‘নির্দোষ বাবাটাক কেন মারল? কেন টুকরা টুকরা করল। বাবা ছাড়া হামাক কায় দেখপে। কায় মাথাত হাত দিয়া দোয়া নিবে। কী দোষে মোর বেটাক টুকরা টুকরা করিল?’ একমাত্র ছেলের দেহের টুকরা টুকরা ছবি মোবাইল ফোনে দেখার পর এভাবেই বিলাপ করছিলেন আশরাফুল হকের মা বৃদ্ধা এছরা খাতুন।
আশরাফুল হকের বাড়ি রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের শ্যামপুর নয়াপাড়া গ্রামে। তিনি কাঁচামাল আমদানিকারক ছিলেন। বিভিন্ন দেশ থেকে কাঁচামাল এনে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন আড়তে দিতেন। ১১ নভেম্বর তিনি ব্যবসায়ী কাজে ঢাকায় যান। এরপর গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানী ঢাকার হাইকোর্টসংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহ মাঠের গেটের পাশে ড্রাম থেকে তাঁর খণ্ডিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
আজ শুক্রবার আশরাফুল হকের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, পাকা বাড়ি রং করার জন্য চুনকাম করা হয়েছে। তাঁকে হত্যার খবরে প্রতিবেশী, আশপাশের গ্রামের মানুষজন উঠানে ভিড় করছেন। বাড়ির ভেতরে আহাজারি করছেন স্বজনেরা। পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমেছে। মোড়ে মোড়ে তাঁর হত্যাকাণ্ড নিয়ে চলছে নানা আলোচনা।
পরিবারের লোকজন জানান, দীর্ঘদিন মালয়েশিয়ায় থাকার পর দেড় মাস আগে দেশে আসেন জরেজ। এরপর থেকে আশরাফুল হকের সঙ্গে যুক্ত হন। জাপান যাওয়ার জন্য জরেজ আশরাফুলের কাছে ১০ লাখ টাকা চান। ঢাকা যাওয়ার আগে ৬ থেকে সাত হাজার বস্তা আলু একসঙ্গে বিক্রি করেন।
জরেজের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, পুলিশ জরেজের বাবা মোয়াজ্জেমকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়েছে। বাড়িতে থাকা মোবাইল ফোনও জব্দ করেছে পুলিশ। জরেজের স্ত্রী উম্মে কুলসুম বলেন, ‘২০ বছরের বেশি সময় ধরে ওদের বন্ধুত্ব। মঙ্গলবার চট্টগ্রামে আশরাফুল ভাইয়ের ব্যবসার টাকা কালেকশন করার কথা বলি বাড়ি থাকি বের হয়। বুধবার রাতে কথা হইছে। তখন চট্টগ্রামে পৌঁছাইছে বলছে। ঢাকা কবে আসছে, ঢাকায় যে আছে, সেটাও জানি না। আমি জানি চট্টগ্রামে আছে।’
এ বিষয়ে বদরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম আতিকুর রহমান বলেন, ‘এ ঘটনায় ঢাকায় মামলা হবে। আমরা সহযোগিতা করছি। নিহত আশরাফুলের শ্যালক ও বোন সেখানে গেছেন। লাশ এলে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।’