হোম > বিশ্লেষণ

দ্য ডিপ্লোম্যাটের নিবন্ধ

চিন্ময় দাসের উত্থান ও বাংলাদেশে বিজেপির হিন্দুত্ববাদের বিকাশ

স্নিগ্ধেন্দু ভট্টাচার্য

গত ২৬ অক্টোবর শুক্রবার বিকেলে চট্টগ্রাম নগরীর লালদীঘি মাঠে ৮ দফা দাবিতে সনাতন জাগরণ মঞ্চের গণসমাবেশে চিন্ময় দাস। ছবি: আজকের পত্রিকা

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনার পতনের পর গত ৯ আগস্ট ছিল ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের দ্বিতীয় দিন। সেদিনই রাজধানী ঢাকার শাহবাগসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দুরা—যারা বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যার ৮ শতাংশ—রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানাতে শুরু করেন। তাঁদের অভিযোগ, ৫–৮ আগস্টের মধ্যে হিন্দুদের বাড়িঘর, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও উপাসনালয়ে হামলা হয়েছে।

বাংলাদেশের সংখ্যালঘু অধিকার সংগঠনগুলো—যেমন: বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ এবং বাংলাদেশ পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের ডাকে সাড়া দিয়ে হাজারো মানুষ রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানায়। প্রতিবাদের স্লোগানে নিরাপত্তা ও বিচারের দাবির পাশাপাশি কিছু লোক ‘জয় শ্রীরাম’ বলেও স্লোগানও দেয়। এটি ভারতের হিন্দু জাতীয়তাবাদের সঙ্গে সম্পর্কিত একটি বিতর্কিত স্লোগান।

গত ১১ আগস্ট—প্রতিবাদের তৃতীয় দিন—বাংলাদেশ হিন্দু জাগরণ মঞ্চ (বিএইচজেএম) নামে একটি সংগঠনের আবির্ভাব ঘটে। সংগঠনের সমন্বয়কারী এবং মুখপাত্র হিসেবে নিহার হালদার, জুয়েল আইচ অর্ক, জয় রাজবংশী, রনি রাজবংশী এবং প্রদীপ কান্তি দের নাম উঠে আসে। একই দিনে বিএইচজেএমের ফেসবুক গ্রুপটি তৈরি হয়।

বাংলাদেশ হিন্দু জাগরণ মঞ্চ নামটির সঙ্গে ভারতের হিন্দু জাগরণ মঞ্চের আশ্চর্যজনক মিল আছে। হিন্দু জাগরণ মঞ্চ ভারতে ক্ষমতাসীন দল ভারতীয় জনতা পার্ট—বিজেপির আদর্শিক–সাংগঠনিক অভিভাবক রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) সহযোগী সংগঠন। হিন্দু জাগরণ মঞ্চের নেতাদের অনেকেই বিজেপিতে দায়িত্ব পালন করেছেন।

বাংলাদেশের হিন্দুদের ওপর আক্রমণের বিরুদ্ধে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কলকাতায় প্রথম প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করে হিন্দু জাগরণ মঞ্চ। এই ইস্যুতে ভারতের প্রতিবাদকারী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে হিন্দু জাগরণ মঞ্চই ছিল প্রথম। ৮ আগস্ট ড. ইউনূস শপথ নেওয়ার আগেই এই প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করে সংগঠনটি। কিন্তু বাংলাদেশে এরপর যতই সময় গড়িয়েছে, বিদ্যমান সংখ্যালঘু অধিকার সংগঠনগুলো পিছিয়ে পড়ে এবং নতুন প্ল্যাটফর্ম ‘বাংলাদেশ হিন্দু জাগরণ মঞ্চ’ ক্রমেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।

বিএইচজেএমের মূল সংগঠকেরা সবাই বাংলাদেশ হিন্দু ছাত্র মহাজোট ও হিন্দু যুব মহাজোটের সঙ্গে যুক্ত। এই সংগঠন দুটি যথাক্রমে বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের ছাত্র ও যুব শাখা। বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট হলো হিন্দু অধিকার সংগঠন, এটি ২০০৬ সালে ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত হয়। অনেকেই এই সংগঠনকে বাংলাদেশে হিন্দুত্ববাদের অগ্রদূত হিসেবে চিহ্নিত করে।

আরএসএস এবং এর সহযোগী সংগঠন বিজেপি ও হিন্দু জাগরণ মঞ্চকে একসঙ্গে ‘সংঘ পরিবার’ বা আরএসএস পরিবার নামে ডাকা হয়। তাদের আদর্শ হলো ‘হিন্দুত্ববাদ’ এবং এটিকে তারা ‘হিন্দু সাংস্কৃতিক জাতীয়তাবাদ’ হিসেবে বর্ণনা করে থাকে। যদিও সংঘ পরিবার এটিকে জাতীয়তাবাদ হিসেবে চিহ্নিত করে, কিন্তু এটি কেবল ভারতের বর্তমান ভৌগোলিক সীমার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। সংঘ পরিবার একে ‘অখণ্ড ভারত’ পুনঃপ্রতিষ্ঠার ধারণা হিসেবে প্রচার করে। এই অখণ্ড ভারত মূলত একটি কাল্পনিক রাষ্ট্র, যা আফগানিস্তান থেকে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার, নেপাল ও তিব্বত থেকে শ্রীলঙ্কা পর্যন্ত বিস্তৃত।

এর আগে সংঘ পরিবারের হিন্দুত্ববাদের প্রভাব নেপালেও পৌঁছানোর খবর পাওয়া গেছে। বাংলাদেশে জাতীয় হিন্দু মহাজোট নেতারা এর আগে অখণ্ড ভারত ধারণার পক্ষে প্রচারণা চালিয়ে বিতর্ক উসকে দিয়েছেন একাধিকবার।

এর আগে, ২০২৪ সালের ১২ আগস্ট ‘পূজা পার্বণ’ নামের ৩৪ হাজার ফলোয়ার সংবলিত একটি ফেসবুক পেজ থেকে নিহার হালদার ও সাবেক ইসকন নেতা চিন্ময় দাসকে হিন্দুদের নেতৃত্ব দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। এর পরের কয়েক সপ্তাহে নিহার হালদার ও চিন্ময় দাস হিন্দু প্রতিবাদের গুরুত্বপূর্ণ সংগঠক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন।

নিহার হালদারেরে নেতৃত্বে বাংলাদেশ হিন্দু জাগরণ মঞ্চ দেশে বিভিন্ন স্থানে ৮, ১৩, ২০ ও ২৭ সেপ্টেম্বর অনেকগুলো প্রতিবাদ কর্মসূচির আয়োজন করে। ২৭ সেপ্টেম্বর সংগঠনটি সপ্তাহব্যাপী প্রতিবাদ কর্মসূচি ঘোষণা করে। অন্যদিকে, চিন্ময় দাস চট্টগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ মুখ হিসেবে উঠে আসেন। চট্টগ্রামে হিন্দুদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগে প্রতিবাদগুলো হচ্ছিল মূলত ‘সম্মিলিত সনাতনী ছাত্র সমাজ’–এর ব্যানারে।

তবে ৩০ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ হিন্দু জাগরণ মঞ্চ বিভক্ত হয়ে যায় শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগ ও ভারতের বিজেপির প্রভাব নিয়ে সৃষ্ট টানাপোড়েনের কারণে। নিহার হালদারের ভারত সফর এই বিতর্কের প্রধান কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে। হালদার সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি ভারত সফর করেন। তিনি ত্রিপুরা ও পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাতের ছবি তাঁর ফেসবুক অ্যাকাউন্টে শেয়ার করেন। পরে অবশ্য এই অ্যাকাউন্ট বন্ধ হয়ে যায়।

ছবিগুলো থেকে দেখা যায়, নিহার হালদার ২১ সেপ্টেম্বর ত্রিপুরার বিজেপি সাংসদ প্রতিমা ভৌমিকের সঙ্গে, ২৭ সেপ্টেম্বর কলকাতায় ত্রিপুরা ও মেঘালয়ের সাবেক গভর্নর তথাগত রায়ের সঙ্গে, ১ অক্টোবর পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির সাংস্কৃতিক সেলের আহ্বায়ক রুদ্রনীল ঘোষের সঙ্গে, ২৮ অক্টোবর কলকাতার বিজেপি দপ্তরে পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি বিধায়ক অসীম সরকার এবং ৭ নভেম্বর দিলীপ ঘোষের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। দিলীপ ঘোষ পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির সভাপতি থাকাকালে হিন্দু জাগরণ মঞ্চের কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন।

এরপর ঢাকায়, ১ অক্টোবর বাংলাদেশ হিন্দু জাগরণ মঞ্চ এক বিবৃতি দিয়ে জানায়, নিহার হালদারকে দেশের বাইরে থাকার কারণে সব দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে এবং তিনি বিদেশে অবস্থানকালে যেসব মন্তব্য করেছেন তার জন্য সংগঠন কোনো দায় নেবে না। এরপর, অন্য একটি পক্ষ আরেকটি বিবৃতি দিয়ে জানায়, বাংলাদেশে হিন্দু জাগরণ মঞ্চ এখন ‘বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চ (বিএসজেএম)’ নামে পরিচিত হবে। তারা নিহার হালদারকে সমন্বয়ক এবং চিন্ময় দাসকে মুখপাত্র হিসেবে ঘোষণা করে।

অক্টোবর-জুড়ে বাংলাদেশ হিন্দু জাগরণ মঞ্চ এবং বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চ পৃথকভাবে প্রতিবাদ সংগঠিত করলেও পরে বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে নিহার হালদার বাংলাদেশে ফিরে আসেন এবং চিন্ময় দাসের সঙ্গে দেখা করেন। ১৭ নভেম্বর বিএসজেএম ঘোষণা দেয়, তারা বাংলাদেশ সম্মিলিত সংখ্যালঘু জোটের সঙ্গে মিলে ‘বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোট’ প্রতিষ্ঠা করবে এবং এর মুখপাত্র হবেন চিন্ময় দাস।

এদিকে, হিন্দুরা যখন তাদের ওপর আক্রমণ–নির্যাতনের অভিযোগ তুলে প্রতিবাদ করছিল, তখন প্রায়শই ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান দেওয়া হচ্ছিল। তবে বাংলাদেশে অনেকেই, বিশেষ করে ছাত্র অধিকার আন্দোলনের নেতারা প্রতিবাদকারীদের ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান তোলা নিয়ে আপত্তি জানাতে শুরু করেন। তাঁরা ইঙ্গিত করেন, ভারতের মুসলিমবিরোধী আক্রমণে ক্ষেত্রে উসকানি হিসেবে এই স্লোগানের ভূমিকা আছে।

তবে ২২ নভেম্বর চিন্ময় দাস দৃঢ়ভাবে এই ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান দেওয়ার পক্ষে যুক্তি দেন। তিনি বলেন, ‘আল্লাহু আকবর’ স্লোগানটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো বারবার উচ্চারণ করার পরও এটি সন্ত্রাসী স্লোগান হিসেবে গণ্য হয় না, তাই ‘জয় শ্রীরাম’কেও বিজেপি–আরএসএসের সঙ্গে যুক্ত করা উচিত নয়।

ইতিহাস বলে, ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগানটি কেবল ১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ধ্বংস-পরবর্তী আন্দোলনের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়, বরং বিভিন্ন সময়ে মুসলিমদের, এমনকি অন্যান্য ধর্মের জনগণের প্রতি আক্রমণ এবং হয়রানির ক্ষেত্রেও ব্যবহৃত হয়েছে। ভারতে বিজেপির সমালোচকেরা বলেন, ‘জয় সিয়া রাম’, ‘হে রাম’, ‘রাম রাম’, ‘হরে কৃষ্ণ, হরে রাম’ স্লোগানের মাধ্যমে ঐতিহ্যবাহী উপায়ে হিন্দুরা রামকে পূজা করেন। কিন্তু ‘জয় শ্রীরাম’ পুরোপুরি এক রাজনৈতিক স্লোগান।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা মনে করেন, বাংলাদেশে হিন্দুত্ববাদী মতাদর্শের শিকড় ২০০৬ সালে বিজেএইচএম বা হিন্দু মহাজোট প্রতিষ্ঠার সময় থেকে। তাদেরই একটি অংশ ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান ব্যবহার করা শুরু করে। পরের বছর তারা ছোট পরিসরে রাম নবমীও উদ্‌যাপন শুরু করে, যেটি ভারতের হিন্দু জাতীয়তাবাদীরা শক্তি প্রদর্শনের উৎসব হিসেবে বিবেচনা করে থাকে। হিন্দু মহাজোট পরে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও পা বাড়ায় এবং রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) সহযোগী সংগঠন বিশ্ব হিন্দু পরিষদের (ভিএইচপি) সঙ্গে সাংগঠনিক সম্পর্ক শুরু করে।

২০১৬ সালে বিজেএইচএম বিভক্ত হয়। পরে তা মিটমাট হলেও ২০২০ সালের শুরুতে এটি আবার বিভক্ত হয়। প্রভাস চন্দ্র রায় এবং পলাশ কান্তি দের নেতৃত্বে একটি অংশ মহাসচিব গোবিন্দ প্রামাণিককে পুনরায় বহিষ্কার করে এবং প্রামাণিক পাল্টা প্রতিক্রিয়া হিসেবে অপর অংশকে বহিষ্কার করেন। বিভক্তির কারণ ছিল প্রামাণিকের রাজনৈতিক অবস্থান—তিনি আওয়ামী লীগকে ‘নিঃশর্ত সমর্থন’ দেওয়ার হিন্দু কৌশলের বিরোধিতা করেছিলেন।

বিভক্তির পর রায়–দে অংশ এবং প্রামাণিক অংশ উভয়ই নিজেদের হিন্দুত্ববাদী হিসেবে দাবি করতে থাকে। তবে প্রামাণিক আওয়ামী লীগ বিরোধী বিশেষ করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এবং জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ার চেষ্টা করেন। অন্যদিকে, রায়–দে অংশ ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী কোনো শক্তির সঙ্গে সম্পর্ক রাখা অসম্ভব বলে জানায়। ২০২১ সালে প্রামাণিক ভারতের ভূমিকার সমালোচনা করতে থাকেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের হিন্দুদের ওপর নির্যাতনের বিষয়টি আরএসএস, বিজেপি এবং ভিএইচপির বিভিন্ন শীর্ষ নেতার কাছে তুলে ধরার পরও মোদি সরকার হাসিনার সরকারকে সন্তুষ্ট রাখতে নরম অবস্থান নিয়েছে। অন্য অংশটি আওয়ামী লীগপন্থী এবং ভারতপন্থী অবস্থান বজায় রাখে।

হাসিনা সরকারের পতনের পরের আন্দোলনে রায়–দে অংশের ছাত্র ও যুবকর্মীরা হিন্দু গোষ্ঠীগুলোর নেতৃত্ব দেয়। এতে প্রথমে হিন্দু জাগরণ মঞ্চ এবং পরে সনাতন জাগরণ মঞ্চ গঠিত হয়। বিজেএইচএমের এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে দ্য ডিপ্লোম্যাটকে জানান, ভারতের হিন্দুত্ববাদী প্রতীক যেমন ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান, রাগী হনুমানের ছবি, রাম নবমীর মতো উৎসব এবং ‘লাভ জিহাদ’বিষয়ক প্রচারণা ২০২২ সালে বাংলাদেশেও জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করে।

তিনি বলেন, ‘২০২১ সালের শেষের দিকে হিন্দুদের ওপর হামলা অনেককে ভারতের আরএসএসের চর্চিত কট্টরপন্থী হিন্দুত্ববাদ গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করে। তারা ইসলামি মৌলবাদের বিরুদ্ধে হিন্দু প্রতিরোধের স্লোগান হিসেবে ‘জয় শ্রীরাম’ গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেয়। বিশেষত তরুণেরা ভারতীয় আরএসএস সংশ্লিষ্ট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীদের ঘনিষ্ঠভাবে অনুসরণ করতে শুরু করে।’

বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের উভয় অংশ ২০২২ সালে বৃহৎ আকারে রাম নবমী উদ্‌যাপন করে। ২০২২ সালের জন্মাষ্টমী উৎসবে তাদের স্লোগান ছিল ‘যিনি কৃষ্ণ তিনিই রাম/জয় শ্রীরাম, জয় শ্রীরাম’। এ সময় তারা ‘জয় হিন্দুত্ব’-এর মতো স্লোগানও তোলে। তাদের দাবি, কেবল কৃষ্ণের নামই সব হিন্দুকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারে। একই সঙ্গে তারা বলে, যেহেতু কৃষ্ণ ও রাম অভিন্ন, তাই সবাইকে ‘জয় শ্রীরাম’ আওয়াজ তুলতে হবে।

২০২৩ সালে জাতীয় হিন্দু ছাত্র মহাজোট নিজেদের বাংলাদেশে প্রথম হিন্দুত্ববাদী ছাত্র সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করে। হিন্দু ও হিন্দুত্ব রক্ষায় তারা কাজ করার অঙ্গীকার করে। এক অনুষ্ঠানে তাদের নেতা বলেন, কেবল হিন্দুত্ববাদকে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ এবং ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান দেওয়ার জন্য তাদের ভারতের বিজেপির সঙ্গে সংযুক্ত করা ঠিক নয়। তারা একটি বাংলাদেশি সংগঠন, যার আন্তর্জাতিক শাখাও আছে।

এক বিজেএইচএম নেতা বলেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে ক্ষতির শিকার হওয়ার কারণে অনেকেই কঠোর অবস্থান নিয়েছে। নিহার হালদারের পরিবার মুসলমানদের হাতে তাদের সম্পত্তি হারিয়েছে। তারা সেই সম্পত্তি উদ্ধার করতে পারেনি। প্রশাসন কোনো সাহায্য করেনি। তাকে একজন উগ্র হিন্দু কর্মী হয়ে ওঠার জন্য আমি দোষ দিতে পারি না। তাঁর হতাশা, তাঁকে ভারতীয় রাজনীতিকদের কাছে সাহায্য চাইতে বাধ্য করেছিল।’

বিএইচজেএমের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা রনি রাজবংশী ২০২৩ সালে মহাকাল স্বয়ংসেবক ফাউন্ডেশন (এমএসএফ) প্রতিষ্ঠা করেন। ‘স্বয়ংসেবক’ শব্দটি আবার আরএসএসের সঙ্গে সম্পর্কিত। আরএসএস তাদের সদস্যদের ‘স্বয়ংসেবক’ বলে, যা মূলত স্বেচ্ছাসেবক অর্থে ব্যবহৃত হয়। ভারতে কেবল আরএসএসের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরাই স্বেচ্ছাসেবকদের বোঝাতে এই শব্দ ব্যবহার করেন। বাংলাদেশেও এমএসএফ তাদের স্বেচ্ছাসেবকদের ‘স্বয়ংসেবক’ বলে উল্লেখ করে।

বিএইচজেএমের এক সদস্য নাম প্রকাশ না করা শর্তে বলেন, ‘হিন্দুত্ব একটি হিন্দু ধর্মীয় মতবাদ। এর কোনো সীমানা থাকতে পারে না। আমাদের আরএসএস বা বিজেপির সঙ্গে কোনো সাংগঠনিক যোগসূত্র নেই।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে সেক্যুলার–লিবারেল সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবীরা জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে জামাআতুল মুজাহিদীনের পার্থক্য করেন, প্রথমটিকে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল এবং দ্বিতীয়টিকে সন্ত্রাসী সংগঠন বলে উল্লেখ করেন। কিন্তু তারাই আবার আমাদের আরএসএসের সঙ্গে যুক্ত করার চেষ্টা করছেন।’

লেখক: ভারতের উগ্র বামপন্থা এবং হিন্দু ডানপন্থা নিয়ে দুটি ননফিকশন বইয়ের লেখক। ভারতের রাজনীতি, পরিবেশ, মানবাধিকার এবং সংস্কৃতি নিয়ে লেখালেখি করেন। হিন্দুস্তান টাইমসে কাজ করেছেন। বর্তমানে স্বাধীন সাংবাদিকতা করেন।

দোনেৎস্ক: শান্তি-আলোচনার টেবিলে পুতিন-জেলেনস্কির অন্তিম বাধা, এর গুরুত্ব কতটা

কী হবে, যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ কেড়ে নেওয়া হয়

জাপানের ‘লৌহমানবী’ কি দেশকে চীনের সঙ্গে যুদ্ধের মুখে ঠেলে দিচ্ছেন

পুতিন-মোদির আসন্ন বৈঠকের মূলে কী আছে

শাহেনশাহ-ই-পাকিস্তান: আসিম মুনিরের সর্বেসর্বা হয়ে ওঠার স্বপ্ন কি তাসের ঘর

যে ইমরান খানকে আমি চিনতাম—শশী থারুরের স্মৃতিকথায় আশঙ্কা

যুক্তরাষ্ট্র-ভেনেজুয়েলার উত্তেজনায় রাশিয়া ও চীন কেন নীরব

দুবাইয়ে তেজস দুর্ঘটনা: সামনে আসছে ভারতের যুদ্ধবিমান কর্মসূচির পুরোনো দুর্বলতা

হাসিনার ভাগ্যে কী আছে

ইমরানকে সরানোর খেসারত: পাকিস্তানে সেনাবাহিনীর নীরব অভ্যুত্থান, দেশ শাসনের নয়া মডেল