পিরোজপুরের কঁচা নদীর বিভিন্ন স্থানে জেগে ওঠা ডুবোচরে মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে টগড়া-চরখালী রুটের ফেরি চলাচল। ফলে বিপাকে পড়েছে ঢাকাসহ দক্ষিণাঞ্চলের ১৪টি রুটের যানবাহন চলাচল। অপরদিকে, হুমকির মুখে পড়েছে জেলা শহরের সঙ্গে উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা।
জানা যায়, জেলার প্রধান বৃহৎ নদী কঁচা নদীর স্রোত কমে যাওয়ায় ও যথাযথ ড্রেজিংয়ের অভাবে এ নদীর টগরা পয়েন্টে আরও প্রায় এক দশক আগে থেকে চর পড়া শুরু করেছে। বর্তমানে ফেরিঘাট পয়েন্টের ৪ কিলোমিটার উজানে বেকুটিয়া ফেরি নির্মিত হওয়ায় চরের অবস্থা আরও প্রকট আকার ধারণ করেছে। এ সমস্যা নদীর প্রায় অর্ধেকটা জুড়েই। প্রায় ২ কিলোমিটার চওড়া এ নদীটি পাড় হতে বছরের অন্যান্য সময় ২০-২৫ মিনিট সময় লাগলেও শীত মৌসুমে এর চিত্র পুরোটাই ভিন্ন। এ সময় নদীতে পানি কমে যাওয়ায় প্রায়ই ফেরি ডুবো চড়ে আটকা পড়ে। এতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা নদীর মাঝেই ফেরি আটকে থাকে। যতক্ষণ নদীতে জোয়ার না আসে ততক্ষণ এ অপেক্ষা চলতে থাকে। ফলে বিপাকে পড়ে টগড়া-চরখালী দিয়ে চলাচল করা ঢাকাসহ দক্ষিণাঞ্চলের ১৪টি রুটের যানবাহন। ফলে অনেক ক্ষেত্রে ব্যাহত হচ্ছে প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড ও জরুরি চিকিৎসা ব্যবস্থা।
যাত্রী আব্দুল মতিন বলেন, চরের কারণে ফেরি চলাচলে অনেক বেশি সমস্যার পড়তে হচ্ছে। দিনে ও রাতে প্রায়ই সময় ফেরি চরে আটকে যায়। ফলে দীর্ঘ সময় ধরে যাত্রীদের অপেক্ষা করতে হয়। নদী খনন ও নদী শাসনের প্রয়োজন। কিন্তু কঁচা নদীর ক্ষেত্রে তা দেখা যায় না। দ্রুত এ সমস্যার সমাধান করা না হলে ভোগান্তি আরও বাড়বে। যেন দ্রুত এ সমস্যার সমাধান করা হয় সে জন্য কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
বাস যাত্রী রহমান সেখ বলেন, কঁচা নদীর মাঝখানে চর জেগে উঠেছে। মাঝখানে ও পাশে একাধিক ডুবোচর রয়েছে, সেগুলো ভাটার সময় দেখা যায়। এ কারণে ফেরি চলাচলে অনেক সমস্যা হয়। অনেক সময় ধরে অপেক্ষা করতে হয় আমাদের। আমরা এ ভোগান্তি থেকে মুক্তি চাই।
বাস চালক জয়নাল আবেদিন বলেন, নদীতে ফেরি আটকে থাকায় মূল্যবান সময় নষ্টসহ নানাবিধ সমস্যায় পড়তে হয় গাড়ির চালক ও যাত্রীদের। এ ছাড়া ভাটার সময় পন্টুন অনেক নিচে নেমে যাওয়ায় ফেরিতে গাড়ি উঠতেও অনেক সমস্যা হয়। নদী খনন করা না হলে হয়তো স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যেতে পারে এ রুটের ফেরি চলাচল।
ফেরি চালক জালাল বলেন, অতি দ্রুত এ সমস্যার সমাধান করা প্রয়োজন। শীতের রাতে নদীর মধ্যে চরে বেঁধে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকতে হয়। প্রতিদিন টগড়া-চরখালী ফেরি ঘাট থেকে প্রায় সহস্রাধিক যানবাহন ও ৮ থেকে ১০ হাজার মানুষ পারাপার করেন।
পিরোজপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, কঁচা নদীর নাব্যতা সংকটের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মতে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা প্রশাসক আবু আলী মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, কঁচা নদীতে নাব্যতা সংকটের বিষয়টি আমরা জানি। এ বিষয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। আমরা নৌপরিবহন অধিদপ্তরে কথা বলে এ সমস্যা সমাধানে চেষ্টা করব।