হোম > বিশ্লেষণ

উজানে বাঁধ নির্মাণের প্রতিযোগিতায় মেতেছে চীন–ভারত, বাংলাদেশের হিস্যা নিয়ে শঙ্কা

তিব্বতের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের সীমান্তে বৃহৎ বাঁধ নির্মাণের কার্যক্রম চালাচ্ছে চীন। দেশটির এই ধরনের কার্যক্রম এবং সীমান্তে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার কৌশলগত প্রতিক্রিয়া হিসেবে অরুণাচল প্রদেশে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রচেষ্টাকে জোরদার করেছে ভারত সরকার। 

হিমালয় থেকে প্রবাহিত নদী মুখে অন্তত ১২টি স্থবির প্রকল্পকে পুনরুজ্জীবিত করার পদক্ষেপ নিয়েছে নরেন্দ্র মোদি সরকার। আপার সুবানসিরি নদীর ওপর ২ হাজার মেগাওয়াটের প্রকল্প ছাড়াও সিওম নদীর ওপর টাটো–টু এবং নায়িং বাঁধ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। 

উল্লেখ করা যেতে পারে ট্যাংগন নদীর ওপর ইটালিন বাঁধের কথাও। আশঙ্কার বিষয় হলো—বাঁধের কবলে পড়া এই সবগুলো নদীই বাংলাদেশের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ব্রহ্মপুত্র নদের শাখা নদী!

শুরুর দিকে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে বেসরকারি সংস্থার ওপরই ভরসা করেছিল সরকার। কিন্তু সেগুলো ধীর গতির পাশাপাশি ব্যয় বৃদ্ধি এবং চীনা তৎপরতার পরিপ্রেক্ষিতে অবশ্যম্ভাবীভাবে ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার কবলে পড়ে। তাই প্রকল্পগুলো দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য ভারত সরকার এখন রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন জলবিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোর কাছে দায়িত্ব দিয়েছে। মূলত চীনের সঙ্গে  সম্ভাব্য ‘জল যুদ্ধ’–এর কথা ভেবেই ভারত সরকারের এমন সিদ্ধান্ত বদল।

একদিকে জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমানো, অন্যদিকে নদীগুলোতে চীনা প্রভাবের উদ্বেগ দূর করা—এই দুটি বিষয় মাথায় রেখেই ভারত কিছুটা তাড়াহুড়া করছে। দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার ও অরুণাচল রাজ্য সরকারের যৌথ প্রচেষ্টায় ওই জলবিদ্যুৎ প্রকল্পগুলোকে এগিয়ে যাচ্ছে। 

ভারত সরকারের এমন উদ্যোগ এরই মধ্যে পরিবেশবাদী, বাঁধ বিরোধী কর্মী এবং স্থানীয় অধিকার কর্মীদের বিরোধিতার মুখোমুখি হয়েছে। 

উৎসমুখ তিব্বত থেকে ব্রহ্মপুত্র নদ বাংলাদেশে পৌঁছানোর আগে ভারতের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এর ফলে ব্রহ্মপুত্রের পানি এই অঞ্চলে একটি আন্তর্দেশীয় রাজনৈতিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। এই পানির ওপর বাংলাদেশ অনেকাংশেই নির্ভরশীল। 

সমালোচকেরা মনে করেন, শুধু কৌশলগত নয় বরং কূটনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের মানসেও জলবিদ্যুৎ প্রকল্পগুলো এগিয়ে নিচ্ছে ভারত। 

হিমালয় থেকে প্রবাহিত নদীগুলোকে কাজে লাগাতে চীন ও ভারতের মধ্যে যে প্রতিযোগিতা চলছে তা নিশ্চিতভাবে ভাটিতে অবস্থান করা বাংলাদেশের ওপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে। যেহেতু চীন–ভারত দুই দেশই জলবিদ্যুৎ প্রকল্পগুলো ত্বরান্বিত করেছে, সেহেতু পানি নিরাপত্তা, পরিবেশগত অবক্ষয় এবং ভূ–রাজনৈতিক উত্তেজনা নিয়ে উদ্বেগও বাড়ছে। আর উজানে থাকা বৃহৎ দুই দেশ নদীর পানির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে প্রতিযোগিতায় মেতে উঠলে বাংলাদেশের মতো ভাটির দেশগুলো অত্যন্ত ঝুঁকির মুখে পড়বে, সেই সঙ্গে দর-কষাকষির সুযোগও হারাবে।

ব্রহ্মপুত্রের তিব্বত অংশে চীনের বড় বাঁধ নির্মাণের ফলে পানির প্রবাহ কমে যাওয়ার পাশাপাশি নদীটির গতিপথ পরিবর্তনের আশঙ্কাও তৈরি হয়েছে। একইভাবে অরুণাচল প্রদেশের মতো রাজ্যে ভারতের পদক্ষেপ এই উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে তুলেছে। 

বাংলাদেশ কৃষি, মৎস্য ও নৌচলাচলের জন্য ব্রহ্মপুত্রের ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। মিঠা পানির অন্যতম উৎস হিসেবে পরিচিত এই নদীর প্রবাহ বা পানির 
গুণমানে তারতম্য ঘটলে দেশের অর্থনীতি এবং জীবিকার ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে। পলি পরিবহন, বন্যার ধরন এবং মিঠা পানির প্রাপ্যতা নিয়েও সংকট তৈরি হবে।

এই পানি প্রবাহের উজানে চীন ও ভারত রয়েছে বলেই পানি বণ্টনের আলোচনায় বাংলাদেশের অবস্থান ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়বে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য টেকসই পানি ব্যবস্থাপনার অনুশীলন, শক্তিশালী দ্বিপক্ষীয় চুক্তি এবং বিরোধ নিরসনের প্রক্রিয়াগুলো এগিয়ে নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

পুতিন জানেন—ইউক্রেনের ‘সময় ফুরিয়ে আসছে’, যুদ্ধ শেষের তাড়া নেই

দোনেৎস্ক: শান্তি-আলোচনার টেবিলে পুতিন-জেলেনস্কির অন্তিম বাধা, এর গুরুত্ব কতটা

কী হবে, যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ কেড়ে নেওয়া হয়

জাপানের ‘লৌহমানবী’ কি দেশকে চীনের সঙ্গে যুদ্ধের মুখে ঠেলে দিচ্ছেন

পুতিন-মোদির আসন্ন বৈঠকের মূলে কী আছে

শাহেনশাহ-ই-পাকিস্তান: আসিম মুনিরের সর্বেসর্বা হয়ে ওঠার স্বপ্ন কি তাসের ঘর

যে ইমরান খানকে আমি চিনতাম—শশী থারুরের স্মৃতিকথায় আশঙ্কা

যুক্তরাষ্ট্র-ভেনেজুয়েলার উত্তেজনায় রাশিয়া ও চীন কেন নীরব

দুবাইয়ে তেজস দুর্ঘটনা: সামনে আসছে ভারতের যুদ্ধবিমান কর্মসূচির পুরোনো দুর্বলতা

হাসিনার ভাগ্যে কী আছে