুলিশ। বেরিয়ে আসে, তিনিই আলোচিত জোড়া খুনের মামলার পলাতক আসামি আয়েশা।
পুলিশ, স্থানীয় বাসিন্দা ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জামাল স্ত্রীকে নিয়ে বাড়িতে বেড়ানোর জন্য নয়, আত্মগোপনে এসেছিলেন। দীর্ঘ বছর পর স্ত্রীকে নিয়ে বাড়িতে আসার কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে আলোচিত হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হওয়ার ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
আজ দুপুরে ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার দপদপিয়া ইউনিয়নের কয়ারচর এলাকা থেকে মোহাম্মদপুর থানা-পুলিশ আয়েশাকে গ্রেপ্তার করে। তিনি নরসিংদীর সলিমগঞ্জ এলাকার রবিউল ইসলামের মেয়ে। হত্যাকাণ্ডের পর ঢাকা থেকে নলছিটির দপদপিয়া ইউনিয়নের কয়ারচর এলাকায় জামালের সঙ্গে তাঁর বাড়িতে আসেন আয়েশা। পুলিশের অভিযানে তাঁর স্বামী জামাল সিকদার রাব্বিকেও আটক করা হয়েছে। তিনি ওই এলাকার জাকির সিকদারের ছেলে। রাব্বি ও আয়েশা ঢাকায় থাকেন। একসময় কারখানার শ্রমিক ছিলেন এই যুবক।
দপদপিয়া ইউনিয়ন পরিষদের কয়ারচর ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আব্দুল মন্নান মৃধা চুন্নু বলেন, প্রায় ১৫ বছর আগে জামাল সিকদার রাব্বির বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ হয়। তখন রাব্বিকে রেখে অন্য সন্তানকে নিয়ে বাড়ি থেকে চলে যান তাঁর মা। এরপর রাব্বি বাড়ি থেকে বের হয়ে যান। পরে কখনো তাঁকে এই এলাকায় দেখা যায়নি। আজ সকালে তিনি একটি মেয়েকে (আয়েশা) নিয়ে বাড়িতে আসেন এবং তাঁকে তাঁর স্ত্রী হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেন। রাব্বির বাবা প্রবাসে থাকেন। তাঁর বৃদ্ধ দাদি একাই বাড়িতে থাকেন।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, রাব্বি তাঁর নানার সহায়তায় চাচার বাসায় ওঠেন। তিনি নিজেও বাবার বাড়ি চিনতে পারছিলেন না। এলাকাবাসী জানতেন, রাব্বি ধনী পরিবারের কোনো মেয়েকে বিয়ে করেছেন। আজ সকালে রাব্বি স্ত্রীকে নিয়ে চাচার বাড়িতে পৌঁছান। দুপুরে ঢাকা থেকে পুলিশ এসে মামলার আসামি আয়েশাকে গ্রেপ্তার এবং রাব্বিকে আটক করে নিয়ে যায়।
ঝালকাঠিতে অভিযানে অংশ নেওয়া মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. সহিদুল ইসলাম মাসুম সাংবাদিকদের বলেন, মোহাম্মদপুরে গৃহকর্তার বাসা থেকে কিছু মালামাল চুরি করার পর সেখানে ধস্তাধস্তি হয়। এ সময় আয়েশা আক্তার ছুরিকাঘাত করে গৃহকর্তার স্ত্রী লায়লা আফরোজ (৪৮) ও তাঁর মেয়ে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজকে (১৫) হত্যা করেন। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় অভিযান চালিয়ে আয়েশাকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে তিনি এসব কথা বলেন।
অভিযানে তেজগাঁও বিভাগের সহকারী পুলিশ কমিশনার আব্দুল্লাহ আল মামুনও ছিলেন। পরে আয়েশাকে নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন পুলিশ সদস্যরা।
এর আগে গত সোমবার সকালে শাহজাহান রোডের ১৪ তলা একটি আবাসিক ভবনের সপ্তম তলায় লায়লা আফরোজ ও তাঁর মেয়ে নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। গতকাল মঙ্গলবার তাঁদের মরদেহ নাটোরে দাফন করা হয়েছে। মামলার এজাহারে বাসা থেকে মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ, স্বর্ণালংকার, নগদ টাকাসহ মূল্যবান জিনিস খোয়া যাওয়ার কথা বলা হয়েছে।
ভবনের ভেতরের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, হত্যাকাণ্ডের পর এক নারী স্কুলড্রেস পরে কাঁধে ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছেন। চার দিন আগে আয়েশা পরিচয় দিয়ে ওই বাসায় গৃহকর্মীর কাজ নেওয়া তরুণী এই জোড়া খুনে জড়িত বলে সন্দেহ হয় স্বজনদের।
ঘটনার পর থেকে ওই তরুণী পলাতক ছিলেন। হত্যাকাণ্ডের পর সন্দেহভাজন গৃহকর্মীকে আসামি করে সোমবার রাতে লায়লা আফরোজের স্বামী আ জ ম আজিজুল ইসলাম বাদী হয়ে মোহাম্মদপুর থানায় মামলা করেন। লায়লা ও তাঁর মেয়ের মরদেহের ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল গ্রামের বাড়ি নাটোর পৌরসভার দক্ষিণ বড়গাছায় নেওয়া হয়। জোহরের নামাজের পর জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাঁদের মরদেহ দাফন করা হয়।